এদেরই একদল ফটকের দুকপাট পুরোপুরি খুলে দেয়। এবার বিদ্রোহীর জীবন-মৃত্যুর দোলায় দোল খেতে থাকে। জনৈক ইতিহাসবিদ লেখেন,
বিদ্রোহীরা জানত, তারা মারাত্মক অপরাধী। এরা মুসলিম খেলাফতের বিদ্রোহী। তারা মুসলিম নেতৃত্বে আঘাত হেনেছে। তাদের ঘরদোরে আগুন জ্বেলেছে। মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছে। সুতরাং তারা ওই কৃতকর্মের শাস্তির জন্য প্রস্তুত ছিল। কাজেই তারা ও সময় জীবনবাজি রেখে এভাবে লড়তে থাকে যাতে মুসলিম শিবিরে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।
লড়াই এবার অলি গলিতেও ছড়িয়ে পড়ল।
এ সময় মুসলিম সেনাপতি চিৎকার দিয়ে বলেন, পুরুষদের গলা কেটে ফেল। ওদের একটাও যেন প্রাণে রক্ষা না পায়। কাফেরদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
সকাল বেলা দেখা গেল মাদ্রিদের রাজপথে রক্তবন্যা। পা পিছলানো অবস্থা। প্রধান সেনাপতি দক্ষিণ ফটক খোলার খবর শুনতেই জনৈক দ্রুতগামী দূতের মাধ্যমে এ খবর আমীরে স্পেনের কাছে পৌঁছান।
উবায়দুল্লাহ শহরে প্রবেশ করেই সরকারী ইমারত দখল করার ঘোষণা করেন এবং একদল চৌকস গুপ্তবাহিনীকে কোষাগার দখল করতে বলেন। নিজে একদল নিয়ে কয়েদখানায় যান। ওখানে সামান্য প্রতিরোধ হয়। জেল দারোগাকে মুসলিম ফৌজও গভর্নরকে ছাড়িয়ে বাইরে নিয়ে আসতে বলেন।
সেনাপতি এবার আবদুর রউফকে বলেন, এলোগেইছ, ইলিয়ার ও মোহাম্মদ ইবনে আবদুল জব্বারকে পাকড়াও করার হুকুম জারী করেন। কিন্তু তা কি করে সম্ভব। তার বাহিনীর কেউই এ তিনজনকে চেনে না। কোনদিন দেখেনি। ইবনে আবদুল জব্বারকে কেবল সালারগণ চিনতেন। এদের পাকড়াও করার জন্য শহরের প্রতিটি কোণে খোঁজাৰুবাহিনী যায়। কিন্তু পরবর্তীতে জানা গেল, বাহিনী প্রবেশের আগে ভাগেই এরা শহর ছেড়ে আত্মগোপন করেছে।
***
আবদুর রহমানের কাছে দূত খবর দিতেই তিনি মূসা ও করনকে বললেন, তাদের বাহিনী যেন পূর্বের মতই টহল দিতে থাকে এবং ফ্রান্স বাহিনী চোখে পড়তেই যেন তাদের ওপর চড়াও হয়। ওদের একটা। যেন ফিরে যেতে না পারে। এরপর তিনি সসৈন্যে মাদ্রিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তার চলার গতি খুবই তীব্র। পরদিন দুপুরের পূর্বেই মাদ্রিদের কেন্দ্রস্থলে চলে আসেন। শহরে কখনও লড়াই চলছে।
আমীরকে দেখামাত্রই ঘোষণা হলো, আমীরে স্পেনের আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।
আবদুর রহমানকে দেখামাত্রই ফৌজের মাঝে নব জীবনের জোয়ার এলো। তিনি প্রথম যে ফরমান জারী করেন, তা হচ্ছে ওই দুশমন পুরুষের একটাও যেন জীবিত না থাকে।
সূর্যাস্তের পূবেই বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করল। তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হলো। মশালের আধিক্যে অন্ধকার বোঝার উপায় নেই। আমীরের ফরমান মোতাবেক ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে পুরুষদের বের করে আনা হলো। মোহাম্মদ ইবনে আবদুল জব্বার, এলোগেইছ ও ইলিয়ারের টিকিটিও নেই। পাদ্রীদেরও গ্রেপ্তার করা হলো। শহরবাসীদেরকে জিজ্ঞেস করলে কেউ না কেউ এই পাদ্রীদের নামোল্লেখ করলই। এভাবে নেতৃস্থানীয়দের বিরাট একটা দল বেরিয়ে এলে তাদের আলাদা করা হল।
ওই কার্যক্রমে দুদিন লেগে গেল। নেতৃত্বদানকারী কাউকে সন্দেহ করা হলে তাকে আলাদা করা হলো। শহরবাসীদের কড়া ভাষায় বলা হোল, বাঁচতে চাইলে বলো, আর কে কে তোমাদের নেতৃত্ব দিয়েছে। এবারও বিশাল একটা দল বেরিয়ে এলো। মুসলিম নারীদের অপহরণকারী ও ঘরে আগুনদাতাদেরও পৃথক করা হোল, আমীর এবার তার চূড়ান্ত ফয়সালা করলেন। এদের সকলকে হত্যা করা হোক। তিনি বললেন, এলোগেইছ, ইলিয়ার ও আবদুল জব্বারের সন্ধান দাতাদের মাফ করে দেয়া হবে। কিন্তু কেউই তাদের সন্ধান দিতে পারল না। এরা মুসলিম ফৌজ শহরে প্রবেশ করার পূর্বেই পালিয়েছে। ইবনে আবদুর জব্বার লিজবন আর বাকীরা অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
এই সময় আবদুর রহমান জানতে জানতে পারেন, শহরের প্রথম দরোজা খোলা মুজাহিদ আবু রায়হান শাহাদত বরণ করেছেন। আরো জানতে পারেন কিছু লৌহমানবীও এ কাজে সহযোগিতা করেছে। আবদুর রহমান ওই যুবতী ও বাপ-মাকে অঢেল সম্পদ দিয়ে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মাদ্রিদ লাশের শহরে পরিণত। আবদুর রহমান গোটা শহরে বিচরণ করেন। লাশ অপসারণ নিজের চোখেই অবলোকন করেন। সর্বশেষ মাদ্রিদের বন্দী গভর্নরকে উদ্ধার করে তাকেই আবার এখানকার গভর্নর নিযুক্ত করেন।
***
কর্ডোভায় খবর পৌঁছে যায়, আমীর সাহেব আসছেন। চাটুকাররা তাদের থলের ভাষার অলংকার ঘষেমেজে চোখা করে রেখেছিল। মহলে চলছিল চুনকাম। যিরাব ও সুলতানার ঘুম চলে গেছে। সংবাদদাতারা বলেছিল যে, ফ্রান্স অভিযান স্থগিত হয়ে গেছে। কিন্তু মাদ্রিদে বিদ্রোহীদের রক্তবন্যা বইয়ে দেয়া হয়েছে। আরো জানানো হয়, ময়দানে আবদুর রহমানকে চেনার উপায় নেই। খুব সম্ভব তিনি ভুলে গেছেন যে, তাকে স্পেন সম্রাট খেতাব দেয়া হচ্ছে।
ফুলে ফুলে সুশোভিত নয়নাভিরাম একটি স্থানে সুলতানা ও মোদাচ্ছেরা পায়চারী করছিলেন। সুলতানা মোদাচ্ছারকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনি মোদাচ্ছেরার সাথে এভাবে সখ্য দেখান যা ইতিপূর্বে ছিল না। মোদাচ্ছেরা বলেন,
রাণী হে। যা বলার বলে ফেলুন। যদিও জানি আমার প্রতি সামান্যতম সহানুভূতি নেই আপনার মাঝে।
তাহলে শোন মোদাচ্ছেরা! আমীরে স্পেনের ওপর তোমার প্রভাব ফেলা চলবে না। মনে রেখে, হেরেমের সামান্য এক বিৰি মাত্র তুমি। সুলতানা বলল,