***
ইমাম সাহেব একটি পৃথক বাড়ীতে থাকতেন। পরে জানা গেল ওই ঘরে আর কারো প্রবেশানুমতি ছিল না। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তার এখানে কিছু ভূত-প্রেতের আনাগোনা, তারা ইমামর কাছে দরস নিতে আসে। ইমাম ও উবাইদুল্লাহ ওখানে এসে দাঁড়ালেন। সর্বাগ্রে তাদের চোখে ভেসে উঠল দুযুবতী। ঘর তল্লাশি শুরু হোল। তম্মধ্যে একটি কামরা অবিকল গির্জার মত। ওখানে ক্রুশদণ্ড, মেরীর মূর্তি ও ঈসার প্রতিকৃতিও পাওয়া গেল। গির্জায় এবাদত করতে যা লাগে তার সব উপকরণই এখানে। উবাইদুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে ইমাম বললেন, তিনি প্রায় মাস ছয়েক ধরে এখানে ইমামতি করে আসছেন।
সালার ওইসব ইবাদত-উকরণাদি তুলে নিলেন। সঙ্গে দুযুবতী ও তথাকথিত ইমাম। পথিমধ্যে ইমাম সাহেব বললেন, আপনি দু যুবতাঁকে নিয়ে নিন এবং যত অর্থ চান এর বিনিময়ে আমাকে ছেড়ে দিন। চাইলে এর চেয়ে ভুবন মোহিনী নারী কোন অর্থ ব্যতীতই আপনাকে দেয়া হবে।
আঁধার রাতে এ দুযুবতী কমান্ডারদের হৃদয়ে উত্তাপ বাড়িয়ে তুলতে গা ঘেঁষে চলছিল। তারা নারী সুষমার সবটুকু উজাড় করে দেয়ার জন্য মেহনত করে যাচ্ছিল। কিন্তু লোহার ছাঁচে গড়া এই সালারের এতে এতটুকু পরিবর্তন নেই। উবাইদুল্লাহ ছাউনিতে এসে, এদেরকে নিয়ে চললেন অফিসে। বললেন যুবতীদের লক্ষ্য করে,
শুনে নাও! তোমরা এক ফৌজি খিমায় এক্ষণে। তোমাদের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে। উত্তর এদিক সেদিক করেছ কি ক্ষুধার্ত সেপাইদের হাওয়ালা করে দেব। ওরা সবে হিংস্র বর্বর। মনে করে দেখ সেই বীভৎস চিত্রের কথা-কোন নারী যাকে সহ্য করতে পারে না। পারবে না তোমরাও।
আপনি আমার প্রস্তাব কবুল করছেন না তাহলে? ইমাম সাহেব উবাইদুল্লাহকে প্রশ্ন করেন। এ মুহূর্তে তার কণ্ঠে চ্যালেঞ্জের সুর। মনে হচ্ছে কতকটা ধমকি দিয়েই তিনি বলছেন।
না করছি কমিনা! এক্ষণে তোমার প্রাণ হরণের প্রস্তাব গ্রহণ করছি। সত্য কথা বললে বাঁচলেও বাঁচতে পার। সালারের কণ্ঠে দৃঢ়তা।
সত্য কথা শুনতে চান। তবে শুনুন। আপনাদের সাম্রাজ্যের অবক্ষয় শুরু হয়েছে। আমাদের নারীদের ব্যবহার করছি-এ মর্মে আসমহীনতার ধিক্কার দিলেন শুনে নিন, আমরা একে আত্মসন্ত্রামহীনতা মনে করি না। ওই দুনারীকে আলাদা জিজ্ঞেস করে দেখুন। তারা সানন্দে আমাদের এই আন্দোলনে শরীক হয়েছে। ওদের কাউকেই আমরা জবরদস্তিমূলক শরীক করিনি। ধর্মের খাতিরে আমরা সবকিছুই কোরবান করতে পারি। আমরা এদেশ থেকে ইসলামকে উৎখাত করবই। আমরা না পারলেও আমাদের পরবর্তী বংশধর এ কাজ করবে। যে তুফান আমরা উছলে দিয়েছি তোমাদের গোটা সাম্রাজ্য মিলেও তাকে প্রতিহত করতে পারবে না। দৈহিক কোন আঘাত করার অভিপ্রায় নেই আমাদের। আঘাত করেছি তোমাদের মৌল বিশ্বাসের ভিত্তিমূলে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করেছে, করছে এবং করবে।
তোমরা কোনো সম্প্রদায় বিশেষকে চিহ্নিত করছ কি? সালার প্রশ্ন করেন। না। তিনি জবাব দেন, আমাদের সম্প্রদায়ের কোন ক্ষতি করতে পারবে না তোমরা। নিজেদের চড়কায় তেল দাও। তোমাদের বেশ কিছু ইমাম মসজিদে মসজিদে জুয়া তাফসীর দিচ্ছে। তারা জানতেও পারছে না যে, তারা যাদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে তারা সকলেই খ্রীস্টান। এখন থেকে এই তাফসীরই তোমরা মসজিদে মসজিদে গুনতে থাকবে। এর মূলে কাজ করছে ইহুদী ওলামা ও ইমাম। ছদ্মবেশে আর কিছু আমার মত খ্রীষ্টানরা। আবার তোমাকে বলে রাখছি…………তুমি তো সামান্য এক সালার। তোমার জীবনের সিংহভাগ কেটেছে রণাঙ্গনে। তুমি কোরআন পড়েছ হয়তবা কিন্তু এর মর্মোদ্ধার করতে পারনি। আমি এর মর্মোদ্ধার করেছি। কোরআন এক পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মুসলিম জাতি সত্যিই যদি এর মর্যোদ্ধারে সক্ষম হত তাহলে তাদের সাম্রাজ্য সীমা অস্ত-উদয়ের মধ্যবর্তী তামাম জনপদে বর্ধিত হত। কিন্তু ইহুদী-খ্রীস্টানদের সাফল্য বলতে পারতারা একে যাদু ও তাবিজ-কবজের সমন্বিত কিতাব বলে চালিয়ে দিতে পেরেছে। সর্বোপরি মতানৈক্য পয়দা করে এর এক এক আয়াতের হাজারো দুর্বোধ্য ব্যাখ্যায় রূপান্তরিত করেছে। থামলেন ইমাম সাহেব।
সালার উবাইদুল্লাহ শুনে চলেছেন নিশূপ নির্বিকার। এক্ষণে তার আর কিছু জিজ্ঞাসার জরুরত নেই। এরা ইসলামের বিকৃতি সাধন করে চলেছে। এরা বড় চৌকস। দুযুবতাঁকে কমান্ডারদের কাছে হাওয়ালা করে দিলেন। তারা ইমামের জবানবন্দীর বাইরে আরো কিছু তথথ্যাদ্ধারের চেষ্টা করলেন, কিন্তু তেমন কিছু উদ্ধার করা গেল না। উবাইদুল্লাহ শেষ প্রহরে কর্ডোভার উদ্দেশ্যে ছাউনি তুলে নিলেন। ইমাম ও যুবতাঁকে বন্দী করে নিয়ে চললেন।
***
রাতের বেলা উবাইদুল্লাহ কর্ডোভায় প্রবেশ করেন। কয়েদীদের জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হলো। সকালে ক্যাম্পে হাজির করার কথা বলা হলো। কর্ডোভায় উজির আব্দুল করিম, সালার আবদুর রউফ, মূসা ইবনে মূসা ও করন তাদের সংবর্ধনা জানান। আগে ভাগেই ফৌজি আগমনের সংবাদ দেয়া হয়েছিল। আমীরে নেই তাদের এ খবর দিয়েছিলেন।
উবাইদুল্লাহ ছিলেন খুবই ক্লান্ত। তিনি সালার ও উজিরকে নিরিবিলি স্থানে নিয়ে গেলেন। তিনি এদের জানালেন, কি করে তার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করা হয় এবং টহলদার বাহিনীর তাকে উদ্ধারের কাহিনীও শোনান। বলেন, প্রত্যাবর্তনের পথে বন্দী করা ইমাম ও দুযুবতীর কথাও। এরপর সংক্ষেপে ওই কাহিনী শুনিয়ে যান।