পরদিনই ঐ মহিলার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিলো। পীরও তার কাছ থেকে মোটা টাকার বখশিস আদায় করে নিলেন ……
পীরের এক ছেলে ছিলো। লোকেরা বাপের মতোই ছেলেকে মান্য করতো। কিন্তু বাপ বেটার মধ্যে সম্পর্ক ছিলো খুব খারাপ। এর কারণ হলো, বিশ একুশ বছরের পীরের এক বউ ছিলো। পীরের ছেলের সমবয়সী।
পীরের নিজের ছেলে ও স্ত্রীর ওপর সন্দেহ ছিলো। সন্দেহ বেঠিকও ছিলো না। কিন্তু বাপ তো এসব নিয়ে উচ্চ বাচ্চও করতে পারতো না। আর তারাও জানতো, পীরের পীরাকীর দূর কতদুর।
একদিন পীরের কয়েকজন চ্যালা এক হিন্দু যুবতাঁকে উঠিয়ে আনে এবং রাতে রাতেই পীর তার কাজ শেষ করে মুরিদদের কাছে ফিরিয়ে দেয়। মুরিদরা তাকে যেখান থেকে উঠিয়ে এনেছিলো সেখানে রেখে আসে। এ ঘটনা ছেলে ও পীরের যুবতী স্ত্রী জানতো। ………
আমরা গুপ্তচরের মতো মুরিদদের ঘরের নানান টুকিটাকি ব্যপারও জেনে এসে পীরকে জানাতাম। আমাদের বাতলানো সংবাদ অনুযায়ী পীর তাদেরকে গায়েবের কথা জানিয়ে দিতে। মুরিদরা হয়রান হয়ে যেতো, পীরজি তাদের ঘরের গোপন থেকে গোপন কথাও জেনে ফেলেছেন। ……
পীর আমাদেরকে বিনিময়ে অনেক কিছু দিতো। লোকেরা তার সামনে সিজদা করতো। সন্তানহীন মহিলারা তার কাছে সন্তান নিতে আসতো। আবার পীরের বাপের মাজারে বড় বড় সিন্নী দিতো। সিন্নীর পয়সা চলে যেতো পীরের পকেটে। কিন্তু লোকেরা জানতো না আসল পীর ছিলাম আমার পাঁচজন…….
ওহ! তামীমার কথায় আসি। এর মদ্যে তামীমা গম ক্ষেতের পাশে আমার সঙ্গে আরো কয়েখবার দেখা করে। একবার সরাসরি বলে দেয়, সে আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু তামীমা বিবাহিতা ছিলো। স্বামীর ঘরে পাঁচ মাসের বেশি থাকতে পারেনি।
জাতপাতের ছোট খাট বিষয় নিয়ে বিরোধ শুরু হয় ছেলে ও মেয়ে পক্ষের মধ্যে। তামীমার মা বাবাও নিজেদের উঁচু নাক নিয়ে বসে থাকে। ছেলের মা বাবাও বলে দেয়, মেয়ের মান রাখতে চাইলে মেয়েকে স্বামীর বাড়ি পাঠিয়ে দাও। আর নিজেদের মান নিয়ে পড়ে থাকতে চাইলে মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখো…….
কিন্তু তামীমা বাপের বাড়িতে বসে থাকতে রাজী নয়। সে স্বামীর ঘরে যেতে চাইতো যে কোন বিনিময়ে। কিন্তু ওর মা বাবা তা হতে দেবে না। একবার সে খুব জিদ করলো। তখন মা বাবা দুজনে মিলে ওকে মারপিট করে। তারপর থেকে তামীমা চুপচাপ হয়ে যায়।
তবে একবার লুকিয়ে স্বামীকে চিঠি লিখে যে, তোমার ভেতর যদি পৌরষত্ব থাকে আমাকে এসে নিয়ে যাও। স্বামী জবাব দেয়, আমি এত আত্মসম্মানহীন পুরুষ নই। তোমার বাপকে বলল, আমাদের বাড়িতে এসে তোমাকে রেখে যেতে। মীমাংসার সম্ভবনা ছিলো না একেবারেই……..
মা বাবার চাপে স্বামী তামীমাকে তালাক দেয়ার হুমকি দেয়।
তামীমার প্রস্তাব নিয়ে দু দণ্ড ভাববার মতো স্থিরতা ছিলো না আমার। আমি সঙ্গে সঙ্গেই ওর ডাকে সাড়া দিলাম। তারপর থেকে তার একই বুলি, চলো কোথাও পালিয়ে যাই। সে তত উঁচু জাতের আমীর ঘরনার মেয়ে। আমি ওকে নিয়ে যাবো কোথায়?
একদিন বললো, আমি অনেক অলংকার ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে আসবো। তখন আমরা পালাবো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম সেদিন। আরেকদিন মাজারে এসে বললো
আমি চলে এসেছি আর ফিরে যাবো না।
সে তার বাড়ি থেকে মাজারে সালাম করার কথা বলে এসেছে। আমি ওকে বাড়ি ফিরে যেতে বললাম। কিন্তু ও বেকে বসলো। সে জানালো, আজ ওর মা বাবা ওকে খুব মেরেছে। ওর স্বামীর কথা বলতেই ওরা ওকে এভাবে মেরেছে…
বলো, এমন অত্যাচার আর কতদিন সইবো?- সে বললো।
ঘর থেকে সে নগদ টাকা পয়সা আর স্বর্ণালংকারও নিয়ে এসেছে। আমার আঁতে ঘা দিয়ে বললো,
তোমাকে আমি কিন্তু সাহসী পুরুষ বলে জানি। মেয়েদের মতো ভীতু হয়ে পিঠ দেখাবে না
আমি ওকে বললাম, দেখো আমি কামিন জাতের ছেলে, আর তুমি অনেক উঁচু জাতের মেয়ে, তুমি কি আমার সাথে থাকতে পারবে?
সে বললো- তোমার চেয়ে উঁচু কেউ নেই
সে আরো এমন কিছু কথা বললো, আমার পৌরুষ জেগে উঠলো……..
***
ওকে বললাম, তুমি মাজারে যাও। সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমি পীরের কাছে গিয়ে সারা বৃত্তান্ত শোনালাম। বললাম, তামীমাকে কোথাও লুকিয়ে রাখতে হবে। পীর যখন শুনলো, মেয়ে অমুক ঘরের। ঘাবড়ে গেলো পীর। বলতে লাগলো
তুমি তো মিয়া কামিন জাতের ছেলে। আর ও বড় চৌধুরীর মেয়ে। যদি ধরা পড়ো, ওরা তোমাকে কেটে কুকুর দিয়ে গোশত খাওয়াবে। ওকে ফিরিয়ে দাও।
আমি বললাম, তিন চারদিন তামীমাকে এখানে রাখবো এবং এ কয়দিনে ভেবে বের করবো কি করা যায়। জিন ভূতের নাটাই খেলবো, না অন্য কোথাও চলে যাবো।
পীর আমাকে উপদেশ দিলো,
কারো মেয়েকে এভাবে লুকিয়ে রাখা খুব খারাপ কাজ। ফিরিয়ে দিয়ে এসো। পীরকে আমি বললাম
আপনার জন্য আমি এর চেয়ে খারাপ কাজ করছি। এই মেয়েকে কোন মূল্যেই হাতছাড়া করবো না। বিয়ে করে ওকে আমার জন্য বৈধ করে নেবো।
পীরের শাহরগ তো ছিলো আমাদেরই হাতে। পীর মেনে নিলো আমার কথা। বললো, যাও মেয়েকে নিয়ে এসো……
মাজারে গিয়ে তামীমাকে বললাম, আমার পেছন পেছন এসো। পীরের কাছে যখন ও পৌঁছলো, ওকে দেখে পীরের চোখ ট্যারা হয়ে গেলো। যেন এ ধরনের বস্তু সে আর কোন দিন দেখেনি।
পীরের কুৎসিত আবেগ উছলে উঠলো। বলে উঠলো
তোমরা আমার কাছে আশ্রয় চেয়েছে। তোমাদের দুজনকে আমি আমার বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখবো। এবং নিজ হাতে তোমাদের বিয়ে পড়াবো….