আমি আর বাকি কথা লুকানোটা ভালো মনে করলাম না। তাকে পুরো ঘটনা শুনিয়ে দিলাম। তামীমা ওদেরকে যা শোনায়নি তাও শুনিয়ে দিলাম। বাদ পড়লো না পীরের কথাও। পীরের আসল রূপ, তার কারসাজি তাও বললাম। পীরের ছোট স্ত্রীর সঙ্গে তার ছেলের অবৈধ সম্পর্ক এবং এ নিয়ে পরবর্তীতে পীরকে হত্যার কাহিনীও শোনালাম।
এও শোনালাম, হত্যার পর পীরজাদা পুলিশের সঙ্গে মিলে তার বাপের হত্যার আসল কারণ লুকিয়েছিলো। তারপর সর্বত্র ছড়িয়ে দেয় যে, তাকে জিনেরা হত্যা করেছে। অথচ পীরের কজায় কোন জিনটিন ছিলো না। জিন থাকলে ছিলাম আমরা পাঁচ গুনাহগার।
আমি অবশ্যই হত্যাকারী কে- তা জানি। কিন্তু বাংলোর মালিককে সেটা বলিনি।
***
চাচা মাজেদকে আমি এখানে থামিয়ে দিলাম। বললাম- আপনি না বললেও এটা তো পরিষ্কার যে, পীরের ঘাতক তার ছেলে।
চাচা মাজেদ শব্দ করে হেসে উঠলো। এবং বললেন- হাজী সাহেব (বাংলোর মালিক)-ও একথা বলেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, পীরের ছোট স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য ও গদিনেসীন হওয়ার লোভে পীরজাদাই তাকে হত্যা করেছে। পীরজাদা ইনস্পেক্টরকে ঘুষ দিয়ে থানায় এটা প্রমাণ করেছে যে, পীরকে হত্যা করেছে জিনেরা।
আমি হাজী সাহেবকে বলেছিলাম, আমারও তাই মনে হয়। অথচ ঘাতক পীরজাদা তো ছিলোই না, কোন জিনও ঘাতক ছিলো না।
তাহলে কে ছিলো হত্যাকারী?- হয়রান হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
আমি ছাড়া আর কে হতে পারে? পীরকে আমি নিজ হাতে হত্যা করেছি চাচা মাজেদ বললেন নির্বিকার কণ্ঠে।
আমি চমকে উঠলাম। অবিশ্বাস্য চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
চাচা মাজেদের বুক থেকে যেন পাষাণভার নেমে গেলো। তিনি বলে উঠলেন
আজ প্রথমবারের মতো এই রহস্যভার আমার বুক থেকে বেরিয়ে এলো। আল্লাহর পর এতদিন আমার স্ত্রীই একথা জানতো। আজ অতীত ঘাটতে ঘাটতে স্মৃতির তরী এমনভাবে দুলে উঠলো যে, গোপনীয়তার অতলান্ত থেকে এই রহস্য বেরিয়ে এলো। অর্ধ শতাব্দী আগের এক পবিত্র নিষ্পাপ হত্যা এতদিন যেন ভেতরে হৃদয়ের কাঁটা হয়ে ছিলো। আজ প্রথম সেই কাঁটা আমি টেনে বের করলাম।
আচ্ছা! কতল করেছিলেন কিভাবে?
তুমি তো দেখি কাহিনীর মাঝখান থেকে ভুলে গেছো- তিনি বললেন মনে করে দেখো, তামীমা আমার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে এবং যখন পীরের কাছে গিয়ে আমি আশ্রয় চাইলাম পীর আমাকে ভয় দেখালো, ধরা পড়লে এই এই অসুবিধা হবে। ওকে ফিরিয়ে দিয়ে এসো। আমি উল্টো হুমকি দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলাম।
যা হোক, পরে পীর তামীমাকে দেখে মনে মনে উন্মাদ হয়ে উঠলো। ভালো এক শিকার পাওয়া গেছে। পীর বললো, আমাদেরকে তার বুকে আশ্রয় দেবে……..
নিজেই সে আমাদের বিয়ে পরিয়ে দিলো। তখনই পীরের নিয়ত আঁচ করতে পারলাম। তামীমাকে এখানে এনেই আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। ওকে নিয়ে কোথায় যাবো? পাঁচ ছয় দিন এভাবেই কেটে গেলো।
সপ্তম দিনের রাতে পীর আমাকে একটা কাজে বাইরে পাঠালো। কাজটা এমন ছিলো যে, সারা রাত আমাকে বাইরে কাটাতে হবে। আমি চলে গেলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর খচ করে মনে একটা কথা জাগলো যে, পীর তো এ কাজে আমাকে দিনেও পাঠাতে পারতো। রাতে কেন পাঠালো?
আমার সন্দেহ হলো, যে কোন কারণেই হোক, পীর আমাকে অনুপস্থিতে রাখতে চাইছে। আমি সেখান থেকেই দৌড় শুরু করলাম…….
আমি হাঁপাতে হাঁপাতে আমাদের কামরায় গেলাম। কামরার দরজা নক করে ভোলা পেলাম। তামীমা কামরায় নেই। সন্দেহ আরো দৃঢ় হয়ে গেলো। তামীমাকে খুঁজতে গিয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলাম।
তখনই পীরের জিন হাজির করা কামরা থেকে নারী কণ্ঠ পেলাম। দরজা ধাক্কা দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে দরজার আড় খুলে গেলো। কামরায় একটি ছোট ল্যম্প জ্বলছিলো।
পীর তামীমাকে জাপ্টে ধরে রেখেছিলো আর মুখে তার নাপাক মুখ ঘষতে চেষ্টা করছিলো। তামীমা তাকে গাল দিচ্ছিলো আর তার বন্ধমুক্ত হতে চেষ্টা করছিলো।
পরে তামীমা বলে ছিলো, পীর তাকে কোন এক বাহানা দিয়ে সে কামরায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলো……..
পীরের পিরাকী যে কোন পর্যন্ত তা তো আমি জানতামই। এ দৃশ্য যেন আমার ভেতর অগ্নিয়গিরি ফাটিয়ে দিলো। ক্রোধ আমাকে করে দিলো অন্ধ। তার ওপর আমি হামলে পড়লাম। পেছন থেকে পীরের ঘাড় দুহাতে চেপে ধরলাম। ঘাড়ে এত জোরে কোপ বসালাম যে, পীরের বাহুবন্ধন থেকে তামীমা সহজেই বেরিয়ে গেলো। আমি ঘাড় ছাড়লাম না।
আমার দেহে তখন পাহাড় টলিয়ে দেয়ার মতো শক্তি। আমার হাতের চাপ আরো বেড়ে গেলো। পীর একবার ছটফট করে উঠলো। তারপর নাক দিয়ে ঠুস করে বাতাস ছেড়ে দিলো। তখন তার দেহ কেমন ঢিলে হয়ে গেলো। যখন ছেড়ে দিলাম তখন পীর পড়ে গেলো,
***
তখনই বেটাকে আযরাঈল (আ) এসে জাহান্নামে নিয়ে গেছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি। তামীমাকে নিয়ে আমাদের কামরায় চলে এলাম। তামীমা খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলো। সে বলতে লাগলো, পীর তো এর প্রতিশোধ নেবে। তার কজায় জিন আছে।
আমি তাকে বললাম, সে পীরও নয় এবং তার কাছে কোন জিনটিনও নেই। তোমার সঙ্গে যা করতে চেয়েছিলো সে সেটাই। অর্থাৎ বড় লম্পট ও বদমায়েশ। সকালে তার সঙ্গে কথা বলেই এখান থেকে বের হবো। দৈহিক শক্তি, যৌবনের উত্তাপ আর প্রচণ্ড সাহস আমাকে বেপোরোয়া করে তুললো। রাতটা সেখানেই কাটিয়ে দিলাম।