মা-মেয়ে চকিতে দরজার দিকে তাকাল। এখানে ফ্লোরার ভাই বদরকে দেখা গেল ওরা জানতে পারেনি বদর ছাদে উঠেছিল। সেখান থেকে নামার পথে এই কথা তার কানে যায়। ওর বয়স ১৭। এ বয়সে তাকে হ্যান্ডসাম হিরো মনে হয়। মা-বোন উভয়ের মাঝে এসে দাঁড়ায় সে।
ও অন্য কারো কথা বলছিল বেটা! শোন বলছি তোমাকে………..
তুমি নও আমিই বলছি ওকে। ফ্লোরা বলল, তুমি মিথ্যা বলবে না। অতঃপর সে ভাইকে লক্ষ্য করে বলল, সত্যিই আমি খ্রীস্টান। আমার স্বধর্মের লোকদের হত্যাকারীদের আমি ধর্ম গ্রহণ করতে পারি না। ফ্লোরা ইসলামের বিরুদ্ধে বড় মানহানির কথা বলল।
বদর অগ্রসর হয়ে বোনকে এত জোরে থাপ্পড় মারল যে, টাল সামলাতে না পেরে সে দেয়ালে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সে অন্যান্য মেয়েদের মতই ক্রন্দন না করে হন হন করে অন্য কামরায় চলে গেল। ওপাশের কামরায় একটি তলোয়ারও দুটি বর্শ। বদর তার পিছু নিল। ফ্লোরা খাপ থেকে তলোয়ার বের করছিল, বদর গিয়ে ওর হাত থেকে তলোয়ার ছিনিয়ে নিল। চড়, কিল ও ঘুষি দিয়ে তাকে পালংক থেকে নীচে ফেলে দিল। মা ও ফ্লোরার ছোট বোন বদরের রাগ সংবরণ করতে ব্যর্থ হলো। ফ্লোরা আধাবেশ। মা ওকে জড়িয়ে ধরলেন।
***
বদর মাকে সাথে নিয়ে বেরোল এবং দরজায় ছিটকিনি বাইরে থেকে লাগিয়ে দিল। মাকে বলল,
মা ওর মনে খ্রীস্টত্বের প্রতি এত গভীর আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে কে? নিশ্চয় তুমি জানো। মা তার সন্তানের মনের খবর জেনে থাকেন। এবার সে বোনকে বললো, তুই জানিস কিছু?
বোন অজ্ঞতা প্রকাশ করল। মা-ও একই কথা জানালেন। বদর বলল, আমার বাবাকে এ অজ্ঞতা জানিয়ে আশ্বস্ত করতে পারবে কি? ওর সাথে কোনো না কোনো খ্রীষ্টানের সাথে অতি অবশ্যই যোগাযোগ আছে।.ওর সাথে কোনো মুসলমানের সাথে সম্পর্ক হলে সে অবশ্যই খ্রীস্টন হত্যা নয়- জেহাদ বলে বোঝাত। মুসলমানরা এটাকে ধর্মযুদ্ধ মনে করে। মাড্রিঙ্গ কি হয়েছিল? তুমি তাকে পৈত্রিক প্রদেশ কতলুয়ানার কাহিনী শুনিয়েছে।.ওখানে লড়াই শুরু করেছিল কে? এর পূর্বে টলেডোয় কি হয়েছিল? আমর মুসলমান মা! ইসলাম প্রচার-প্রসার আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মুসলমানদের কোরআন কাফেরদের ফেত্না মূলোপাটন করতে বলে, যতক্ষণ না ফেনা নির্মূল না হয়।
ক্রন্দন ছাড়া মা আর কোন জবাব দিলেন না।
বাবা আগামীকাল আসছেন। তিনি আসার আগ পর্যন্ত ওকে ওই ঘর থেকে বেরোতে দিও না।
গভীর রাত।
ফ্লোরার চোখে ঘুম নেই।
সন্ধ্যার দিকে ওর ছোট বোন খাবার নিয়ে এসেছিল, কিন্তু সে বলল, এ ঘরের পানি পানও আমার জন্য হারাম। শেষ পর্যন্ত মা এলেন। ফ্লোরা পূর্ববৎ বেঁকে বসল। গভীর রাতে ফ্লোরা পালংক থেকে নামল। বদ্ধ দরজায় লাগাল কান। ওপাশের কামরার তিনটি প্রাণী ঘুমের ঘোরে। কোথাও কোন সাড়াশব্দ নেই। জানালার ছিটকিনি খোলে সে। এখান থেকে নীচের দিকে তাকায়। লাফ দিয়ে নামা সম্ভব নয়। ফ্লোরার মৃত্যুভয় নেই। মুসলমানদের রক্তে হোলিখেলার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফেলেছে সে। ইতোমধ্যে জানালা পথে বেরিয়ে লঘুপায়ে পাশের বাড়ীর ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক সময় বহু সতর্কতার সাথে সে ওপাশের বাড়ীর ছাদে পৌঁছায়। এবার ওই ছাদ থেকে কি করে নামা যায় চিন্তা কেবল সেটাই। ছাদ থেকে উঠানের দিকে তাকায়। চোখে ভেসে ওঠে কাঠের একটা সিঁড়ি। এ বাড়ীর বাসিন্দাদের ফ্লোরা চেনে। জনৈক বৃদ্ধের এক জোয়ান বেটা ও তার স্ত্রী থাকে। ঘর থেকে পালানোর সময় সে লম্বা একটা হোরা নিয়ে এসেছিল এতদসত্ত্বেও জোয়ান পুরুষের সাথে লড়াই করার শক্তি কৈ তার। মনে মনে ভয় পায় সে।
এ ভয় এক সময় বাস্তবে রূপ নিল। জোয়ান লোকটা ছাদে কারো পায়ের আওয়াজ শুনে উঠানে এলো। ছাদের দিকে গভীর নযরে তাকিয়ে দেখল কোনো মহিলা বিচরণ করছে। এক সময় সে তরতর করে সিঁড়িতে ওঠে। ফ্লোরা এবার গ্যাড়াকলে পড়ে গেল। পালানোর কোনো পথ নেই।
আচমকা একটি দুষ্ট বুদ্ধি তার মনে চেপে বসল। প্রেম অভিনয় এ মুহূর্তে বাঁচার একমাত্র মাধ্যম। লঘু পায়ে ফ্লোরা সিঁড়ি মুখে এগিয়ে গেল। যুবকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। হাঁটু চৌকাঠে রেখে ঝুঁকে ঠোঁটে হাত রেখে সে বলল, জোরে কথা বলো না। আমি ফ্লোরা।
ফ্লোরা? যুবক হতকিত হয়ে গেছে, তুমি এখানে?
ওপরে এসো বেকুফা চুপ থাকো।
আত্মসৌন্দর্যে বিমুখ ছিল ফ্লোরা। জোয়ানকে মায়াজালে আটকাতে তার সময় লাগল না। যুবকটির দিকে সে বড় চোখ করে তাকাতে লাগল। ফ্লোরার দৃষ্টি বলছিল, সে ক্ষুধার্ত, কোন যুবক যা মেটাতে পারে। গভীর এই নিশুতি রাতে তার আচমকা আবির্ভাব যুবকের জন্য অলৌকিকই বটে।
যুবক সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল, তুমি এখানে কেন?
তোমার সাথে মিলন আছে। বলে সে যুবকের হাতে দুঠোঁট নামিয়ে দিল। আবেগাতিশয্যে বলল, হৃদয়ে এতদিন জগদ্দল পাথর চেপে বসে ছিলাম, শত প্রবোধ সত্ত্বেও মনকে বুঝতে পারলাম না। এইমাত্র স্বপ্নে দেখছিলাম তোমায়। চোখ খুলে গেলাম ঘাবড়ে। জানিনা কি সেই আকর্ষণ যা আমাকে এখানে ডেকে এনেছে। এসো কাছে এসো প্রিয়।
ফ্লোরা ভরন্ত যৌবনা। পিনোন্নত বক্ষ যুব সমাজকে হাতছানি দেয়। পুরুষ তাতে পুড়ে মরতে বাধ্য। ফ্লোরাকে সে বুক চেপে ধরল। ফুসফুস থেকে তার শ্বাস বের করে নিতে চায় যেন। ফ্লোরা যুবকের দেহে মিশে যায়। তার দীঘল কালো চুল যুবকের মুখে জড়িয়ে যায়। ফ্লোরা বলল, চলো বাইরে যাই! বাড়ীর কেউ জেগে গেলে বিপদ।