জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে রেল কর্তৃপক্ষ, গবেষক ও নির্মাণ সংস্থা বসে এই নতুন পরিকল্পনা আমাদের ট্রেনগুলিতে যাতে সত্বর চালু করা যায়, তা দেখা উচিত।
কেমনভাবে স্মরণীয় থাকা যায়?
আমি সাধারণভাবে মনে করি যে, বেশিরভাগ এনজিও-ই একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। তারা সমাজকল্যাণে অংশ নিতে চায়। প্রত্যেক এনজিও-রই নিজেকে জিজ্ঞাসা করা উচিত, ‘আমরা কোন কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকব?’ এই ক্ষেত্রে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে স্যানিটেশন, পাবলিক টয়লেট, পুনর্নবীকরণ ও বায়োগ্যাসের ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও প্রয়োগের কাজের জন্য। আমি সুলভ ইন্টারন্যাশনাল, অন্যান্য এনজিও এবং গ্রামোন্নয়ন সংস্থাগুলিকে অনুরোধ করব বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে এই কাজ করতে। এই ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও কর্মোদ্যোগ এবং সেবার লক্ষ্যে স্থির থেকে এমন কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। গ্রাম-রূপান্তরের কাজে তাই, তারা সাহায্য করতে পারে।
ধরা যাক, একটি গ্রামে কয়েক ঘণ্টার জন্য কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। এর ফলে কয়েকটি নালার সৃষ্টি হল। সেই নালা হয় ঝিলে বা পুকুরগুলিতে গিয়ে পড়বে, যেখানে সেই জল জমা থাকবে ভবিষ্যতের জন্য। নয়তো সেই নালার জল গিয়ে সমুদ্রে পড়বে, অথবা কোথাও না গিয়ে নিজে থেকেই শুকিয়ে যাবে। এ সবই নির্ভর করছে গ্রাম পঞ্চায়েত কেমনভাবে সেই জলের স্রোতের পথ নির্ধারণ করে দেয়, তার উপর। কোনও কোনও স্থানে রাস্তা নির্মিত হয় আশপাশের জমির থেকে উঁচুতে। ফলে, বৃষ্টির জলের যে অংশ রাস্তায় পড়ে, তা গড়িয়ে আশপাশের জমিতে চলে যায়। রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে আমি এটা প্রত্যক্ষ করেছি।
আমার সুদীর্ঘ পাবলিক জীবনে আমি বহু এনজিও-র কাজের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছি। বহু ক্ষেত্রে দেখেছি এক-পিট টয়লেটের মাধ্যমে স্যানিটেশন ব্যবস্থা করা হয়। যখনই ওই পিট পূর্ণ হয়ে যায়, সেটি আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। সুতরাং, আমাদের দেখতে হবে যে, এনজিও-গুলি বা সরকারি সংস্থা কাজের শেষে সেই স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেও যাতে কাজের মূল উদ্দেশ্যটি অব্যাহত থাকে। এটা করতে গেলে স্থানীয় মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজটি শিখিয়ে দিতে হবে, যাতে প্রকল্পটির সুফল গ্রামবাসীরা ভোগ করতে পারেন। এই প্রশিক্ষণের দায়িত্ব প্রাক্তন সেনানীদের দেওয়া যেতে পারে। কারণ, তাঁরা আসেন এক শৃঙ্খলাবদ্ধ সংগঠন থেকে এবং সারা দেশেই এঁদের দেখা মেলে।
জীবন এক অসাধারণ সুযোগ। মসৃণ পথে হাঁটায় কোনও চ্যালেঞ্জ নেই। নতুন নতুন পথ তৈরি করবে গ্রামের এনজিও-রা এবং সারা ভারত জুড়ে সুন্দর পরিচ্ছন্ন গ্রামের সৃষ্টির জন্য চিরকাল তারা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বর্জ্য পরিচালনে ক্লোজড-লুপ ব্যবস্থা
গ্রামের স্যনিটেশন ব্যবস্থার বিষয় মনে এলে প্রথমেই যে কথাটি মাথায় আসে তা হল প্রত্যেক গৃহস্থালির জন্য পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থার সঙ্গে সঠিক সুযোগ সুবিধার আয়োজন। গ্রামের সার্বিক ধনসম্পদ বৃদ্ধির একটি উপায় এই সুযোগ সুবিধার জন্য পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা। যেমন, কোনও কোনও গ্রামে দেখা যায় সেখানকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি ফাইবার গ্লাসের টয়লেট সরঞ্জাম সেখানে ব্যবহার হয়। তামিলনাডুর কীরাপালায়াম আর ভাল্লামে [Vallam] এবং গুজরাতের আহমেদাবাদে আমি গ্রামের মানুষের হাতে এই ধরনের টয়লেট সরঞ্জাম তৈরি হতে দেখেছি।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, গ্রামের সব টয়লেট সব সময়ে কাজ করছে কিনা। তার অর্থ, গ্রামের মানুষজনকে জল-কলের বা যাকে বলে প্লাম্বিং-এর কাজে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির দ্বারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি রাখতে হবে। তৃতীয়ত, টয়লেটের জন্য সর্বক্ষণ জল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃতিতে জলসম্পদ হ্রাস পাওয়ার দরুন, টয়লেটে ব্যবহৃত জলকেই পুনর্বার ব্যবহারযোগ্য করে নিতে হবে। এবং প্রতি ঘরে ঘরে জল ধরে রাখার ব্যবস্থাও করতে হবে।
চতুর্থত, প্রত্যেক টয়লেটকে একটি কেন্দ্রীয় পয়ঃপ্রণালীর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এটি না করতে পারলে ঘরে ঘরে আদর্শ টয়লেট নির্মাণের প্রকল্প তার কাঙ্ক্ষিত ফল পাবে না। এইচ জি এস গিল নামে এক অনাবাসী ভারতীয়র তৈরি একটি মডেল আমার চোখে পড়ে পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুর জেলার কারোডি গ্রামে। তিনি যে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তাতে, প্রত্যেক টয়লেট একটি কেন্দ্রীয় পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে, বর্জ্যকে একটি ঢাকা নর্দমার মাধ্যমে নিয়ে গিয়ে ফেলে দূরস্থ একটি স্থানে। সেখানে সূর্যের আলোয় উন্মুক্ত একটি স্যুয়ারেজ ট্যাঙ্কে বর্জ্য থেকে জল পৃথকীকরণ করা হয়। এই জল শোধন করে চাষের কাজে ব্যবহার করা হয়। শ্রী গিল নজর রাখেন যাতে প্রতি ঘরের টয়লেট ঠিক মতো কাজ করে এবং কোনও প্রতিবন্ধকতা যাতে না থাকে। কেন্দ্রীয় পয়ঃপ্রণালীটিও যাতে আটকে না যায়, সেদিকেও নজর রাখেন এক দল প্রশিক্ষিত মানুষ। কেন্দ্রীয় ট্যাঙ্কটি কয়েক মাস অন্তর পরিষ্কার করা হয়। তার কঠিন বর্জ্য শোধন করে চাষে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হোশিয়ারপুরের অন্যান্য গ্রামেও তিনি তাঁর এই মডেল চালু করেছেন।