ফিরে এলাম। বারবার মনে করেছি তোমাকে ওদের পথ থেকে ফেরাব বলে, কিন্তু এলোগেইছের সাথে জুড়ে দেয়া তোমার ভবিষ্যৎ চিন্তায় এতটুকু ফারাক না দেখে বারবার আমার সিদ্ধান্ত বদলেছি। তুমি স্বপ্ন দেখে যাচ্ছিলে………….ফ্লোরা করে যাচ্ছিল তার কাজ। তার কর্মকারে ফিরিস্তি আমার কাছে প্রতিনিয়ত পৌঁছতে থাকল। তোমার অজানা নয়, কত বিদ্রোহ হয়েছে সবগুলোই কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে।
পরে মরিয়ম নাম্নী নামী আরেক যুবতী পাদ্রীর ফ্লোরার সাথে সাক্ষাৎ হয়। মরিয়মের এক ভাই ইসলামের নিন্দাবাদ করতে গিয়ে ধরা খায়। তাকে জল্লাদের কাছে সোপর্দ করা হয়। মরিয়ম গীর্জা থেকে বেরিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য গালাগালি শুরু করে দেয়। এখানে তাদের দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়। সংবাদদাতা ও গোয়েন্দারা তাদের খুঁজে ফেরে।
***
সুলতান মুখে হাত দিয়ে শুনে যাচ্ছে, যিরাব বলে চলেছেন অবিরাম গতিতে, এরপর এক লোক আমার কাছে এলো। সে আমার কাছে এলোগেইছের পয়গাম দিয়ে বললো, কোন এক পল্লীতে আমার সাক্ষাৎপ্রার্থী সে। আমি গেলাম। সে আমাকে বলল, এবারের বিদ্রোহত ব্যর্থতায় পর্যবসিত। ফ্রান্স থেকেও সাহায্য আসতে পারছে না। কেননা আমীরে স্পেন সীমান্ত চৌকি খুবই চৌকস রেখেছেন। ঘোড়ায় কাউকে ওই এলাকায় দেখলে তার রক্ষা নেই। তার সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে পারে এমন সাধ্য কার।
বললাম, আপনি চাচ্ছেন কি, কেন ডেকেছেন আমায়? বলল, আমি কর্ডোভায় বিদ্রোহ করতে চাই, যে বিদ্রোহের সূচনা আবদুর রহমানের রাজপ্রাসাদ থেকে শুরু হবে। আমীরকে কয়েদ করা হবে। তার গোটা. সালারদের হত্যা করা হবে। ব্যক্তিগতভাবে সৈনিকদের মাঝে ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করে দেখেছি। কিন্তু ধর্ম ও দেশের আসন্ন বিদ্রোহে কেউই আমার কথায় কান দেয়নি। সে আমাকে তখন অন্তরঙ্গ মনে করছিল। বন্ধুত্বের ধোকায় তখনও রাখলাম তাকে। বললাম, তা কি করতে হবে আমাকে? বলল, সালারদের মাঝে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে দিন। ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করুন। এমন একদল সেনা নির্বাচিত করুন যারা গৃহযুদ্ধে পা চালিয়ে লড়বে। তাদের আমরা এই পরিমাণ অর্থ দেব যে, চৌদ্দ খান্দানও যা বসে খেয়ে শেষ করতে পারবে না। সুলতানা ও আপনার কৃত ওয়াদা পালনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকব। দেশের একটা প্রদেশের মালিক বানিয়ে দেব আপনাদের।
বললাম, আপনারা স্পেন থেকে ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলতে চান। যদি সফলকাম হন তাহলে আপনাদের খ্রীস্টাজ্যে খণ্ডিত ইসলামী প্রদেশ আপনারা সহ্য করবেন কি? সে বলল, জমিনে ইসলামী শাসন থাকলে তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। সে আরো বললো, আপনি ও সুলতানা যে প্রদেশের মালিক তা নামকাওয়াস্তের ইসলাম। আমার যদুর বিশ্বাস আপনারা ইসলাম ছেড়ে খ্রীস্টবাদে প্রবেশ করবেন। কিন্তু এ পরের কথা। আমি যেমন চাইব তেমনটা হবে। সর্বাগ্রে আপনারা আপনাদের কাজ করুন। বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধের ব্যবস্থাদি করুন। আপনারা যে পরিমাণ অর্থ চান দেব।
আমি শরীব পান করিনি। আমার আত্ম সচেতনতা লোপ পায় কি-না, এ ভয়ে। দুযুবতী আমার পাশে ছিল। শেষ পর্যন্ত ওখান থেকে এই বলে আত্মরক্ষা করলাম, বেশ তাই হবে। এলোগেইছ বললো, যিরাব! আমার যদুর বিশ্বাস আপনি আমাদের ধোকা দেবেন না। ধোঁকা দিলে আপনার পরিণতি খুব একটা সুখকর হবে না। আমার গোস্বা এসে গেল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার জন্য সুখকর না হলে তাতে কি? সে বললো, আপনি দুনিয়াতে থাকবেন না। আমি বললাম, আমার একটি শর্ত আছে। যদি পূরণ হয় তাহলে প্রাসাদে বিদ্রোহের পরিবেশ সৃষ্টি করব। চার সালারকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করব। এলোগেইছ শর্ত জানতে চাইলে তারা তিনজন একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওরি করল।
আমি ফ্লোরা ও মরিয়মের চেহারায় না গোস্বার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলাম, না খুশীর। তাদের ঠোঁটে দেখলাম কেবল তৃপ্তির কঢোক হাসি। এলোগেইছ বললো, আমি সামান্য অপেক্ষা করব। বলে সে দুযুবতাঁকে ওপাশের কামরায় নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে সে এলো, কিন্তু যুবতীদ্বয় সাথে নেই। বললো, ওই দুযুবতীর মুসলমানদের প্রতি এতটা ঘৃণা যে, তারা আপনাদের দেহের ঘ্রাণ পর্যন্ত বরদাশত করতে পারে না।
আমি শিও বাচ্চা নই সুলতানা! এলোগেইছের কথা দ্বারা বুঝলাম, ফ্লোরাকে তারা দ্বিতীয় মরিয়ম বানিয়ে রেখেছে। তারা কোনো পুরুষের গা ছুঁলে পর্যন্ত গোসল করে নেয় এবং গীর্জায় গিয়ে মাফ চেয়ে নেয়।
তুমি কি মনে মনে চাইতে এ দুযুবতী তোমার পাশে আসুক– অথচ তুমি আমার প্রেম দেওয়ানা?
না! যিরাব বললেন, আমার মাঝে জাতীয় চেতনাবোধ সেই পূর্ব থেকেই সজাগ হয়েছিল। এভাবে এলোগেইছ আমাকে হত্যার হুমকি দিলে আমার আত্ম সম দিয়ে তার সাথে প্রতারণার সুযোগে থাকলাম। এলোগেইছ আমাকে বললো, ফ্লোরা ও মরিয়মের অন্তরে মুসলমানদের ঘৃণা ভরা। ওদের প্রতি আমার যতটুকু যা শ্রদ্ধা ছিল এসব কথা শোনার পর সেটুকুও দূরীভূত হয়ে গেল। এলোগেইছ আমাকে পরবর্তী রাতে আসতে বললে আমি সায় দিলাম। সে রাতে আমার সাথে বোধ হয় অন্য কোন খেল খেলতে চাচ্ছিল। সন্দেহ ছিল আমার। খুব সম্ভব মেয়েগুলো রাজী হতেও পারত। এ জাতির কথা আমার জানা ছিল। ইহুদী-খ্রীস্টানরা ধর্মের নামে ইজ্জত-আব্রু বিকিয়ে দিতে জানে, কিন্তু আমার মন তখন চিন্তা করেছে অন্য কিছু।