আমি কাউকে ভয় করি না। যে বিষয়টি নিয়ে আপনারা আমাকে শাসাচ্ছেন আমি একে থোড়াই পরোয়া করি। ইসলামের জন্য আমি জীবন ওয়াকফ করেছি। স্বামীর সাথে আমার সম্পর্ক ততক্ষণ থাকছে যতক্ষণ তিনি ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। আপনি ধীমান মিঃ যিরাব! আপনার অজানা নয় যে, মুসলিম বধূমাতারা সুলতানা হওয়া শুরু করলে মুসলিম সাম্রাজ্য সংকুচিত হতে হতে কাবা শরীফ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে। ইসলামী স্মৃতিবহ হিসেবে কেবল কাবাই থাকবে। পরে অমুসলিমরা বলবে, এ সেই জাতির নিশানা যাদের মেয়েরা শালীনতা পরিত্যাগ করে নগ্ন হয়েছিল। তাদের লজ্জা-শরম শিকায় তুলে রেখেছিল। পর পুরুষের সামনে নিজের স্বকীয়তা হায়েনার মত তুলে ধরেছিল। তারা এমন সন্তান জন্ম দিয়েছিল যাদের সন্তান-সন্ততিরা স্বাধীনতা ও আযাদী শব্দটি পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিল।
তুমি যা বলছ আমি খুব ভালভাবেই অবগত।
এ কথা যিনি সর্বপ্রথম আমার কানে দিয়েছিলেন তিনি এর ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। তিনি আমার স্বামীর বাবা আল হাকাম। টলেডো অভিযানে শাহাদতের পূর্ব মুহূর্তে এ কথা বলেছিলেন। মুহতারাম যিরাব। আপনাকে আরো কিছু বলার আছে আমার। আপনি স্রেফ সগীতজ্ঞ নন। খোদা যে গুণে আপনাকে গুণান্বিত করেছেন, যে গুণ দ্বারা আপনি জনতাকে পাগল করে তোলেন, একে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করবেন না। আপনার মহান বিবেক দ্বারা অন্যকে গোমরাহ করবেন না। খোদা ধনদৌলত দিলে গরীবদের পোকা মাকড় মনে করবেন না। খোদা তায়ালা শক্তি দিলে অধীনদের গোলাম করবেন না।
তুমি আমাকে দর্শন শোনাচ্ছ কেন? আমি তোমাকে নষ্ট করতে আসিনি। সুলতানার কোপানল থেকে বাঁচাতেই আমার আসা।
আপনার চেহারায় আমি এক ধরনের চিন্তা ও পেরেশানি লক্ষ্য করছি। ভয় নেই আমীরের কানে এর কিছুই দেব না আমি।
তোমাকে ধমক দেয়া আমার অভিপ্রায় নয়। তোমার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশই গভীর রাত্রে আমাকে এখানে ডেকে এনেছে।
***
শহরবাসী বীর সেনানীদের অভিনন্দন জানাতে উপকণ্ঠে ছুটে গিয়েছিল। তম্মধ্যে মুসলিম-খ্রীস্টান সকলেই শামিল ছিল। কর্ডোভায় আগেভাগেই খবর পৌঁছেছিল মাদ্রিদ বিদ্রোহের। সকলে জেনেছিল অবরোধের কথা। ফৌজ শহরের দ্বারে পা রাখতেই নারা ধ্বনি দিল। রাস্তাঘাট ও বাড়ীর বেলকনি থেকে নারীরা পুষ্পবৃষ্টি বষর্ণ করতে লাগল। আবদুর রহমানের রথের পেছনে সুলতানা, শেফা ও অন্যান্য হেরেমের নারীরা চলছিল। মোদাচ্ছেরা একটি পৃথক ঘোড়ার সওয়ার। তার ঘোড়াটি আবদুর রহমানের গাড়ীর সাথে লাগোয়া। এই চার নারী আবদুর রহমানের নয়নমণি। এদের মোদাচ্ছেরাই একমাত্র বিবাহিতা স্ত্রী। শাহী রেওয়াজ মোতাবেক সকলেই উপকণ্ঠে এসেছে। যিরাব ও অন্যান্য আমলারা দূরত্ব বজায় রেখে পেছনে চলছে।
বিশেষ কোন ঘটনা, কোনো কথা? আবদুর রহমান মোদাচ্ছেরাকে জিজ্ঞেস করেন।
না তেমন কিছু না। দোয়া ও কল্যাণ কামনার মধ্যে আমার বিগত দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে। বিদ্রোহী নেতাকে গ্রেফতার সম্ভব হয়েছে কি? মোদাচ্ছেরা বললেন।
হাত থেকে ফসকে গেছে। ওদের ধরা খুব সহজ ছিল না। এলাকাটা মুসলিম অধ্যুষিত হলে ধরা যেত। খ্রীস্টানরা তাদের পালাবার সুযোগ করে দিয়েছে। যিরাব ও সুলতানা কেমন ছিল।
ওদের সাথে আমার দেখা হয়নি। অভিযান নিয়েই দিন-রাত চিন্তা ছিল আমার।
যিরাবের ঘোড়া সুলতানার টাঙ্গার কাছাকাছি ছিল। হাতের ইশারায় তাকে কাছে ডাকল। যিরা তার কাছে এলো। সুলতানা বললো, দেখছ যিরাব! হতচ্ছাড়ি এখানেই তার কানভারী করা শুরু দিয়েছে। আর তুমি বলছ তাকে নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নেই।
এদিকে আবদুর রহমানকে মোদাচ্ছেরা প্রশ্ন করেন, বিদ্রোহের শংকা এখন কেটে গেছে কি?
না, ওরা আমাদের তখতে তাউস উল্টানোর যোগসাজশ করছে। এজন্য যারপরনাই কোরবানী করছে। সামান্য এই অভিযানে ওরা দমবে না।
এখানকার মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ও আবেগ পয়দা হলে বিদ্রোহের শংকা বহুলাংশেই দূরীভূত হবে। আমাদের শংকা নও মুসলিমদের নিয়ে। এরা দুমুখো গোখরা। আমাদের জন্য ওরা ফাঁদ পেতে চলছে।
কাফের সম্প্রদায় তার সুন্দরী নারীদের নানাভাবে ব্যবহার করছে। আপনার অনুমতি পেলে আমি মুসলিম যুবতীদের গোয়েন্দা করে শহরের খবরাখবর নিতে থাকব। ওদের সেনা প্রশিক্ষণেরও দরকার।
না।
কেন? আপনি কি ইতিপূর্বে যখমীদের পট্টি বাঁধা ও সেবা শুশ্রূষা কারার জন্য নারীদের নেন নি?
এতে দুর্ণাম হতে পারে। বলে তিনি নারারত শহরবাসীদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন।
মোদাচ্ছেরার সাথে কৃত্রিম আলাপ করায় সুলতানা ভেতরে ভেতরে জ্বলে খাক। বার বার সে যিরাবের প্রতি তাকায়। যিরা তা দেখেও দেখেন না।
***
সড়ক সংলগ্ন একটি দ্বিতল বাড়ীতে জনৈকা সুন্দরী তরুণী দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছিল। বীর সেনানীদের তাদের দৃষ্টি মাঝে মধ্যে ইমারত থেকে ভেসে আসা পুষ্পবৃষ্টির দিকে তাকায়। তারা দেখত জানালা ও বেলকনি থেকে তরুণীরা ও গৃহবধূরা ফুল ছিটাচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু দ্বিতল বাড়ীর তরুণীটি। তার হাতে কোনো ফুল নেই। মুখে নেই আনন্দের লেশ। চেহারায় এক প্রকার বির্ষের ছাপ। আবদুর রহমানের দিকে তাকানোর সময় ঘৃণায় তার মনটা তেতো হয়ে ওঠে। আচমকা কারো হস্তস্পর্শে ওই তরুণী সম্বিত ফিরে পায়। কে যেন তাকে ডাকে, ফ্লোরা! তরুণী ঘাড় কাত করে পেছনে তাকায়। ওর মা পেছনে।