• আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি
বৃহস্পতিবার, মে 15, 2025
  • Login
BnBoi.Com
No Result
View All Result
No Result
View All Result
BnBoi.Com
No Result
View All Result

কল্পগল্প সমগ্র – এইচ জি ওয়েলস

খুবই ঝুঁকি নিয়েছিলেন, হীরের কারিগর একটু থামতেই বলেছিলাম আমি।

ঠিক কথা। ঝুঁকি না নিলে কিছু পাওয়াও যায় না। বিস্ফোরণ ঘটেছিল গান ব্যারেলেও। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল ঘরের সব কটা জানলা আর বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। তা হোক। ফলও পেলাম কিছু। হীরের কিছু গুড়ো। গলিত উপাদান-মিশ্রণকে সঠিক চাপের মধ্যে কীভাবে রাখা যায়, এই সমস্যা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মাথায় এসে গেল সমাধানটা। প্যারিসে দব্রে গবেষণা করেছিলেন পেঁচিয়ে-আঁটা ইস্পাতের চোঙার মধ্যে ডিনামাইট ফাটিয়ে। সাংঘাতিক সেই বিস্ফোরণের ধাক্কায় কঠিন পাথর কাদা-কাদা হয়ে গিয়েছিল–চোঙা কিন্তু ফেটে উড়ে যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় হীরের খনিতে যেরকম কাদা দেখা যায়–এ কাদাও প্রায় সেইরকমই। পুঁজিপাটা তখন শূন্য। তা সত্ত্বেও অতি কষ্টে ওর নকশা অনুযায়ী ইস্পাতের চোঙা জোগাড় করলাম। বিস্ফোরক আর আমার যাবতীয় উপাদান ঠাসলাম তার ভেতর। গনগনে চুল্লি জ্বালোম ঘরের মধ্যে। চোঙা চাপিয়ে দিলাম জ্বলন্ত চুল্লিতে। দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে পড়লাম হাওয়া খেতে।

হো হো করে হেসে উঠেছিলাম বলার ভঙ্গিমা শুনে। এমন সহজভাবে শেষ কথাটা বলে গেল যেন আগুনের আঁচে বিস্ফোরক ভরতি সিলিন্ডার চাপিয়ে হাওয়া খেতে যাওয়াটা নিত্যনৈমিত্তিক কাজ–যেন কোনও ব্যাপারই নয়–রান্না চাপিয়ে গেল যেন কড়ায়।

হাসতে হাসতেই বলেছিলাম, সে কী! বাড়ি উড়ে যাবে যে! আর কেউ ছিল না বাড়িতে?

ছিল বইকী। নিচের তলায় ফলওয়ালা এক ফ্যামিলি, পাশের ঘরে চিঠি দেখিয়ে ভিক্ষে চাওয়ার একটি ভিখিরি, ওপরতলায় দুজন ফুলওয়ালি। ব্যাপারটা হঠকারিতা সন্দেহ নেই। হয়তো তখন কেউ কেউ বাড়ির বাইরেও গিয়েছিল।

ফিরে এসে দেখি, যেখানকার জিনিস সেখানেই রয়েছে–তেতে সাদা অঙ্গারের ওপর রাখা চোঙা ফেটে উড়ে যায়নি। বিস্ফোরক বাড়ি উড়িয়ে দেয়নি–সিলিন্ডার অটুট। সমস্যায় পড়লাম তারপরেই, বড় জবর সমস্যা। জানেন তো, ক্রিস্টালকে দানা বাঁধতে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট সময় দেওয়া দরকার। হড়বড় করলে ক্রিস্টাল হবে আকারে ছোট, অনেকক্ষণ ফেলে রাখলে তবেই হবে বড়। ঠিক করলাম, আগুনের আঁচে দুবছর ফেলে রাখব চোঙা– আঁচ কমাব একটু একটু করে। পকেট তখন গড়ের মাঠ-কানাকড়িও নেই। পেটে খাবার নেই, ঘরে কয়লা নেই–অথচ দু-দুটো বছর আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। সেই সঙ্গে জুটিয়ে যেতে হবে ঘরের ভাড়া।

পয়সার ধান্দায় হরেকরকম কাজ করতে হয়েছে এই সময়ে। লম্বা ফিরিস্তি। সব বলতে চাই না। এদিকে হীরে তৈরি হয়ে চলেছে, ওদিকে কখনও খবরের কাগজ ফিরি করছি, কখনও ঘোড়া ধরে দাঁড়িয়ে আছি, কখনও গাড়ির দরজা খুলে ধরে হাত পাতছি, বেশ কয়েক হপ্তা খামের ওপর ঠিকানা লিখে পেটের খাবার আর চুল্লির কয়লা কিনেছি। কবরখানায় মাটি নিয়ে যাওয়ার কাজও করেছি হাতগাড়ি ঠেলে–রাস্তায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে খদ্দের ডাকতাম। একবার তো ঝাড়া একটা হপ্তা কোনও কাজ না পেয়ে স্রেফ ভিক্ষে করে কাটিয়েছি। সেই সময়ে একজনের ছপেনি ছুঁড়ে দেওয়ার ঘটনাটা জীবনে ভুলব না। দাক্ষিণ্যের অহংকার যে কী জিনিস, তা সেদিন হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম। প্রতিটি পাইপয়সা। খরচ করতাম আগে কয়লা কিনতে খিদে চেপে রেখে।

শেষকালে ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন। তিন হপ্তা আগে আগুন নিবিয়ে দিলাম, আর কয়লা দিলাম না। সিলিন্ডার টেনে এনে প্যাঁচ খুলতে গিয়ে হাত ঝলসে ফেললাম। বাটালি দিয়ে চেঁচে ভেতর থেকে বার করলাম ঝুরঝুরে লাভার মতো বস্তু। লোহার পাতে রেখে গুঁড়ালাম হাতুড়ি মেরে, পেলাম তিনটে বড় আর পাঁচটা ছোট হীরে। মেঝের ওপর বসে যখন হাতুড়ি পিটছি, তখন দরজা ফাঁক করে উঁকি মেরে মাতাল প্রতিবেশী নোংরা হেসে বলেছিল, রত্ন তৈরি হচ্ছে বুঝি? মদে চুরচুর অবস্থা সত্ত্বেও ব্যাপারটা বার করে নিয়েছিলাম পেট থেকে। শয়তানটা থানায় খবর দিয়ে এসেছে। পুলিশ এল বলে। লাফিয়ে কলার খামচে ধরে ঘুসি মেরে তাকে শুইয়ে দিয়ে, হীরেগুলো শুধু পকেটে পুরে হাওয়া গেলাম তৎক্ষণাৎ। পুলিশ এল বলে–অ্যানার্কিস্ট পাকড়াও করতে পারলে আর কিছু যারা চায় না, তাদের কোনওরকম সুযোগ দেওয়াও যায় না। সেইদিনই সন্ধের খবরের কাগজে আমার আস্তানাকে কেন্টিস বোমার কারখানা বলা হয়েছিল ফলাও করে। এখন কী ফাঁপরে পড়েছি দেখুন। এমন মায়া পড়ে গেছে হীরে কটার ওপর, পয়সার বিনিময়েও কাছছাড়া করতে প্রাণ চায় না। কিন্তু তা-ও এখন করতে হচ্ছে, পেটের জ্বালা এমন জ্বালা। কিন্তু যেখানেই যাই, সেখানেই সন্দেহ, সেখানেই জোচ্চুরি, সেখানেই গা-জোয়ারি। খুব নামকরা এক জহুরির দোকানে গেলাম। আমাকে বসতে বলে ফিসফিস করে কেরানিকে হুকুম দিলে পুলিশ ডেকে আনতে। আর কি বসি সেখানে? চোরাই মাল কেনাবেচা করে এমন একজনের কাছে গিয়ে পড়লাম আরও ঝামেলায়। একটা হীরে হাতে নিয়েই হাঁকিয়ে দিলে আমাকে। সে কী হুমকি! ফের যদি হীরের জন্যে ওমুখো হই তো আদালতে টেনে নিয়ে যাবে। কয়েক লাখ পাউন্ড দামের হীরে বোঝাই থলি গলায় ঝুলিয়ে টো-টো করছি রাস্তায় না আছে পেটে খাবার, না আছে মাথা গোঁজবার আস্তানা। আপনাকে দেখেই কী জানি কেন মনে হল, আর যা-ই করন, ফাঁসিয়ে অন্তত দেবেন না। কাউকে যা বলিনি, তার সবই তা-ই বললাম আপনাকে। খুব কষ্টে দিন কাটছে। আপনার মুখ দেখে পছন্দ হয়েছে বলেই প্রাণ খুলে বলবার ভরসা পেলাম। এবার বলুন, কী করবেন।

Page 106 of 107
Prev1...105106107Next
Previous Post

সন্ধিক্ষণ : প্রতিকূলতা জয়ের লক্ষ্যে যাত্রা – এ পি জে আবদুল কালাম

Next Post

টাইম মেশিন – এইচ জি ওয়েলস

Next Post

টাইম মেশিন - এইচ জি ওয়েলস

দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস - এইচ জি ওয়েলস

মন্তব্য করুন জবাব বাতিল

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

সাম্প্রতিক প্রকাশনাসমূহ

  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৫: ভূমিকম্প – শামসুদ্দীন নওয়াব
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৮: বিভীষিকার প্রহর – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: বড়দিনের ছুটি – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আলাস্কা অভিযান – রকিব হাসান
  • তিন গোয়েন্দা ভলিউম ১১৭: আমিই কিশোর – রকিব হাসান

বিভাগসমূহ

  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • গোপনীয়তা নীতি

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

No Result
View All Result

© 2023 BnBoi - All Right Reserved

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In