ওরা যদি না থাকত……………।
আমরা মেয়েরা তো আর শল্য নই বলল জনৈকা যুবতী। আপনি আমাদেরকে পুরুষদের মত সড়াতে চাইলে আমরা প্রস্তুত।
আমরা এখানে আত্মগোপন এজন্য করেছি যে, খ্রীস্টান বিদ্রোহীরা অসংখ্য। খোদার কসম, যদি একক যুদ্ধ হত তাহলে আমরা এই নির্বাসনের পথে এগুতাম না। আপনি প্ল্যান তৈরী করুন, ইনশাআল্লাহ আমাদের সেপাই পাবেন। আমাদের সতীত্ব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। বলল আরেক যুবতী।
খবর যদি সত্যি হয় তাহলে আজ রাতেই অবরোধ হওয়ার কথা। আচ্ছা, তোমাদের কাছে হাতিয়ার আছে কেমন?
চারটি বর্শা। নয়টি তলোয়ার। সামান্য খঞ্জর। তিনটি ধনুক ও বেশ কিছু তীর।
বহুত আচ্ছা। খ্রীস্টানরা তাদের মেয়েদের স্বপ্নের রাজকন্যা, শয্যার প্রজাপতি, ভূগর্ভস্থ মায়াবিনী ছলনাময়ী হিসেবে পেশ করেছে, আর আমাদের মেয়েদেরকে আমরা বীরাঙ্গনা করে পেশ করব আসন্ন যুদ্ধে। এটাই ইসলামের শিক্ষা ও আভিজাত্য। ইসলাম নারীকে তার দেহের উঁচু নীচু তরঙ্গ দেখিয়ে পুরুষকে আকর্ষণ করতে শেখায় না বরং তলোয়ারের চমকে দুশমনকেই তার পদতলে নাচাতে শেখায়। প্রস্তুত হও জাতির বীরাঙ্গনা! এর পাশাপাশি ক্ষুধা-কষ্টের প্রস্তুতি নাও। একনাগাড়ে অনেকগুলো কথা বলে আবু রায়হান হাঁপিয়ে উঠলেন।
***
ওই রাতে মাদ্রিদ অবরোধ করা হলো। মাদ্রিদবাসী রাতে ঘুমুতে পারেনি। সূর্যাস্তের পূর্বেই কর্ডোভাবাহিনী সতর্কভাবে এগিয়ে আসছিল। শহরবাসী খাদ্য সামগ্রী সঞ্চয় করছিল যাতে দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে না হয়। দড়াম করে লেগে গেল প্রবেশদ্বারগুলো। সামর্থ্যবান পুরুষেরা হাতিয়ার নিয়ে প্রাচীরে চড়ল। সিঁড়ি স্থাপন, সুরঙ্গ খোদাই কিংবা দেয়ালের কাছে আসতেই যেন প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারে এজন্য তারা জ্বালানী কাঠ নিয়ে গেল। পানি কামানেরও ব্যবস্থা থাকল। প্রতিটি বুর্জে ঝানু তীরন্দাযকে নিয়োগ দেয়া হলো। মোটকথা অবরোধকারীদের দেয়ালের কাছে আসার সম্ভব সব ব্যবস্থাদি করা হলো।
সালার আবদুর রউফ ও উবায়দুল্লাহ মাদ্রিদ থেকে সামান্য দূরে অবস্থান নিলেও নেতৃত্ব ওবায়দুল্লাহর হাতেই ছিল। ফৌজকে যুদ্ধসাজ দিয়ে সামান্য কিছুকে রাখালের ছদ্মবেশে অগ্রগামী বাহিনী হিসেবে শহর রক্ষা প্রাচীরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানকার পরিস্থিতি অবলোকন করতেই এদের পাঠানো। উবায়দুল্লাহ এর পূর্বেই জানতে পারেন। শহরের বাইরে বিদ্রোহীদের টিকিটিই নেই।
উবায়দুল্লাহ সৈনিকদের উদ্দেশে বলেন, বন্ধুরা আমার। বিদ্রোহীদের সামান্যও সমর কৌশল জানা থাকলে তারা শহর ছেড়ে এখানেই আমাদের বাধা দিত। ওরা আমাদের আগমণ শোনেনি, তাও অবিশ্বাস্য। ওদেরকে অদূরদর্শীই মনে হচ্ছে। শহরের ভেতরে থেকে আত্মরক্ষামূলক হামলাকে ওরা যুতসই মনে করছে।
সালার উবায়দুল্লাহ বাহিনীকে ছড়িয়ে দিলেন। একসময় বাহিনী শহর রক্ষা প্রাচীরের নিকটে পৌঁছে গেল। তারা দেখল প্রাচীরের ওপরে মশাল জ্বলছে। উবায়দুল্লাহ আবদুর রউফকে বললেন, পেছনে লক্ষ্য রাখবেন। দুশমন পশ্চাৎদিকে ওঁৎ পেতে থাকতে পারে।
***
গভীর রাতে প্রাচীরের ওপর থেকে ভেসে এলো, দুশমন এসে গেছে। শহর অবরুদ্ধ। হুঁশিয়ার। সাবধান। প্রাচীরের ওপর থেকে তারা তীরবৃষ্টি নিক্ষেপ শুরু করে। উবায়দুল্লাহ উঁচুস্থানে দাঁড়িয়ে বলেন, আমরা বিদ্রোহীদের ক্ষমার সুযোগ দিতে চাই। শহরের দরজা খুলে দাও। ক্ষমা করা হবে তোমাদের। গ্রেফতার পর্যন্ত করা হবে না কাউকে।
প্রাচীরের ওপর থেকে ভেসে এলো, হিস্মত করো মুসলমানরা! পারলে আগে বেড়ে দরজা নিজ হাতেই খুলে নাও।
জনৈক কমান্ডার প্রাচীরের কাছে গিয়ে বললেন, আমীরে স্পেন স্বয়ং এই অবরোধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ……………কথা শেষ হতে না হতেই এক পশলা তীর তাকে ঝাঁঝরা করে ফেলে।
সালার উবায়দুল্লাহ বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের স্থলে পাল্টা আক্রমণ করতে দেখে দেয়াল ও ফটকে চড়াও হবার নির্দেশ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীর থেকে অগ্নিগোলা ও তীরবৃষ্টি ছুটে আসে। আগুয়ান ফৌজ সামান্যতমও প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে পারে না। এই পরিস্থিতি উবায়দুল্লাহ আগেভাগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ মিনজানিক (পাথর ছোঁড়া কামান) প্রস্তুত করেন এবং কামান থেকে পাথর ছুঁড়তে নির্দেশ দেন।
প্রাচীরের হৈ চৈ বাংকারের সৈনিকদের কানে পর্যন্ত যায়। এদিকে আবু রায়হান শহরের প্রবেশদ্বারগুলো সম্পর্কে সবিশেষ অবগত ছিলেন। তিনি এক হাতে তলোয়ার ও আরেক হাতে তীর নিয়ে বেরুলেন। তিনি দেখতে চান, শহর ফটকে বিদ্রোহীদের অবস্থান কিরূপ। এক্ষণে গ্রেফতারীর ভয় নেই তার। তিনি সবদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকেন। উম্মাদপ্রায় মানুষ ছুটাছুটি করছে। কে কার খবর রাখে। আবু রায়হান মুখ ও মাথা ঢেকে শহুরে মানুষের ভীড়ে ঢুকে পড়েন।
তিনি দুএকটি দরজা ঘুরে আসেন। দেখলেন সহস্রাধিক লোকের প্রহরা প্রতিটি দরজায়! ওরা মুসলমানদের অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে। ওখানে প্রহরীদের এতই ভীড় যে, সুঁই রাখারও স্থান নেই। ওরা বাইরে তীর নিক্ষেপ করেই চলেছে। প্রাচীরের বাইরে কামান থেকে নিক্ষিপ্ত প্রকাও পাথর দরজায় না লেগে দেয়ালে লাগলে দুদ্রোহী মারা যায়। আবু রায়হান কামানোর টার্গেট ব্যর্থ হওয়ায় নিরাশ হয়ে পড়েন।