ঘটনা পুরোটা খুলে বলতে বললাম।
জনাব!- আদালত বলতে লাগলো- সে অপরাধী হিসেবে ধরা পড়ার পর যখন পালিয়ে গেলো এর কিছু দিন পরই আমার স্ত্রীর মধ্যে মা হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলো। তিন মাস অপেক্ষার পর নিশ্চিত হলাম, আমার স্ত্রীর সত্যি মা হতে যাচ্ছে।
যদি এই লোক সত্য পীর হতো তাহলে বুঝতাম এটা তার দুআর বরকত, কিন্তু এতো বড় বাটপার। আমার সন্তান জন্ম দেয়ার মতো ক্ষমতা নেই। এই গর্ভ ঐ থোকাবাজের। স্ত্রীকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়ে দিলাম তালাকনামাও। তারা ঝামেলা করলেও টিকতে পারলো না………
সেই বাচ্চার বয়স এখন দুই বছর। বাচ্চা হওয়ার পর তাদের গ্রামের কোন নারী পুরুষ তার দিকে মুখ ফেরাতেও ঘৃণাবোধ করতো। ওর মা বাবা ভাই বোনও তাকে গলা ধাক্কা দিতো। সবাই বলতো, হারাম সন্তানের মা হয়েছে। বাচ্চার বয়স ছয় মাস হওয়ার পর সে বাচ্চা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেলো। দেড় দুই মাস পর জানা গেলো, সে ঐ বদ পীরের কাছে আছে। তাকে বিয়ে করে ফেলেছে……..
আজ আমি কোন এক কাজে শহরে এসে একে পেয়ে গেলাম। জেল খেটে এসেছে জানতাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বদ মায়েশির ফল তো ভোগ করে এসেছো তাই না? এ বদকারনি কি এখন তোমার কাছে? উত্তরে সে এমন কথা বললো, আমার আত্মমর্যাদা বোধে বড় আঘাত লাগলো। আমি উত্তেজিত না হয়ে পারলাম না
তোমার মধ্যে আবার আত্ম মর্যাদা আর উত্তেজনাও আছে?- আমার রক্ত টগবগ করে উঠলো- ছিঃ। গুপ্তধনের লোভে নিজে বউকে ভণ্ড পীরের কাছে সপে দিয়েছে। আর এখন অপবাদ দিচ্ছো, সে হারাম বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। আমার তো সন্দেহ হয় তুমিও এমনই কোন পীরের ছেলে
আমি আরো আশ্রাব্য কিছু বলে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার পর বললাম
তোমাকে ৩০৭ ধারা মোতাবেক গ্রেফতার করে সাত বছরের জেল দেবো।
এ কথা বলে তাকে হাজতে ভরে ফেললাম। অবশ্য এর উদ্দেশ্য ছিলো তাকে ভয় দেখানো। তারপর আদালতের গ্রামে খবর পাঠিয়ে দিলাম, কেউ এসে তাদের ভালো হয়ে চলার জামানত দিয়ে আদালতকে ছুটিয়ে নিয়ে যাও।
***
এরপর সারমুদের কাছে জানতে চাইলাম এসব কি হচ্ছে? তার কাহিনী খুব দীর্ঘ। তবে সংক্ষেপে একরম :
সারমুদের জেল ছিলো দুই বছরের। কয়েদখানায় তার সদাচরণের জন্য চার মাসের শাস্তি মাফ করে দেয়া হয়। তাজ তার মন থেকে মুহূর্তের জন্যও বিস্মৃত হয়নি। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তাজের জন্য সে ব্যকুল হয়ে উঠলো। কিন্তু কিভাবে সম্ভব তাজকে এক নজর দেখা।
এক মাস পর মারদান শাহের এক চ্যলার সঙ্গে তার দেখা হলো। সে জানালো, তোমার প্রতারণা তাকে তালাক দিয়ে দেয়। আর তাজের জীবন হয়ে গেছে অচ্ছতের জীবন।
তাজের এ অবস্থার কথা শুনে তো সারমুদের পাগল হওয়ার অবস্থা। সে মারদান শাহের কাছে গিয়ে হাজির হলো। তাকে বললো, সে তাজের খবরাখবর জেনে তাজ এর কাছে একটা প্রস্তাব পাঠাতে চায়।
মারদান শাহের হাত অনেক লম্বা ছিলো। জেল খেটে আসার পরও তার তাবিজের কদর একটুও কমেনি। এক মহিলাকে তাজের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য ঠিক করলো সে।
পরদিনই তাজ এর খবর জানা গেলো। বাচ্চা নিয়ে তাজ মা বাবার সঙ্গেই থাকে।
কিন্তু সে ঘরে নওকরদেরও ইযযত আছে। তাজ-এর কোন ইযযত নেই। ওর বাচ্চাকে নানা নানী ছুঁয়েও দেখে না। তাজ-এর মতো এমন সুন্দরী মেয়েকে যে কেউ বিনা শর্তে বিয়ে করতে রাজি হবে। কিন্তু সেখানকার মেথরও তাজ-এর নাম শুনলে নাক ছিটকায়।
তোমার ঝুলি পয়সায় ভরে দিবো- সারমুদ ঐ মহিলাকে বললো- কাল মাঝ রাতে যেন তাজ তাদের গ্রামের পশ্চিম দিকে চলে আসে। তার বাচ্চাটিকেও সাবধানে সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। আমি সেখানে থাকবো। তাকে বলবে, সারমুদ এখন ভদ্র জীবন কাটাতে চায়। কিন্তু তাজ যদি তার কাছে না আসে তাহলে সে গুণ্ডা বদমায়েশেরও অধম হয়ে যাবে।
খবর পেয়ে তাজ সারমুদের প্রস্তাব মনে প্রানে গ্রহণ করলো। মহিলার কাছে খবর পাঠিয়ে দিলো, সে সঠিক সময়ে বেরিয়ে আসবে।
সারমুদ মারদান শাহের একটি ঘোড়া নিয়ে তাজদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটি ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে রাইলো।
তাজ আসতেই সারমুদ বাচ্চা সমেত তাজকে জড়িয়ে ধরলো। তাজও গাঢ়ভাবে সাড়া দিলো। দুজনের চোখের মিলনের অশ্রুতে ভরে গেলো। সারমুদ তাজকে ঘোড়ায় উঠালো। বাচ্চা তাজ-এর কোলেই ছিলো।
এখন আর তোমাকে ধোকা দেবো না- সারমুদ আশ্বাসের গলায় বললো।
এর চেয়ে বড় থোকা আর কি হতে পারে?- তাজ ফুঁপিয়ে উঠলো- যে জাহান্নামে গত দুবছর জ্বলে পুড়ে মরেছি এর চেয়ে বড় ধোকা আর কি হতে পারে?
সারমুদ তাকে শান্ত করলো। ফোলা ফোলা চোখের তাজকে সারমুদের মনে হলো, সদ্য কলি ফোঁটা বিশ বছরের অপসরা যুবতী। শত ঝড়ঝাঁপটা তাকে মমিন করতে পারেনি। ধুয়ে মুছে তার রূপকে আরো বিকাশিত করেছে।
সারমুদ নিজের বাড়ির দিকে ঘোড়া ছুটালো। ঘোড়া যেন পংখিরাজের মতো উড়ে চললো।
পথে তাজ ওকে বললো, মা হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেতেই তার স্বামী আদালত তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। অকথ্য নির্যাতন শুরু করে। তারপর তাকে তালাক দিয়ে দেয়।
যে গ্রামে যে বাড়িতে আমার দাপট চলতো- তাজ বললো- সে গ্রামের দাসী বাদীর শ্রেনীর মেয়েরাও আমার সঙ্গে কথা বলতো না।
ফজরের আযানের পূর্বেই ওরা পৌঁছে গেলো সারমুদদের বাড়িতে। ফজরের নামাযের পর পাশের মসজিদের ইমাম সাহেবকে বাড়িতে নিয়ে এলো সারমুদ। ইমাম সাহেব তাজ ও সারমুদের বিয়ে পরিয়ে দিলেন।