“পুরা’ অ্যাক্টিভেটেড’-এ দু’ধরনের উদ্যোগপতি আছে:
১। সম্পদ উদ্যোগপতি: তাঁদের মূল দৃষ্টি হল চিরাচরিত প্রযুক্তি ও আধুনিক ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা মারফত প্রাকৃতিক সম্পদ, ঐতিহ্যগত সম্পদ ও মানবসম্পদের, সঠিক আর্থিক মূল্যায়ন করে প্রত্যেক পরিবারের রোজগারের স্তরকে বৃদ্ধি করা। তাঁরা উৎকৃষ্ট কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে এবং উৎপাদনকে বাজারের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে, সম্পদকে মূল্য শৃঙ্খলের উপরের দিকে টেনে তোলার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করবেন। তাঁদের কাজের পরিণাম দেখা যাবে ওই গ্রামীণ কমপ্লেক্সের সামগ্রিক জিডিপি-র বৃদ্ধিতে।
২। সামাজিক উদ্যোগপতি: অন্য শ্রেণিটি, সামাজিক উদ্যোগপতি, সম্পদ উদ্যোগপতিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। মানব উন্নয়নের সূচক, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদির বৃদ্ধির উপর তাঁদের নজর থাকবে। তাঁরা মানুষের বর্ধিত ক্রয় ক্ষমতাকে উত্তম জীবনে পরিণত করার উপর জোর দেবেন। তাঁদের কাজ পরোক্ষ ভাবে প্রতিফলিত হবে শিক্ষার মানের উন্নতিতে, শিশু ও মায়ের মৃত্যু হারের হ্রাসে, পুষ্টির বৃদ্ধিতে, উত্তম গার্হস্থ্যজীবনে, স্যানিটেশন, পরিস্রুত পানীয় জল এবং সঠিক মানের শক্তির ব্যবহারে। এর থেকেই জন্ম নেবে পরিবেশ সচেতনতা, এবং হ্রাস পাবে সামাজিক সংঘর্ষের হার।
“পুরা’ অ্যাক্টিভেটেড’-এর উদ্যোগপতিরা স্থানীয় স্তরে সফল ‘পুরা’ উদ্যোগী, যাঁরা বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাও হতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবেন। “পুরা’ অ্যাক্টিভেটেড’-এর উদ্যোগপতিরা সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগী হবেন। “পুরা’ অ্যাক্টিভেটেড’-এর এক ব্যাবসায়িক নেটওয়ার্ক তৈরি হতে হবে বিবিধ ধারার প্রাযুক্তিক ও ম্যানেজেরিয়াল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায়। সেইভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ়গুলি “পুরা’ অ্যাক্টিভেটেড’-এর সহযোগী হয়ে উঠতে পারে, ইক্যুইটি ইনভেস্টার হিসেবে, অথবা বাজারের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরির সাহায্যকারী হিসেবে, বা উত্তম কার্যপ্রণালী ও উৎপাদনের নানান চ্যালেঞ্জের উদ্ভাবনী সমাধান সমূহর জন্য প্রাযুক্তিক সহায়তা প্রদানকারী হিসেবে। এইভাবে সারা বিশ্বের এন্টারপ্রাইজ়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যাবসায়িক সংস্থা নিজ নিজ দক্ষতাকে ভাগ করে, গ্রামীণ ও শহরতলি অঞ্চলের অব্যবহৃত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে মানুষের উন্নতি নিয়ে আসবে।
ইউজ়ার কমিউনিটি পিরামিড
প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস প্রাপ্তি এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে আজ মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি অর্থনৈতিক স্তরে স্থায়ী উন্নয়নের কথা চিন্তা করতে হবে। কী সেই অনন্য উপায় যা স্থায়ী উন্নয়নকে বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করবে? স্থায়ী উন্নয়নের আমি একটি সুসংহত সমাধানের অনন্য মডেল প্রস্তাব করছি যার নাম দিয়েছি ‘ইউজ়ার কমিউনিটি পিরামিড’ (ইউসিপি)।
কাঠামোগতভাবে ইউসিপি তৈরি হয়েছে এইগুলির সংযোগে:
১। প্রাকৃতিক সম্পদ
স্থায়ী উন্নয়নের মূলে আছে প্রাকৃতিক সম্পদ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে এবং তাদের প্রয়োগে আমরা মানব উন্নতিতে প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু সেই সঙ্গে, গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণে, বনানী ধ্বংসে এবং মাটি, জল ও বায়ুকে দূষিত করে আমরা পরিবেশকে দূষিত করেছি। আজ, প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে, আর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে যার ফল, বিশ্ব উষ্ণায়ন।
২। তথ্য ও যোগাযোগ
এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্যের সংগ্রহ, তথ্যের উৎপাদন, তার বিস্তার। প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ এবং পরিবেশের উন্নতির পরিকল্পনা করতে এটি সাহায্য করবে। বর্জ্য, দূষণ, শক্তি, চলন-গমন এবং জীববৈচিত্র্যের মতো বিবিধ ক্ষেত্রে স্থায়ী উন্নয়ন কেমনভাবে করা যায়, তা আধুনিক জিও-স্প্যাশিয়াল অ্যানালিটিকাল সরঞ্জামের সাহায্যে আমরা জানতে পারব।
৩। প্রযুক্তির একত্রীকরণ
প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির কারণে জল, শক্তি, পরিবেশ, দূষণ, বর্জ্য, জীববৈচিত্র্য এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মতো বিষয়গুলির ম্যানেজমেন্টে নতুন নতুন উৎপাদিত বস্তু ও ব্যবস্থার প্রয়োগ হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখি গুজরাতে সৌর প্রযুক্তির সাহায্যে ৭০০ মেগা ওয়াটের প্রথম সৌর উদ্যান; ন্যানো-প্রযুক্তির সাহায্যে নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা; বা ন্যানো-প্যাকেজিং প্রযুক্তির সাহায্যে বায়োডিগ্রেডেবল প্যাকেজিং-এর ব্যবস্থা। এই সবের একত্রীকরণ আর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মানবজাতির অগ্রগতিতে একান্ত জরুরি।
৪। সমাজ ভিত্তিক ব্যাবসার মডেল
এক দিকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থার অগ্রগতি হচ্ছে, আর অন্য দিকে বিবর্তিত হচ্ছে উদ্ভাবনী ব্যাবসার মডেল যা প্রযুক্তিকে পৌঁছিয়ে দেবে অন্তিম ইউজ়ার বা ব্যবহারকারীর কাছে। এর ফলে কৃষক, মত্স্যজীবী, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং গ্রামে বাস করা মানুষজন হবেন ক্ষমতাবান ও সমৃদ্ধ।
৫। পিরামিডের তল
ইউসিপি-তে পিরামিডের একেবারে নীচের স্তরে আছেন ইউজ়াররা বা ব্যবহারকারীরা। তাঁরাই হলেন যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ এবং স্থায়ী উন্নয়নের লাভের অংশীদার। সবশেষে, যাবতীয় কাজের সুবিধা বা উপকার পাবেন তাঁরাই। প্রযুক্তি তাঁদের জীবনধারণের মানের উন্নতিতে সাহায্য করবে। এই কাজ বর্তমানের প্রাকৃতিক সম্পদকে এমনভাবে ব্যবহার করবে যাতে পরবর্তী প্রজন্মগুলি নিরন্তর ব্যবহার করতে পারে এই সম্পদ।