কিন্তু তা কি করে? প্রশ্ন এলোগেইছের।
সম্রাট লুই মন্ত্রী কেনেথের দিকে নজর বুলান। উতয়ে কেবল মুচকি হাসেন। মন্ত্রী বললেন, আমাদের প্রিয় দোস্ত। তুমি একজন আবদুর রহমানকে হত্যা করলে আরেক অবদুর রহমান ক্ষমতায় বসে হাজার খ্রীস্টানকে হত্যা করবে। সকলের প্রগাঢ় ধারণা জম্মাবে, খ্রীস্টানরাই আবদুর রহমানকে হত্যা করেছে। হয়ত শাসকের মৃত্যুর পর এমনও লোক ক্ষমতায় বসতে পারে, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে যে পাকা মুসলিম আর চারিত্রিক দুর্বলতার ঊর্ধ্বে। আবদুর রহমানের নারীর প্রতি এতই মোহ যে, বাঁদী থেকে এক মহিলাকে রাজরাণী করেছেন বলে শুনেছি। তার হেরেমে এমনও তুবন মোহিনী রয়েছে যাদেরকে তুমি হীরের টুকরো বলতে পার। এরা সবাই তারই রঙে রঙীন। তার হেরেম এমন এক নারীকে টোপ দেয়া যেতে পারে, যে তার ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। এমন এক নারীও ইতোমধ্যে আমি নির্বাচন করে ফেলছি।
সে মুসলমান, না খ্রীস্টান?
নামকাওয়াস্তে মুসলমান। মন্ত্রী কেনেথ বললেন, এ ধরনের মহিলাদের কোন ধর্মকর্ম থাকে না। তুমি হয়ত জানে, স্পেনে তুরুব নামে একটি জায়গীর রয়েছে। জায়গীরদার মারা গেছে। তার একটি মেয়ে আছে। সুলতানা তার নাম। জুবের রাণী হিসেবে তার পরিচয়। গুপ্তচর মারফত যতদূর জানতে পেরেছি, সে তুরুব-সীমান্ত সম্প্রসারণ করতে নিজস্ব রূপ-যৌবনকে সওদা বানিয়ে চলেছে। কথিত আছে, সে খুবই
চৌকস ও বুদ্ধিমতী। ভুবনমোহিনী শাহাদীরা পর্যন্ত তার অঙ্গুলী হেলনে নেচে থাকে। তার সৌম্যকান্তি অনিন্দ্য সুন্দর দেহবল্পরীত স্বর্গের অপ্সরা না বলে উপায় নেই। দ্বিতীয় আবদুর রহমানের নষর এখনও তার প্রতি পুড়েনি। তুমি যদি পরিকল্পনা মোতাবেক তোমার মিশন এগিয়ে নিতে চাও তাহলে তাকে বাগে এনে তুরুবের মত আরেকটি জায়গীর প্রাপ্তির টোপে তাকে দলভুক্ত করে কাজে লাগাতে পার। তার স্পর্শকাতর্ব দিকে এভাবে টোকা মারতে পারো যে, সামান্য ভূ-সম্পত্তির কন্যা হয়েও তুমি আজ রাণী হিসেবে পরিচিত। সে রাণী হতে চায়। আমরা তাকে রাণী বানাব…… কি পারবে তুমি এ কাজ করতে?
পারব না মানে! আলবৎ পারবো, সরাসরি তার সাথে কথা বলব। বললেন এলোগেইছ।
আমি এও শুনেছি, আবদুর রহমান সংগীতানুরাগী। বললেন সম্রাট লুই, তাঁর দরবারে যিরাব নামে জনৈক সংগীতজ্ঞ আছে। যদি সুলতানা তার সাথে একযোগে কাজ করতে পারে তাহলে কার্যসিদ্ধি ত্বরিৎ অর্জন করতে পার।
কার্যোদ্ধার যদি এতেই নিহিত মনে করেন তবে আমি তাই করব। ভবে তলোয়ারের আশ্রয় না নিয়ে লুকোচুরি খেলায় মশগুল হওয়াকে আমি কাপুরুষতা মনে করি।
আমাদের উদ্দেশ্য কি মিঃ এলোগেইছ? মন্ত্রী কেনেথ প্রশ্ন করেন, ইউরোপকে মুসলিম শূন্য করা-এই তো! আর খ্রস্টের শিক্ষা গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া। মুসলিম শক্তির ভিত্তিমূলে আঘাত করতে হবে। ওদের ধর্মোদ্দীপনার ভিত্তি নড়বড়ে করে দিতে হবে। আমাদের নারীরা এ কাজে মোক্ষম হাতিয়ার। তারা যে কোন ত্যাগ স্বীকারে অকুণ্ঠ। দুশমনকে কুপোকাত করতে যে কোন কাজ-ই জায়েজ। খোদা না করুন, এদের প্রতিহত করতে না পারলে সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন গোটা ইউরোপে মুসলিম পতাকা পতপত করে উড়বে।
ইসলামকে আমরা মুসলিম রাজা-বাদশাদের মাধ্যমেই কমযোর করে দেব। আমাদের যুবতী নারী ও সংগীতজ্ঞরা আবদুর রহমানের ওপর প্রভাব বিত্তার করতে পারলে ব্রেনহার্ট গোটা স্পেন সীমান্তে গুহামলা ও গেরিলা আক্রমণ শুরু করে দেবে। তুমি স্পেনে বিদ্রোহের শ্রগিরি উদগীরণ করো। এই মহতি অভিযানে দুমি নিঃসঙ্গ নও বন্ধু। তোমার সাথে ছায়ার মত আছি আমরাও। বললেন সম্রাট লুই। দরুবার ওদিনের মত মুলতবি ঘোষণা করা হল।
***
যে সময় ফ্রান্সের রাজপ্রাসাদে স্পেন পতনের নীল-নকশা প্রণয়ন করা হলি এর থেকে ১১৪বছর পূর্বে মাত্র হাজার সাতেক ফৌজ নিয়ে তারিক বিন যিয়াদ স্পেন উপকূলে নোর স্করেছিলেন। জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন তৎক্ষণাৎ তার রণতরীগুলো, যাতে কারো মনে প্রত্যাবর্তনের খেয়াল না চাপে। সমর ইতিহাসে সম্ভবত: এমন নজীর আর নেই। রণতরীতে আগুন লাগিয়ে ইবনে যিয়াদ যে বক্তব্য রেখেছিলেন, আরবী ইতিহাসের বইগুলোতে হুবহু সে শব্দগুলো লিপিবদ্ধ আছে।
তিনি বলেছিলেন,
শহীদী কাফেলার সাথীরা আমার! রণাঙ্গন থেকে পালানোর মূলযান জ্বালিয়ে দেয়া হল। তোমাদের অগ্রে দুশমন আর পশ্চাতে সুবিশাল ভূ-মধ্যসাগর। সততা, ধৈর্য ও সমই এক্ষণের সম্বল তোমাদের। স্পেন উপকূলে তোমরা ঠিক কৃপণের দস্তরখানে বসা এতিমের মত। সামান্যতম ভীরুতা নাস্তানাবুদ করে দেবে তোমাদের অস্তিত্ব। এমন এক বাহিনীর সম্মুখীন হতে যাচ্ছ তোমরা, যাদের ভাণ্ডারের অস্ত্র ও ফৌজ অফুরন্ত পক্ষান্তরে সামান্য কয়েকটি তলোয়ার-ই তোমাদের ভরসা। রসদ হাসিল করার জন্য রয়েছে ওদের হাজারো মাধ্যম। খোদা না করুন তোমরা অমিততেজা হিম্মত ও কালজয়ী বীরত্ব প্রদর্শন না করলে মুসলিম ঐতিহ্য ধূলি ধূসরিত হবার পাশাপাশি দুশমনের দুঃসাহসিকতায় প্রবৃদ্ধি আসবে। এক্ষণে ইজ্জত ও ইসলামের মান রক্ষার একমাত্র পন্থা হলো, যে দুশমনকে তোমরা মোকাবেলায় পাচ্ছে তাদের ওপর টর্নেডোর বিভীষিকা বিস্তার করে ওদের শক্তিবাহু দুর্বল করে দিও।