৮। কুসকুসু (ফরাসী ভাষায় কাউস-কাউস) হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার একটি সাধারণ ফসল জাতীয় খাদ্য-মোটাভাবে পেষা ময়দা সিদ্ধ করে তৈরি হয় এবং মিঠা চাটনি সহযোগে খাওয়া হয়।
৯। জাঘাতি প্রথম সনাক্ত করেন দেলফসে দিওরার সঙ্গে। লিপার্ট এটাকে বার্থ তিউর সংঘা নামে পরিচিত গ্রামের সঙ্গে অভিন্ন বলে দেখিয়েছেন। স্থানটি বা-সিকুননু বা বাকিকুতেনুর দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত (বার্থের ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে সম্পাদিত, ১৮৫৭-৭, ৫,৪৮১; Mit sen. Or. St. III৩, ১৯৮-৯)।
১০। ওয়াংগারা (ওয়ানকুর, ওয়েবুর হচ্ছে একটি নাম। এটা পিউলস্ (ফুলানি) এবং সংহে সন্নিকে বলে অভিহিত লোকদের দিয়েছেন (পর্তুগীজগণ এদের বলেছেন সারাকুলে), এবং বিস্তৃতভাবে সনিকে এবং ম্যালিনকে উভয় জাতিকে বুঝায়। এভাবে এটা আধুনিক প্রচলিত শব্দ ম্যাডে কিম্বা ম্যানডিংসোর সমতুল্য হয়েছে। এটা প্রকৃতপক্ষে ম্যালিকের নাম। ম্যালিকে এবং সনিকে একই পরিবারের অন্তর্গত। পরবর্তীটি উত্তর অঞ্চলের এবং পূর্বোক্তটি মধ্যবর্তী গুপের (দেলাফুঁসে, এইচ, এস, এন, ১ম খণ্ড, ১১৪–৫, ১২২-৭)।
১১। ইবাদাইত হচ্ছে ইসলামের প্রথম শতাব্দীর একটি বিশেষ গোড়া সম্প্রদায় এরা বিরোধী বা খারিজি নামে পরিচিত। একমাত্র সম্প্রদায়গুলি দেখা যায় ওমান, জাঞ্জিবার, দক্ষিণ, আজেরিয়ার মজার জেলায়, ঘার দাইয়া প্রভৃতি স্থানে। এরা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতীবান বলে বিখ্যাত। কিন্তু পুরনো মতের মুসলিম সাধারন থেকে তারা বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করেন বা জনসাধারণই তাদের থেকে আলাদা থাকে। অথবা গ্রন্থের এ স্থানে যে সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা হয়তো মুজাবাইট সওদাগরদের একটি ঘাটি ছিল (M.S. O.S., Log, Cit. ও এখানে দ্রষ্টব্য)।
১২। কারসাধুকে দেলাফুঁসে কারা-সাখু বলে ধরে নিয়েছেন, অর্থাৎ কান্নারা বাজার, “কঙ্গোকুর বর্তমান স্থানের নিকটে এবং এর সম্মুখে। নাইজারের বাম তীরে এবং কারার কয়েক মাইল উত্তরে।”
১৩। গ্রন্থের এ অংশে উল্লেখিত কাবারা তিমবুকতুর নিকবর্তী সেই নামের সুপরিচিত বন্দর বোধ হয় নয়। দেলাফসে এটাকে জাফারাবার (দিয়াফারাবে) একটি নাম বলে মনে করেন।
জাঘা কিম্বা জাঘে, অধিক শুদ্ধভাবে বলা হয় জাকা বা জাগা (দিয়াগা) এটা বলা হয় তারুর রাজ্যের আদিম রাজধানীর নামানুসারে। এটা ছিল একটি বৃহৎ জেলা। এর অবস্থিতি নাইজারের উত্তর-পশ্চিম শাখার তীরে এবং জাফারাবার উত্তরে অর্ধেক দিনের সফর। এগারো শতকের প্রথম দিকে সুদানে ইসলাম প্রচারের ভিত্তিস্থল হচ্ছে এই তারুর (মারকুয়াট, বেনিন্ স্যামসাং, ভূমিকা, ১৫০-১, ১৫৪, ২৪১)।
১৪। মূলী খুব সম্ভব সেই জেলাটি পরে যাকে বলা হতো মুরি, নিয়ামের কাছে নাইজার নদীর বাম দিকে অবস্থিত। এর বিপরীত তীরে অবস্থিত কুমবুরি) সম্ভবতঃ ইব্নে বতুতার কানবানি)।
১৫। ইব্নে বতুতার লিমিউনকে দেলাফুঁসে এবং মারকোয়ার্ট কেবে (কিবা) জেলার অধিবাসীদের নাম বলে গ্রহণ করেছেন। কুলির মতের সমর্থনে অনেক কিছু বলবার আছে। যেমন অন্য সব আরবী ভৌগলিকের উল্লেখিত সামলামের সঙ্গে লিমিসদের সামঞ্জস্য রয়েছে। ভৌগলিক বারী এদের বলতেন দাদম এবং এদের স্থান নির্দেশ করেছেন গাওগাওর নিম্নে নাইজারের তীরে। শেষোক্ত শব্দটির অর্থ আদমশোর-এ কোনো সুনির্দিষ্ট উপজাতির নাম নয়। ফুলবে ভাষায় এটা হয়েছিল নিয়াম-নিয়াম (ফুলবের নিয়াম=খাওয়া), এটাই বিচিত্রভাবে আরবী রূপে পেয়েছে নাম-নাম এবং ইয়াম-ইয়াম শব্দে। এই শব্দটি আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে উভয় আকারে প্রচলিত ছিল। ইব্নে বতুতা শুনেছেন “লিমিসূদের দেশের ইউফি থেকে সোফালায় স্বর্ণচূর্ণ আনা হতো” (পরবর্তী টীকা দ্রষ্টব্য) সোফালা থেকে ইউফি এক মাসের পথ। এই আন্তমহাদেশীয় বাণিজ্য সম্পর্কে নিম্নের ৩৩ টীকা দ্রষ্টব্য। নিয়াম-নিয়াম শব্দটি অবশেষে বেইজিয়ান কঙ্গোর একটি আদমখোর উপজাতির নামরূপে বৈশিষ্ট্যপ্রাপ্ত হয়েছিল। ইতিমধ্যে এটা ভূমধ্যসাগরীয় কে-কাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। একজন আলবেনিয়ান অশ্বপালকের কাছে এ, ডব্লিউ হ্যাঁজাক শুনছেন, সে দেখতে পেয়েছে একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের রক্তশোষক জীব-সেটার নাম নিয়ামূ-নিয়াম সোই। (১) এই জীবটি যকৃৎ খেতে খুব ভালোবাসে, (২) এর দাঁত গাধার দাঁতের মতো, (৩) বৃহৎ পা” (কুলি, ১১২ f.; হার্টম্যান; in M.S.0.S. XV৩ ১৭২; হ্যাঁজ্বলাক্, লোটার্স অন্ রিলিজন এন্ড ফোলুর, ৯)।
১৬। নিউপের সঙ্গে কুলির (৯৩ পৃঃ) ইউফির যে একই স্থানে বলে নির্ধারণ যার অবস্থিত জেব্বা এবং লোকোজার মধ্যবর্তী নাইজারের বাম তীরে সেটা পরবর্তী সমস্ত লোকে স্বীকার করেছেন।
১৭। নাইজারকে লাইনের সঙ্গে যুক্ত করে (সম্ভবতঃ বাহার আল-গাঁজালের দিক দিয়ে) ইব্নে বতুতা অন্ততঃ দুইটি প্রচলিত ভুল মতের স্বল্প ভ্রমাত্মকটি গ্রহণ করেছেন-এ ভুল মত। প্রচলিত ছিল মুঙ্গো পার্ক আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে। লিও আফ্রিকানাস এবং আরো অনেক প্রাথমিক ভৌগলিকগণ ইদ্রিসির অনুসরণে মনে করতেন নাইজার পশ্চিম দিকে প্রবাহিত এবং সোনেগাল নদীর সঙ্গে এটাকে অভেদরূপে গ্রহণ করেছিলেন।
১৮। ১২৭২ এবং ১৩২৩ শতকের মাঝখানে মিশরের সুলতানগণ অনেকবার ক্রিশ্চান রাজ্য নুবিয়া আক্রমণ করেছিলেন। এ সব অভিযান মিশরের সুবিধার পক্ষে কোনো কিছু সাফল্যজনক ছিল না। এতে করে নুবিয়ান রাজ্য শীঘ্রই ভেঙ্গে পড়ে। এবং চৌদ্দ শতাব্দীর প্রথম দিকে আরব উপজাতি কাজ বা কাজ-আদ-দৌলার হাতে ডঙ্গোলা পতিত হয়–এরা পূর্বে ছিল আস্ওয়ানের উত্তরাধিকারী আমির। ইব্নে বতুতা যাকে ইব্নে কাজ, আদ-দীন নামে অভিহিত করেছে-তিনি যদিও নিজে নব-দীক্ষিত নন-তথাপি তাকে নৃবিয়ার প্রথম মুসলিম নরপতি বলে গণনা করা যায়। (মারকোয়ার্ট, ২৫২-৪)।