আমি অপরাগ ছিলাম। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ওর সঙ্গে যাওয়াটাই স্থির করলাম। আল্লাহর নাম জপতে লাগলাম। গ্রাম থেকে দেড় দুই ক্রোশ দূরে রেল স্টেশন। এক লোক ঘোড়ার গাড়িতে করে আমাদেরকে রেল স্টেশনে পৌঁছে দিলো …….
পরদিন আমরা জবলপুর জাট রেজিমেন্টের ছাউনিতে পৌঁছলাম। জিজ্ঞেস করে করে এখানে পৌঁছলাম। তারপর আমার ভাইকেও খুঁজে পাওয়া গেলো। ভাই তো আমাকে দেখে দারুন হয়রান গেলেন।
দুর্গা ভাইকে বললো, সব কথা আপনার বোনের কাছে শুনুন। আমি সংক্ষেপে সব ভাইকে শোনালাম। ভাই বললেন, তোমরা বসো এখানে, আমি আসছি। অনেক্ষণ পর আমার ভাই এসে আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। ভাইয়ের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। তিনি এখানকার সুবেদার। আমাকে সুবেদার ঘরে রেখে গেলেন। দুর্গাকে অন্য কোয়ার্টারে রাখা হলো………
ভাই প্রায়ই এসে আমাকে দেখে যেতেন। বলতেন, তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপরস্থ কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত দিয়েছেন। পুলিশ হয়েতো একদিন এসে তোমাদেরকে নিয়ে যাবে। না হয় আমি ছুটির পর তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।
একদিন এক মহিলা সুবেদারের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এলো। মহিলাকে আমি চিনে ফেললাম। তিনি আমাদের গ্রামের। তার স্বামী এখানকার হাবিলদার।
হাবিলদারের স্ত্রীকে তুমি কি বলেছিলে?
বলেছি, আমি ভাইকে দেখতে এসেছি। মহিলা দুর্গাকে চিনতো। জিজ্ঞেস করতে লাগলো, এই বদমায়েশ এখানে কি করে এলো?
আমি তাকে বললাম, ও আমার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ও আমারও ধর্ম ভাই। আসলে আমার অই নিজেই আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলো, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে, তুমি তোমার ভাইকে দেখতে এসেছে……. তারপর তো আপনি এলেন…
***
দুলারীকে অন্য কামরায় পাঠিয়ে দুর্গাকে ডেকে আনলাম।
দেখো দুর্গা!–আমি দুর্গাকে বললাম- এখন তুমি শুধু পুলিশের হাতেই নও আর্মির হাতেও বন্দি। আমি উপযুক্ত প্রমাণ নিয়েই এ পর্যন্ত এসেছি। দুলারী তার ভেতরের সব কথা আমার কাছে খুলে বলেছে। কিছুই সে লুকোয়নি। তোমার বয়ান যদি সামান্যতমও এর বিপরীত হয়, দেখবে তোমার কি অবস্থা হয়। এখন বলো আসলে কি হয়েছিল?
হুজুর!- দুর্গা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো- লোকে আমাকে বলে দুর্গা বদমায়েশ। বদমায়েশকে মানুষ বদমায়েশই তো বলবে। বদমায়েশ ভালো কিছু করলেও লোকে বলে এর মধ্যেও বদমায়েশি কিছু আছে। আমি একটা ভালো কাজ করেছি তবে বদমায়েশি কায়দায় করেছি। আপনি একে নিশ্চয় পুলিশি ও আইনের দৃষ্টিতে দেখবেন। কিন্তু আপনি কি এটা মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে পারবেন না?
আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিচ্ছো দুর্গা! তুমি যদি ভালো কাজ করে থাকো এর প্রতিদান তোমাকে আমি দেবো। কিন্তু তুমিও ওয়াদা করো আমার কাছে কিছুই লুকাবে না।
হুজুর এর আগে বলুন ঠাকুরের এখন কি অবস্থা?
ওর তো ছাইও এখন আর অবশিষ্ট নেই। মারা গেছে।
দুর্গার সঙ্গে এ ব্যপারে অনেক কথা হলো। আমি ওর সঙ্গে বন্ধুর মতো ব্যবহার করে গেলাম। অবশেষে সে রহস্যের পর্দা উঠত শুরু করলো। ঠাকুরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এই বদমায়েশি সূত্রেই দুর্গা বলতে লাগলো–
তিনি ছিলেন আমার মুনিব। আমার কারণে তিনি নিরাপদ থাকতেন। আর আমার টাকা পয়সা, আরাম আয়েশের সব প্রয়োজন তিনি পূর্ণ করতেন।……..
একদিন ঠাকুর আমাকে একটা গোপন কথা জানালেন। আমাদের গ্রাম থেকে দুই আড়াই মাইল দুরে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি আছে। ওখানে সাধু সন্নাসীরা থাকে। ঠাকুরকে কেউ বলেছে, সেখানে এক সন্নাসী আছে। যার হাতে গায়েবী ইলম আছে। কিন্তু সন্নাসী কাউকে সেটা বলে না। তবে কারো প্রতি সন্নাসী খুশি হয়ে গেলে তার বাড়ি টাকা পয়সা ও সোনা রূপায় ভরে যায়।
ঠাকুর তার কাছে যাওয়া আসা শুরু করলেন। তাকে শরাবের কয়েকটা বোতল দিলেণ। টাকা পয়সাও দিলেন অনেক।
আমাকে ঠাকুর বলতেন, সন্নাসীকে তিনি হাত করে নিয়েছেন। তার হাতে সত্যিই গায়েবী কিছু আছে….
একদিন ঠাকুরকে বেশ আনন্দিত মনে হলো। আমাকে ঘর থেকে ডাকিয়ে নিয়ে বললেন, দুর্গা দাস! আমার কাজ আর মুসিল হবে না। যদি একটা কাজ করতে পারো, তোমার ঘর দৌলতে ভরে যাবে।
আমি জানতে চাইলাম কি কাজ?
ঠাকুর বললেন- ঐ সন্নাসী বলেছেন, খেয়াল রাখবে, গ্রামের কোন কুমারী মেয়ে যদি সোমবার রাত শেষে মঙ্গলবার মারা যায় তাহেল তার মাথার খুপড়ির হাড় যেটা চার ইঞ্চি থেকে কম হতে পারবে না- সেটা জোগাড় করে আনতে হবে।
সন্নাসী বলেছে, সে হাড়টি আমার কাছে আনতে হবে। আমি এর ওপর আমল করবো এবং তোমাকে দিয়ে দেবো। এই হাড় বিশেষ কোন এক সময় যদি লোহার টুকরার ওপর ঘুরানো হয় লোহ সোনা হয়ে যাবে…..
ঐ হাড় বিশেষ এক সময়ে তোমার ঘরের এক কোনায় রেখে দেবে। দেখবে, অগনিত পয়সা তোমার কাছে আসছে।
ঠাকুর আমাকে বললেন, আমি সারা গায়ের মেয়েদের ব্যপারে খোঁজ খবর নিয়েছি। একটি মেয়ে আমার চোখে পড়েছে। যার বয়স ষোল বছরের চেয়ে কম ও সতের বছরের বেশি হবে না। আমার বিশ্বাস সে ভদ্র মেয়ে এবং কুমারী……..
ঠাকুর দুলারীর কথা বললেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে, সে মেয়ে এই বয়সেই মঙ্গলবার মরে যাবে।
তিনি বললেন- এ কাজটাই তো করতে হবে তোমাকে। তুমি সুযোগ বুঝে ওকে উঠিয়ে আনন। তার মৃত্যু হবে এমনভাবে যে রক্তও বের হবে না এবং সেদিন হবে মঙ্গলবার।