এনামস্বরূপ এদেরকে হেরেমের সুন্দরী নারীকে দিতে পারি। এই এনামের বিনিময় ওরা আমাদের গোলাম হবে। বলে সুলতানা আবারো আড়ি পাতলেন। উবাইদুল্লাহ বলে যাচ্ছে আর সুলতান শুনে যাচ্ছে। তার চেহারার রং-এ এসেছে পরিবর্তন।
প্যাম্পোলনায় ফ্রান্সীয় কাউন্ট আবলুস ও আইসেন এয়ার্স-এর ফৌজ হামলা করেছে। আপনাকে বলা হয়েছে এ ফৌজ পিছপা হতে গিয়ে সংকীর্ণ উপত্যকায় মুসিবতের সম্মুখীন হয়েছে। ওরা ওই সংকীর্ণ গিরিপথে চরম মার খেয়েছে। বেশুমার ফৌজ বন্দী হয়েছে। এক্ষণে বার্সিলোনা আক্রান্ত হবার সম্ভবনা।
তোমরা কি মনে করছ? প্রথমে জেনে নাও, এই সম্ভাবনার ভিত্তি কতটুকু? ভুলও হতে পারে। বললেন আবদুর রহমান
আমিও হাজেব আপনার কমান্ডে কাজ করতে পারলে গৌরববোধ করব। দূত রওয়ানা করে দিয়ে আমরা সেনাপতি ও উজীর হিসেবে এখানে বসে থাকব আর অধীনরা আমাদের সালাম করবে-এই হয় কি? আমীরে মোহতারাম আমরা আমাদের দায়িত্বে এতটুকু শিথিলতা আনিনি। দুশমনের মোকাবেলায় আপনি এমন ঔদাসীন্য মনোভাব দেখালে এ মুহূর্তে ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে রক্ষায় যা করার দরকার, আপনার নির্দেশ উপেক্ষা করে হলেও তা আমরা করে যাব। আপনার গদীরক্ষার জন্য আমাদের ব্যবহার করতে যাবেন না। দুশমন সে দুশমনই। ওদের মিত্রতাও শক্রতা। আমরা সীমান্তে ফৌজ পাঠাতে চাই। এদের নেতৃত্ব থাকবে আমার হাতে। আমরা এক্ষণে যা চাইব তা দিতে হবে আপনাকে। সেনাপতি বললেন।
তোমাদেরকে সকালে বলব। খানিক ভাবতে দাও। আবদুর রহমান বললেন। সকালে আমরা মার্চ করব। অর্ধেকটা ফৌজ কর্ডোভায় থাকবে। এদের নেতৃত্বভার থাকবে হাজেবের হাতে। আপনার অজানা নয়, হাজেও একজন দক্ষ সেনানায়ক। আমার অনুপস্থিতিতে বিদ্রোহ হলে হাজেবই এদের দমন করবেন। উবাইদুল্লাহ বললেন।
আমি আমীরে মুহতারামকে জানিয়ে দিতে চাই আমার কর্মকাণ্ড আভিজাত্যপূর্ণ হবে না। আমি সেই বিষবৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলব যারা উপর দিয়ে মুসলমান সেজে তলে, তলে খ্রীস্টানদের মদদ দিয়ে চলেছে। ওদের রক্তে গোসল করে লাশ পুড়ে ছাই বানাব। হাজেব বললেন,
সুলতানা তখন শার্সিতে আড়িপাতা। তার কানে আবদুর রহমানের আওয়াজ এলো, তোমরা প্ল্যান-প্রোগ্রাম তৈরী কর। যেখানে যখন যত সৈন্য প্রয়োজন পাঠাও।
উবাইদুল্লাহ ও হাজেব বেরিয়ে গেলেন।
ওরা চলে গেল। যিরা সুলতানাকে বলল, খেয়াল রেখো সুলতানা! বাদশাহ যেন টের না পান– আমরা তার এই ফয়সালায় ক্ষুব্ধ। কথা আমাকে বলতে দিও।…. কাল এলোগেইছকে বিস্তারিত রিপোর্ট জানাবে। সে-ই ভাল বুঝবে-এ অবস্থায় করণীয় কি।
আজকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত দ্বারা এতটুকু অনুধাবন করা গেল, আমাদের প্রভাব আবদুর রহমানের ওপর পুরোপুরি পড়েনি। তার ভেতরের সিংহপুরুষ এখনও নিস্তেজ হয়ে যায়নি। সুলতানা বললেন।
আবদুর রহমান তাদের ডেকে পাঠালেন। ওরা ফওরান এসে পড়ল। সুলতানা জিজ্ঞেস করলেন, সালার ও উজীর কেন এসেছিলেন? আবদুর রহমান তাদেরকে সব কথা খুলে বললেন।
জিন্দাবাদ স্পেনরাজ! যিরাব বলল, সৈন্য মার্চ করতে বলে আপনি বিজ্ঞতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। কাফেরদের কেটে শত টুকরা করা দরকার। ইতিহাসে আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সুলতানা আবদুর রহমানের গাঁ ঘেষে গলায় হাত রেখে সোহাগ করে বললেন, স্পেনরাজ মর্দে-মুমিন ও মর্দে মুজাহিদ। আপনার পৌরুষ ও দুঃসাহসিকতা-ই আমাকে হেরেমে এনেছে। আমি আপনার মত বীর মুসলিমের মেয়ে। আরবী বংশোদ্ভূত ঘোড়ায় চেপে ময়দানে নামতে ইচ্ছে করে।
তুম যাবে কেন? সুলতানাকে কোলে চেপে আবদুর রহমান বলেন, তোমার জন্য আমি আমার গোটা ফৌজ ফরমান করতে পারি।
স্পেনরাজ আরেক বার বাস্তব দুনিয়া থেকে ছিটকে পড়লেন।
***
যারা ধর্ম ও দেশের প্রতি মুহাব্বত রাখেন তারা যেমন মিত্রদের চেনেন তেমনি চেনে শত্রুদের। নিশ্চিন্তে তারা কখনও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। ইউরোপিয়ানদের বেলায় আমরা এমনটা দেখতে পাই। তাদের সীমার ওপর হেলালী নিশান প্রোথিত হয়েছিল। তারা শংকা করছিল, ইসলামের অগ্রযাত্রা এখনই রোধ করা না গেলে এটা গোটা ইউরোপ দখল করে তবেই ক্ষান্ত হবে। সুত্রং তারা নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিল। সূচনাতেই তাই তারা ইউরোপের প্রবেশদ্বার স্পেনে হামলা শানাল ও সীমান্তবর্তী বসতি ছিন্ন ভিন্ন করে চলল। সীমান্তবর্তী মুসলিম ফৌজ এদের যথাসাধ্য প্রতিরোধ করে যেতে লাগল। এতে মুসলিম ফৌজে ক্রমশঃই ঘাটতি দেখা দিল ও নয়া ফৌজ ভর্তি করা শুরু হল।
ইউরোপিয়ানদের যখন এই অবস্থা তখন মুসলিম শাসকবর্গ নিশ্চিত প্রাসাদে দাবার খুঁটি চালছিল। পরিণতিতে স্পেনের সীমানা সম্প্রসারিত হওয়ার ক্ষেত্রে আরো সংকুচিত হতে লাগল। কুদরত প্রতি শতাব্দীতে স্বাধীনচেতা মর্দে মুজাহিদ সৃষ্টি করলেন যদরুন তারা আট শতাব্দী পর্যন্ত স্পেনকে মুসলিম শাসনে রাখতে পেরেছিলেন। স্বাধীনচেতা মনোভাবের লোক যেহেতু বাদশাহ আমীর কিংবা খলীফাগণ ছিলেন না সেহেতু এক সময় এই মনোভাবেও চিড় ধরল, কাজেই এক সময় হাল ধরার মত কাণ্ডারীও ফুরিয়ে গেল।
স্বাধীনচেতা এমন এক মর্দে মুজাহিদ ছিলেন উবাইদুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ। তিনি ভ্যালেন্সিয়ার অধিবাসী। আরেকজন হাজেব আবদুল করীম যিনি তার অধীনদের নিয়ে বিলাসী শাসকদের বিরুদ্ধে আপনার দায়িত্ব পালন করেছেন আমৃত্যু।