বলতে হবে, তোমাদের এই চক্ৰজাল কতদূর বিস্তার লাভ করেছে? সেনাপতি বললেন, আর এখানকার মুসলমানদের কারা কারা তোমাদের দলের হয়ে কাজ করছে-বলতে হবে তাও।
বলবো না। আমরা মা মেরীর নামে কসম খেয়ে এসেছি, জীবন গেলেও রহস্য ফাঁস করব না। আমরা আত্মোৎসর্গী বাহিনী-বলতে পারেন আত্মঘাতী। ধর্মের জন্য আমরা মরতে রাজি। স্যালাস বলল।
অনুসন্ধানী বাহিনীর উপ-সেনাপতি তলোয়ার কোষমুক্ত করে চোখ রাঙিয়ে বললেন, আমাদের প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতেই হবে।
সালারে আলা উবাইদুল্লাহ এদের মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন। বললেন,
ধর্মের জন্য জানযি রাখায় এ লোককে মোৰারকবাদ। আমি ওর ওপর সামান্যও কঠোরতা প্রদর্শনের বিরোধী, ………. স্যালাস। তোমার গোপন তথ্যকে গোপন রাখার পূর্ণ অধিকার দিলাম। এমন কি তোমাকে মুক্তও করে দিলাম। এতগুলো মানুষের দ্বারা নিরত্র এক লোককে হত্যায় কোন প্রকার বীরত্ব দেখছি না আমি। যাও, ফ্রান্স সম্রাটকে গিয়ে বললো, আমাকে গ্রেফতার করতে হলে যেন সে নিজেই আসে। তুমি ধর্মের নামে সুইসাইড বাহিনী গড়েছ আর এদিকে সালার থেকে সামান্য এক সেপাই পর্যন্ত ধর্মের প্রতি অনুরাগী হয়ে সুইসাইড স্কোয়াডে নাম লিখিয়েছ। যাও স্যালাস! ওই ভীরু নপুংসককে বলবে, নিঃসঙ্গ কোন কাফেরের উপর মুসলিম সেনাপতিরা হাত উঠায় না। আর শোন তোমার এক সাথী এইতো কিছুক্ষণ পূর্বে শ্লেষমিশ্রিত কষ্টে আমাকে বলেছিল, তোমার রাসূল (আ)-কে ডাকো। পারলে তোমাকে উদ্ধার করুক। দেখলে! আমার রাসূল আমাকে কি করে উদ্ধার করলেন? বলে তিনি সেস্থানে এসে দাঁড়ালেন যেখানে তার দুদেহরক্ষী দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় বন্দী খ্রিস্টান বলল, আপনি আমার সাথে প্রতারণা না করলে দুএকটা কথা বলতে চাই।
না, কোন প্রকার প্রতারণা করার ইচ্ছে নেই দোস্ত আমার! আমি অভয় দিচ্ছি যা বলার অকপটেই বলে ফেল। যদি তুমি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালও দাও তাহলেও তুমি আযাদ। সেনাপতি বললেন।
আমি নির্ভীকচিত্তেই বলছি সালারে আলা! তবে আপনাকে গাল দেব না। সুইসাইড বাহিনী জিহ্বা নয় সর্বদা তলোয়ারের ভাষায়-ই কথা বলে থাকে। আমি আপনার উদারতার সামান্য বদলা দিতে চাই। আপনি জানতে চেয়েছেন, কোন কোন মুসলমান আমাদের দলে ভিড়েছে? এ প্রশ্নের জনাব দিতে আমি অপারগ। কেননা এর উত্তর আমার কাছে নেই। তবে এতটুকু বলতে চাচ্ছি, আপনাদের শাসন ক্ষমতায় ঘুণ ধরে গেছে। বোধ হয় খুব বেশিদিন আপনারা এদেশ শাসন করতে পারবেন না। স্পেনের মূল শত্রু এক্ষণে আপনাদের শাসকবর্গই। এটা গোপনীয় কোন তথ্য নয়। খোদ নিজেরাই যেটা নিত্য-নৈমিত্তিক দেখে চলেছেন। আপনারা এই ঘুণ দূর করতে পারবেন কি? পারবেন না। হাজারো খ্রিস্টান ইসলাম গ্রহণ করেছে। আরব থেকে এসেছে হাজারো মুসলমান, যাদেরকে আপনারা পাকা মুসলমান ঠাওরান। ওরা নামকাওয়াস্তের মুসলিম। যে কাজ জিহ্বা দিয়ে চলে তলোয়ার দিয়ে চলে না সেটা। যে জাতি আপনার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনে তাদের তলোয়ার হামেশাই ভোতা প্রমাণিত হয়।
কাবার রবের কসম! তুমি পেশাদার ভাড়াটে খুনী নও। তোমার কথায় বিজ্ঞতা প্রকাশ পাচ্ছে। প্রশংসা করছি তোমার চিন্তার গভীরতাকে। উবাইদুল্লাহ বললেন।
আপনার ধর্মোদ্দীপনা দেখে আমি বিমূঢ় হয়ে গেছি। এই উদ্দীপনার সামনে আমরা শতাব্দীকাল ধরে দুর্বল প্রমাণিত হয়ে আসছি। স্যালাস বলল। ( আমি দীপ্ত কণ্ঠে বলতে চাই, ষড়যন্ত্র করে তোমর কামিয়াব হতে পারবে না কোনদিনও।
আমাদের ওস্তাদ বলেছেন, কোন জাতিকে একদিন কিংবা একরাতে খতম করা যায় না। আপনার অভূতপূর্ব ব্যবহার-ই আমাকে এসব বাক্য ব্যয়ে উদ্বুদ্ধ করছে। শত্রু পক্ষকে পতনের পথ দেখাও-এতেই তোমাদের কামিয়াবি। ভবিষ্যৎ বংশধরকে বলে যাবে এ পথকে তোমরা আঁকড়ে ধরবে। শিশুদের বলবে তারা যেন পূর্বসূরিদেরদের পদাংক অনুসরণ করে জান কোরবান করে। ওদের কানে দেশ-জাতির জন্য জীবনো সর্গী অজানা বীরদের কাহিনী শোনাও- এরাই আমাদের রেখে যাওয়া কাজ করে যাবে। আর এর ফলশ্রুতিতে দেখবে, দুশমন একদিন এমনিতেই নিঃশেষ হয়ে যাবে, যেভাবে সকালের আগমনে কুয়াশা বিদূরিত হয়। আমরা আপনাদের অবক্ষয় ও পতনের চোরাবালিতে আছড়ে ফেলার নীল নকশা এঁকে যাচ্ছি। স্যালাস বলল।
আমাদের ফৌজ সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? আমাদের ফৌজদেরও কি তোমরা অবক্ষয়ের পথ ধরাতে চাও? ওদেরকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে কি?
যে জাতির বাদশাহ ক্ষমতাসন পাকাঁপোক্ত করার জন্য হেন কাজ নেই করে না, যে তার দুশমনের সাথে মিত্রতা স্থাপন করে, যে সরকার গান-বাজনা আর নারীদের অতিরিক্ত মূল্যায়ন করে, সে জাতির ফৌজ যতই দুর্ধর্ষ ও প্রভাবশালী হোক না কেন তারা নিৰ্মা প্রমাণিত হতে বাধ্য। আপনাদের ফৌজদের অবস্থাও এমনটা হবে। সরকার তার আইন-শৃখলা রক্ষা বাহিনীর চিন্তার সাথে ঐকমত্য পোষণ না করে তাদের শিকড় কাটলে সে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। দাঁড়ালেও গোলাম হিসেবে, স্বাধীন হিসেবে নয়।
সালারে আলা! লোকটা ভাড়াটে খুনী নয় মনে হচ্ছে জাদরেল নেতা। একে জীবিত রাখা রীতিমত ভৌতিক বৈতো নয়। ওকে হত্যা করছেন না কেন? অনুসন্ধানী বাহিনীর প্রধান বললেন না।
সালারে আলার চোখে স্যালাসের কথাগুলো ভেসে বেড়ায়। ঠোঁটে প্রশান্ত হাসি। তিনি বলেন, ওর হত্যা আমার জন্য অবধারিত নয়। বুদ্ধিমান দুশমনকে আমি মূল্যায়ন করি।