এই পরামর্শ আবদুল জব্বারের আনুকূল্যেই। তিনি এলোগেইছের সাথে প্রাণ দাঁড় করালেন। ঈসায়ীরা তাকে সম্রাট ঠাওরাল। তারও আশা ছিল, বিদ্রোহের ঝাণ্ডা কোনো মুসলমানের হাতে থাক। সে মুসলমান তিনি পেয়ে গেলেন।
***
ট্যাক্স আদায় করতে নয়া আমলা এলাকায় গেলে আবদুল জব্বারের প্রাক-সরকারী আমলারা তাকে অভিশাপ দিল এবং তাকে হৃদয় থেকে মুছে ফেলল। মাদ্রিদ থেকে নির্বাচিত হবার কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আবদুল জব্বার যে এলাকায় ছিলেন সেখানে বিদ্রোহীদের স্বাধীন রাজ্য কায়েমের খবর আসতে থাকে। কিন্তু মাদ্রিদের কেউই জানতেন না যে, কে এই সদ্য স্বাধীন রাজ্যের কর্ণধার।
নয়া আমলারা ট্যাক্স আদায় করতে মাদ্রিদের উপকণ্ঠে পৌঁছুলে পাহাড়ের অজ্ঞাত স্থান থেকে পশলাদার-তীর বৃষ্টিতে তাদের সকলেই মারা পড়ল। যারা প্রাণ ভয়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল তারাও বেশী দূর এগুতে পারল না। এদেরকে গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দেয়া হল।
আবদুল জব্বার ট্যাক্সের মাত্রা কমিয়ে দিলেন। এতে তিনি জনগণের অকুণ্ঠ প্রশংসা পেলেন। তিনি প্রাসাদ স্থানান্তর করলেন। কেউ জানল না তিনি কোথায় গায়েব হয়ে গেলেন। তিনি পাহাড়ী এলাকায় আত্মগোপন করলেন। খ্রীস্টান সন্ত্রাসীরা তারা তাকে অন্তরীণ করে রাখল।
এবার কর্ডোভার প্রাচীন গীর্জার ঘটনার অনেকদিন পর সেখানকার ফৌজি শক্তি আন্দায করতে সেখানে ছুটে গেল এলোগেইছ।
ওইদিন সালার ওবাইদুল্লাহ সসৈন্যে কর্ডোভায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন। এটা ছিল তার আখেরী যাত্রাবিরতি। যাত্রাছাউনির অদূরে ছিল আবাসিক এলাকা। সালার অত্র এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তার ওপর একটি প্রাণঘাতী হামলাও হয়েছিল। ছাউনির চারদিকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন গোয়েন্দা টিম। সাধারণ মানুষেরা ছদ্মরণে এই এলাকায় বিচরণ করত। এদের দুজন আবাসিক এলাকা ঘুরে এসে সালারকে জানাল, এখানে একটি মসজিদ আছে। এই মসজিদে অপরিচিত কে যেন কি দরস দেবে।
ওবাইদুল্লাহ বাদ এশা ছদ্মবেশে ওই মসজিদে গেলেন। বাদ নামায নামাযীরা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার স্থলে বসে ছিল। খবর নিয়ে জানা গেল, আজ ইমাম সাহেব বাদ নামায তকরীর রাখবেন।
আজ আপনাদেরকে জেহাদ বিষয়ে আলোকপাত করব। ইমাম সাহেব ওয়াজ শুরু করলেন।, মুসলিম জাতির জিন্দা থাকার মাকছাদ হচ্ছে, তারা কিছু একটা করবে। মসজিদে ইবাদত কিংবা রনাঙ্গনে লড়াইয়ের একটাই উদ্দেশ্যে ছওয়াব। পরকালে তাই প্রতিদান পাবে সকলে। তারপরেও কেন বাচ্চাদের এ এতীম ও নারীদের বিধবা বানানো? নামাযটাইতো এক ধরনের জেহাদ। রনাঙ্গন থেকে মসজিদ উত্তম। তিনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। দুতিনটি জাল হাদীস পড়লেন। বললেন, রাসূলে পাক (স)-এর জীবনের এমন অনেক সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন তিনি জেহাদ বিমুখ হয়েছেন এবং লাগাতার রাত জেগে নফল ইবাদতে লিপ্ত থেকেছেন। স্পেনে যে বাদশাহ একে ইসলামী রাজ্য বলছেন তিনি আপনাদেরকে ইসলামের নামে গোনাহে লিপ্ত করছেন। ইমাম বলে চলছেন, তিনি নিজে মদ্যপ ও উলঙ্গ নর্তকীর নৃত্য উপভোগকারী। মুসলমান কারো গোলাম নয়। আপনাদের থেকে যে ট্যাক্স উসুল করা হয় তার সবই তার রঙ্গরসের জলসায় খরচ হয়।
এভাবেই তিনি হুকুমতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাচ্ছিলেন। দলিলের বেলায়। কুরআন-হাদীসের রেফারেন্স টানছিলেন।
তার হৃদয়গ্রাহী তকরীর শুনে মুসল্লীরা বাড়ীমুখী হচ্ছিল। উবাইদুল্লাহ তার স্থানে উপবিষ্ট। সঙ্গে তার দুকমাণ্ডার। ইমাম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা বসে কেন?
আপনার তকরীরে এতটাই প্রভাবিত যে, কিছু প্রশ্ন মনে জাগছে, বললেন উবাইদুল্লাহ।
অবশ্যই! আপনারা কেথেকে? আর প্রশ্নই বা কি? ইমামের সপ্রশ্ন দৃষ্টি। আমরা ভিনদেশী, যাচ্ছি কর্ডোভা। জানতে ইচ্ছে, স্পেনের বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে আমাদের করণীয় কি এক্ষণে। আপনি বলেছেন, বাদশাহ গোনাহগার, আমাদের ঘামঝরা শ্ৰমার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করে রঙ্গরসের আসর জমাচ্ছে। আমার মনে হয় এ ধরনের শাসকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে তার কোষাগার লুণ্ঠন করা উচিত। উবাইদুল্লাহ বললেন।
আরেকদিন আসবেন। আমি আপনাদের প্রশ্নের জবাব দেব সেদিন। ইমাম বললেন।
ইমাম সাহেব বেরিয়ে গেলেন। উবাইদুল্লাহ ও তার দুকমান্ডার তার পিছু নেয়। আবাসিক এলাকায় চোরাগলিতে সে ঢুকলে উবাইদুল্লাহ তাকে দ্রুত অনুসরণ করেন। শেষ পর্যন্ত ইমাম সাহেব থমকে দাঁড়ান। উবাইদুল্লাহকে বলেন, ওরা দুজন আমার পিছু নিচ্ছে কেন? উবাইদুল্লাহ বলেন, ওরা আপনার পদাংক অনুসরণ করতে চায়। ইমাম চলছেন। উবাইদুল্লাহ তার পিছু নেন আবারো। ইমাম বসতির বাইরে বেরোলে উবাইদুল্লাহ তার পথ আগলে বলেন, ইমাম সাহেব! আপনার বাসা কোথায়?
আমি এই আবাসিক এলাকায়ই থাকি। এই একটু বাইরে যাচ্ছি জরুরী কাজে। বললেন ইমাম।
চলুন না! এক সাথেই যাওয়া যাক।
ইমাম এবার খানিক রাগ হয়ে গেলেন। সালারের ইশারায় কমান্ডার তলোয়ার বের করল। উভয়েই তলোয়ারের ডগা তার দুপাশে ছোঁয়াল। আমাদেরকে তোমার বাসায় নিয়ে চলো। এদিক সেদিক করেছ কি আমার সাথে ফৌজ আছে। এলাকার বাড়ী বাড়ী চিরুনী অভিযান চালাব। সে অবস্থায় ঘোড়ার পেছনে রশিদ্ধ করে আবাসিক এলাকার ঘোরাবোতোমাকে। বললেন সালার।