আযাদ কাশ্মীরের জোয়ানদের বিজয় যখন সুনিশ্চিত হলো কর্নেল কিয়ানী তখন চিন্নাই রেঞ্জ নামক পাহাড়ে মোর্চাবদ্ধ। তার সঙ্গে ব্যাটালিয়ান কমান্ডার মেজর গোলাম আহমদ। এখান থেকেই তারা পুরো যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। অবশেষে তিনি যখন শুনলেন তার জোয়ানদের বিজয়ের সুনিশ্চিত খবর তখন তিনি তার মোচা থেকে বেরিয়ে এলেন। তার দু পাশে তখন মেজর গোলাম আহমদ। হাবিলদার গুলজার। ল্যান্স নায়ক কবির ও ল্যান্স নায়ক যাকির হুসাইন।
আচমকা মর্টার গানের একটি গোলা তাদের মাঝখানে এসে বিস্ফারিত হলো। সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হয়ে গেলেন কর্নেল কিয়ানী শহীদ, মেজর গোলাম আহমদ শহীদ ও ল্যান্স নায়ক কবির শহীদ। কর্নেল কিয়ানীর মাথায় তখন কাফনের কাপড়টি বাঁধা। তার মুখখানি কেমন সজীব-স্নিগ্ধ। এভাবে শহীদ হওয়ার জন্যই মনে হয় তিনি মোর্চা ছেড়ে বেরিয়া এসেছিলেন, যার সুসংবাদ তিনি পেয়েছিলেন এ লড়াইয়ের আরো অনেক আগে।
কর্নেল হক নেওয়াজ কিয়ানী শহীদকে আরো একবার (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। কারণ কর্নেল কিয়ানী স্বাধীনতার সেই মহান সৌধ যা কখনো পরাজিত হয়নি। যার অমরত্ব আরশ পর্যন্ত উচ্চকিত হয়েছে।
তার শহীদ হওয়া ও এ সম্পর্কিত আভাস-ঈংগিত পূর্ব থেকেই পাওয়ার ব্যাপারটি পুরো লিপা উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়েছিলো। এ লড়াইয়ের প্রায় মাস তিনেক পর আগষ্টের শুরুতে এক বিকালে দেখা গেলো, ভারতীয় শিখ রেজিমেন্টের একটি বড় দল নিরস্ত্র হয়ে হাতে সাদা পতাকা নিয়ে আযাদ কাশ্মীরের ক্যাম্পের দিকে আসছে।
ক্যাম্পের কমান্ডার তখন মেজর জামশেদ গুলজার। শিখ কমান্ডার অমরনাথ শিখ তার সঙ্গে নিচু স্বরে কিছুক্ষণ আলাপ করলো। যার সারমর্ম হলো, সে লড়াইয়ে আযাদ কাশ্মীর তথা মুসলমানদের এমন অসম্ভব বিজয় তাদের অন্তরের চোখ খুলে দিয়েছে। এবং কর্নেল কিয়ানীর এভাবে শহীদ হওয়ার ঘটনা তাদের ভেতর আলো জ্বেলে দিয়েছে। তারা এখানে ৩০৯ জন জোয়ান আছে। সবাই মুসলমান হতে চায়।
সেদিনই আসরের নামাজের পর ৩০৯ জন বিধর্মী মুসলমান হয়ে গেলো। এভাবেই একটি প্রাণের বিশ্বাসের ঝলকে ঝলকে উঠলো শত শত প্রাণ।
আমি মারকোনী নই, তাসমিয়া
আমি মারকোনী নই, তাসমিয়া
আমরা ইতালীয় ক্যাথলিক হলেও ধর্মের ব্যাপারে আমাদের পরিবার খুব গোঁড়া ছিলো না। নিজ ধর্মের মতো অন্যসব ধর্মের প্রতি আমাদের সমান শ্রদ্ধা রয়েছে। এটার শিক্ষা দিয়েছিলেন আমার বাবা। মাও ছিলেন কোমল স্বভাবের। মা-বাবা দুজনই মুসলমানদের প্রতি খানিকটা দুর্বল ছিলেন। দীর্ঘদিন মুসলমান প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের কারণেই হয়তো এ দুর্বলতা তৈরি হয়েছিলো।
এজন্য শামসদের সঙ্গেই যে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিলো তা নয়, আশেপাশের অনেক মুসলিম পরিবারের সঙ্গেও আমাদের সখ্যতা ছিলো। ইউরোপের অনেকগুলো দেশের মানুষ এখানে পাশাপাশি বসবাস করে। কিন্তু ওদের কারো সঙ্গেই আমাদের কারো তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। মুসলমানদের সঙ্গেই আমাদের উঠাবসা।
এন্য অন্যান্য ইউরোপিয়ানদের কেউ কেউ আমাদেরকে কে মুসলমান বলে মনে করতো। একদিন সকালে চার্চে গিয়েছি। চার্চে এমনিতে খুব একটা যাওয়া হয় না। মাসে দুসালে একবার হয়তো যাওয়া হয়। তাও চার্চের শান্তিশিষ্ট পরিবেশটার কারণে। ওখানে গেলে মনটা কেমন পবিত্র হয়ে যায়।
চার্চে তখন লোকজন প্রায় একেবারেই ছিল না। শুধু একজন প্রৌঢ় লোক। তার সঙ্গে তার মেয়ে। ওরা মেক্সিকান। মেয়েটিকে আমি চিনি দূর থেকে। কিন্তু কথা হয়নি কোনদিন। আমি চার্চে ঢুকতেই মেয়েটি এগিয়ে এলো। ছিপছিপে গড়নের বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে। যেকোন পুরুষের জন্য দারুণ আকর্ষনীয় পাত্রী। আমার সামনে এসে হাই বলে তার হাত বাড়িয়ে দিলো।
আমি লিলিয়ান! এবং মেক্সিকান। উনি আমার বাবা। এখন উপাসনা করছেন।
আমি মারকোনি। তোমাকে আমি চিনি এবং তিনি যে তোমার বাবা তাও জানি।
আমিও তোমাকে এবং তোমার মা বাবাকে চিনি। কিন্তু তোমার নাম জানতাম না। শুনেছিলাম বোধহয় দুএকবার। কিন্তু মনে ছিলো না।
ধন্যবাদ।
কিন্তু তোমার নাম শুনে তা মনে হচ্ছে তুমি মুসলমান নও… খ্রিস্টান…,
হ্যাঁ, আমরা ক্যাথলিক খ্রিস্টান। ইতালিয়ান। কেন মুসলমান ভেবেছিলে আমাকে
লিলয়ানের কথায় আমি বেশ মজা পেলাম। লিলিয়ানের নাম শুনেছি আমার স্কুলের বান্ধবীদের কাছে। ও নাকি রোজ রোজ এক একজন ছেলের সঙ্গে ডেটিং করে। কোন ছেলেকেই ওর মনে ধরে না। আর যে ছেলে একদিন ওর সঙ্গে ডেটিংয়ে যায় পরদিন আর সে ওর কাছে ধারে ঘেষে না। কিন্তু লেলিয়ানের মতো এমন রূপসী মেয়ের বেলায় এমন কথা কে বিশ্বাস করবে? ব্যাপারটা রহস্যজনকই লাগলো। আর এখন লিলিয়ানের কথা শুনে একটু বিস্মিতই হলাম। জিজ্ঞেস করলাম।
তা আমার ব্যাপারে তোমার মনে এমন অদ্ভুত ভাবনা এলো কেন?
তোমরা তো মুসলিম কমিউনিটিতেই থাকো। তোমার মা বাবাকে ওদের সঙ্গেই বেশি দখো যায়। চার্চে বা গির্জায় আমি উনাদেরকে কখনো দেখিনি। আর তোমাকে আমি অনেক বার দেখেছি একটা ছেলের সঙ্গে। দারুণ দেখতে ছেলেটা! কি যেন নাম… রাখো রাখো মনে পড়ছে। অনেক কষ্ট করে নাম জোগাড় করেছি সেই ছেলের…যা, মনে পড়ছে… শামসৃ! ঠিক না?