সকালে আমার চোখ খুললো এই আওয়াজে সরকার মারা গেছেন….. লাশ ফরশের ওপর পড়ে আছে……
আমি গিয়ে দেখলাম। রাতে যেভাবে রেখে এসেছিলাম পীর সেভাবে পড়ে আছে। বুঝলাম আমার হাতেই সে মারা গেছে। তাহলে তো জিনের হাতেই মারা গেছে। কারণ, আমি তার পাঁচ জিনের এক জিন।
ভয়ও পেলাম। ভয়ে ঘাম ছুটে গেলো আমার। তামীমার তো কাঁপুনি এসে গেলো। তখন আমাদের পালানোর পথও বন্ধ। কারণ, এ অবস্থায় পালালে ধরা পড়লে ঘাতক হিসেবে প্রথম সন্দেহভাজন আমরা হতাম। এর মধ্যে পীরের ছেলে রটিয়ে দিলো, এটা জিনদের কাণ্ড।…….
তুমি হয়তো আশ্চর্য হচ্ছে, পীরের ছেলে কেন এমন করলো?
বাপ বেটার মধ্যে তো আগ থেকেই শত্রুতা ছিলো। তারপর বাপের গদির ওপরও ছেলের লোভ কম ছিলো না। সাধারণ মুরিদরা তো এটা জানতো না। পীরজাদা যেদিকেই যেতো তার সামনে সিজদায় পড়ে যেতো লোকে…..
এটা শুধু জানতাম আমরা পাঁচ জিনের দল। পীরজাদা বাপের লাশ দেখে খুশিই হলো। সে এ থেকে ফায়দা উঠালো যে, সাধারণ মানুষের মনে এই ভয় ঢুকিয়ে দিলো, এই গদির দায়িত্বে বড় বড় ভয়ংকর জিনের দল আছে। লোকদেরকে এটাও বিশ্বাস করাতে পেরেছিলো যে, কোন পীরকে কোন মানুষ কখনো হত্যা করতে পারবে না।
হয় স্বাভাবিক মৃত্যু, না হয় জিনরা হত্যা করবে। পুলিশ অফিসারকে থলে ভরে ঘুষ দেয় সে। হত্যার ঘটনা থানার কাগজেই উঠতে দেয়নি।
তারপর ঘোষণা করে দেয়, তার বাপের সব জিন তার কজায় চলে এসেছে এবং তার বাপের ঘাতক জিনদেরকে চরম শাস্তি দিয়ে মারবে…
এর ফলে সাধারণ লোকেরা পীরজাদাকে এমন ভক্তি শ্রদ্ধা শুরু করলো এবং তার পায়ে এত ন্যরানা দিয়ে গেলো যে, তার বাপকেও এত নজরানী দেয়নি কেউ। তবে ভেতরে ভেতরে সে আমাদেরকে খুঁজে দেখতে বলতো, আমার আব্বাজানের আসল ঘাতক কে? বের করতে পারলে পুরস্কার দেয়া হবে। তারপর তো আমি চলেই এলাম।
দেশে আপনি কবে এসেছিলেন?- আমি জিজ্ঞেস করলাম চাচা মাজেদকে।
সেটা আরেক কাহিনী- তিনি হেসে বললেন- সেটা আরেক দিন এসে শুনে যেয়ো। তবে খোদা আমাকে পুরোপুরি মাফ করেন নি। তিনটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়েছিল আমার। তিন বছরের বেশি কেউ বাঁচেনি। যতটুকু বয়স্ক দেখা যায়, আমি আসলে এত বয়স্ক নই। সন্তানের শোক আমাদের বয়স অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখো আমার স্ত্রী তামীমাকে।
আমি তার প্রৌঢ়া স্ত্রীর দিকে তাকালাম। এ বয়সেও তার চোখ মুখ অপরূপ। দেহে সতেজ এক রূপের ছোঁয়া লেগে আছে বড় সজীব হয়ে।