উপসংহারে তিনি বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে খ্রীস্টানরা সম্মুখ সমরে আমাদের মোকাবেলা করতে অপারগ। ওরা নেপথ্যে আমাদের মোকাবেলার জন্য তৈরী হচ্ছে। প্রত্যাবর্তনের পথে বহু ছাউনি দেখেছি। সংবাদদাতা, গোয়েন্দা ও টহলদার বাহিনীর মাধ্যমে আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। এদের তথ্যের মাধ্যমে বুঝেছি, তলে তলে বিশাল এক ফেৎনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সীমান্তের লড়াই থেকে যে সব কয়েদী আমি ধরে এনেছি তন্মধ্যে বেশ কিছু পদস্থ অফিসারও রয়েছে। ওরা বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। ওরা বলেছে, স্পেনে যে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠছে ফ্রান্স সম্রাট লুই এর পৃষ্ঠপোষক। শুধু কি তাই! তার বাহিনীও আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানো শুরু করে দিয়েছে।
আমি লোকমুখে এলোগেইছ নামী এক লোকের কথা শুনেছি। মনে হচ্ছে, লোকটা কট্টর খ্রীস্টান আলেম এবং অসাধারণ ধীশক্তিসম্পন্ন। এই লোকের নেতৃত্বেই বিদ্রোহ হচ্ছে। ওর টিকটিকি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। আমাদের চৌকস হতে হবে। কোটা বৃদ্ধি করতে হবে সেনা তালিকায়। প্রতিটি মহকুমায় সেনাক্যাম্প গড়ে তুলতে হবে। শেষকথা স্পেন পরিস্থিতি এ মুহূর্তে বিস্ফোরনোমুখ।
ভাই উবাইদুল্লাহ! উজির বললেন, তোমার দেখার আনেক কিছুই বাকী রয়ে গেছে। তুমি লড়াইয়ে যাবার পর এখানে এক ভৌতিক কাণ্ড ঘটে গেছে। ঈসা (স)-এর নামে এক পাহাড়ে আবির্ভাব নাটক দেখানো হয়েছে। বলে উজির তাকে গির্জায় কাহিনী ঘটা করে শুনিয়ে যান। আমাদের উদারচিত্ত রহমদিল আমীর অপরাধীদের ছেড়ে দিয়েছেন। দেখারও প্রয়োজন মনে করেননি শহীদানের লাশ। আমরা তার নিরুজ্ৰব ভূমিকায় যারপরনাই হয়রান হয়েছি।
আর তোমরা মুখ বুজে সহ্য করে গেলে? সালারের কষ্টে বিষয়।
ভাই। আমি ও রউফ যথাসাধ্য করেছি। তাকে লজ্জিত করেছি। অবশেষে রাগ করে বেরিয়ে এসেছি। উজির বললেন।
যিরাব ও সুলতানা তার দিল-দিমাগে প্রভাবে ফেলেছে পুরোদস্তুর। তিনি এখন আর কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। বললেন আবদুর রউফ।
দরবারে তোষামোদ ও চাটুকারদের ঠাসা ভিড়। ওরাই এখন দেশ চালাচ্ছে। সাথে সাথে ভারী হচ্ছে ওদের ঝুলি। মূসা ইবনে মূসা বলে বললেন।
এর এলাজ একটাই। সালার করতুন বললেন, ওদের কাউকেই বাঁচিয়ে রাখা যাবে না, নয়তো স্পেন থেকে আমাদের গাভি-বোঁচকা গুটাতে হবে।
না। উবাইদুল্লাহ বললেন, খুন-খারাবি ও অভ্যুত্থানের পরিণতি সাধারণত ভালো হয় না। এতে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা থাকে। গৃহযুদ্ধ লেগে গেলে দুশমন জ্বলন্ত আগুনে ঘি ছিটাবে। এতে জাতি কমযোর হয়ে পড়বে। সীমান্তের ওপারের দুশমন নির্বিঘ্নে অভ্যন্তরে হামলা চালাবে। কেউই ওদের রুখতে পারবে না। আমরা আমীরকে হত্যা করলে একটি বদ রেওয়াজ চালু হবে। পরবর্তী বংশধর মনে করবে হত্যা কর, গদী দখল কর।
তাই বলে কি নিপ বসে থাকব? বললেন জনৈক সালার।
এখন একটাই উপায়, আমীরে স্পেনের ভেতরটায় টোকা মারা। তিনি মামুলী লোক নন। তার অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও বুদ্ধিমত্তা আপনাদের অজানা নয়। আল হাকামের যুগে তিনিই ছিলেন রাষ্ট্রের সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু। তিনি লড়াই করেছেন। আমার যদুর বিশ্বাস স্পেনে তার মত দ্বিতীয়জন কেউ নেই। বললেন উবাইদুল্লাহ।
কিন্তু আমরা কতদিন অপেক্ষা করব? উজির প্রশ্ন করেন। উজির প্রশ্ন করেন, আমরা আবদুর রহমানের রঙে রঙিন হতে পারি না। ঈমান ও স্বাধীন সত্তাবলে বলীয়ান আমরা। ইসলাম বলেছে, আমীর কিংবা খলীফা পথচ্যুত হলে তাকে খতম করে দাও। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হবে আমাদের-আবদুর রহমানকে নয়।
কাল সকালে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। ভুয়া ইমাম ও যুবতীদেরও সাথে নেব। তিনি আমার জযবা ঠাণ্ডা করতে চাইলে আপনাদের সাথে পরামর্শ করব এবং অন্য প্ল্যান নেব। ফ্রান্সের পক্ষ থেকে আমি হুমকি পাচ্ছি। আমি ফ্রান্স অভিমুখে সৈন্য প্রেরণে তাকে বাধ্য করতে চেষ্টা করব। আপনারা সকলেই সেনা কমান্ডার কমান্ডারদের নীতি হচ্ছে, দুশমনের থেকে হুমকি এলে সঙ্গে সঙ্গে হামলা চালানো। ওরা প্রস্তুতি নিয়ে ময়দানে নামার পূর্বে গ্রেপ্তার করা। সামনের পথ খুবই দুর্গম আমাদের। স্পেনকে বাঁচাতে চাই আমরা। ইসলামের এই প্রতিরোধ দুর্গ হেফাজত করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।
***
সিপাহসালার উবাইদুল্লাহ স্পেনের আমীর আবদুর রহমানের সাক্ষাৎক্তমে তার বিগত কর্মকাণ্ড শোনাচ্ছিলেন। সালারদেরকে বলা কথারই পুনরাবৃত্তি করেন তার সামনে। আরো বলেন : স্পেন আমীর গীর্জায় গাঁজায় হুকুমত বিরোধী প্রপাগাণ্ডা চলছে-একথা কেউ কি বলেনি আপনাকে? মুসল্লীদেরকে মসজিদে মসজিদে বিকৃত তাফসীর শোনানোর মাধ্যমে তথ্য সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে। আমি জনৈক খ্রীস্টান ও দু যুবতী নারীকে ধরে এনেছি। এই লোক কয়েকমাস ধরে মসজিদে ইমামতি করছে। আমার দুমান্ডার তার বিকৃত তাফসীর শুনেছে। আমি ছদ্মবেশে এথানে যাই। বলে তিনি পুরো কাহিনী বলেন।
ওদের আমি সাজা দেব উবাইদুল্লাহ। আপনার এতটা উত্তেজনা ও উদ্বিগ্নতা আমি আশা করিনি। মাত্র একটা লোক আমাদের কি করবে? দুনারী আর এমন কি সমস্যা? সিপাহসালার অবাক হয়ে যান। স্পেনের আমীর এতটুকুও জানেন না যে, তাদের দেশের কোথায় কি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলছেন দুএকজন দেশের কি করবে? উবাইদুল্লাহ গির্জার ভেল্কিবাজির কথাও তুলে ধরেন। আবদুর রহমান বলেন, উজির আঃ করিম ও সালার বড্ড বাড়াবাড়ি করেছে। তারা খামোখাই গির্জায় আগুন লাগিয়েছে।