APJ: নাগরিকদের প্রতি আপনার কোনও পরামর্শ আছে যা তাঁদের আরও উত্তম পরিসেবা পেতে সাহায্য করবে?
VB: উত্তমরূপে কাজ করা কোনও গণতন্ত্রের জন্য তো বটেই, প্রশাসনের পক্ষেও অত্যন্ত জরুরি হল নাগরিকদের সচেতন থাকা এবং প্রশ্ন করা। আইনত প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে এক ভদ্রোচিত মানবজীবন যেখানে তার মৌলিক চাহিদা, খাদ্য, বস্ত্র আর বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। আমাদের সকলে মিলে প্রচেষ্টা নিতে হবে যাতে ভারতকে সবথেকে উন্নত ও সুখী রাষ্ট্রসমূহের অন্যতম করে গড়ে তোলা যায়। গণতন্ত্রের সব ক’টি স্তম্ভের একযোগে কাজ করতে হবে এবং একে অপরকে টেক্কা দেবার চেষ্টাকে পরিহার করতে হবে। আমাদের মানুষজনই এই দেশ শাসন করছে, অন্য কোনও বিদেশি শক্তি আমাদের শাসন করছে না। সহযোগিতা, অংশগ্রহণ করা এবং দায়িত্ব নেওয়া হল এই সময়ের চাহিদা।
কিছু সিভিল সার্ভিস অফিসারদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা
বন্ধুগণ, কিছু সিভিল সার্ভিস অফিসারদের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলব। এই অফিসারদের প্রত্যেককেই আমার মনে হয়েছে অত্যুজ্জ্বল নেতৃত্বের এক একজন উদাহরণস্বরূপ।
সি আর কৃষ্ণস্বামী রাও
১৯৮২-৮৩ সালে গাইডেড মিসাইল প্রকল্পের সময়ে আমি ছিলাম ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি (ডিআরডিএল)-এর অধিকর্তা। শ্রী সি আর কৃষ্ণস্বামী রাও সাহেব ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব। ক্যাবিনেটকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পটির বিষয়ে কাগজপত্র জমা দেওয়ার আগে, একটি মিটিং হয় যেখানে উপস্থিত ছিলেন তদানীন্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী আর ভেঙ্কটরমন, রাও সাহেব এবং সামরিক বাহিনীর তিন উপ-প্রধান। আমাকেও ওই উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন মিটিংটিতে হাজির থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পটির স্টাডি রিপোর্টটি পেশ করতে বলা হয়।
প্রচণ্ড সমালোচনা হল সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে। তাঁদের মত হল যে, ভারত যেহেতু আজ পর্যন্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্রও সাফল্যের সঙ্গে নির্মাণ করতে পারেনি, তাই পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র বিকাশ ও নির্মাণ অনুমোদন করা যাবে না। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর তদানীন্তন উপদেষ্টা ড. ভি এস অরুণাচলম এবং আমি বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, এটি হবে এক ফ্ল্যাগশিপ প্রোজেক্ট। কিন্তু সদস্যরা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। এই সময়ে শ্রী কৃষ্ণস্বামী রাও সাহেব এমন একটি মন্তব্য করলেন যা আজও আমার কানে বাজে।
তিনি বললেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় স্যার, আমি সমস্ত আলোচনাটাই শুনেছি। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই। সময় হয়েছে একটা সিদ্ধান্তে আসার এবং একটা সাহসের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে নতুন পথে চলার। অতীত নিয়ে বসে থাকলে হবে না। আমরা এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি যে, এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পটির নেতৃত্বে যাঁরা, তাঁরা কর্মকাণ্ডটিতে মনেপ্রাণে নিয়োজিত এবং আবেগে ভরপুর। আমি মনে করি সব ক’টি ক্ষেপণাস্ত্রই একযোগে সুসংহতভাবে নির্মাণ করার প্রয়োজন আছে।’
এই মন্তব্যটি থেকেই শ্রী আর ভেঙ্কটরমন প্রকল্পটির নাম রাখলেন ইন্টিগ্রেটেড গাইডেড মিসাইল প্রোগ্রাম। ওই মিটিং-এর দু’মাসের মধ্যেই প্রকল্পটি ক্যাবিনেট অনুমোদন দিয়ে দিল। আমি যাবতীয় প্রয়োজনীয় অর্থ, মানবসম্পদ এবং নতুন ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা পেয়ে গেলাম। উৎপাদনের প্রয়োজনে কিছু জরুরি ব্যবস্থা স্থাপনার জন্যও অর্থ বরাদ্দ পেলাম। আজ সেই উৎপাদন সংস্থাটির ‘পৃথ্বী’, ‘অগ্নি’, ‘আকাশ’ এবং প্রথম সুপারসনিক ক্রুইস মিসাইল ‘ব্রহ-মোস’ নির্মাণের বরাতের অর্থমূল্য ৯৩ ট্রিলিয়ন টাকা। আমাদের আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বের এমনই দূরদৃষ্টির ক্ষমতা।
প্রভাত কুমার
বন্ধুগণ, একটি রাষ্ট্রের জীবনে অনেকগুলি বাঁক আসে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বৃদ্ধির পথে প্রভাব ফেলে এইগুলি। একটি ঘটনার কথা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব, যেখানে দেখা যাবে ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারে কেমনভাবে এল এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
১৯৯৮-৯৯-এর ওই সময়ে ক্যাবিনেট সচিব শ্রীপ্রভাত কুমারের সভাপতিত্বে সচিবদের মাসিক অধিবেশনে আমি অংশ নিতাম। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে মিটিংগুলির কার্যাবলি খেয়াল করতাম। আমি ভাবতাম সরকার কেন একচেটিয়া ভাবে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) নিজের হাতে রাখে। একদিন শ্রীপ্রভাত কুমার আমার দিকে চেয়ে বললেন, ‘মি. কালাম, আপনাকে আহ্বায়ক করে একটি দল তৈরি করে দিচ্ছি। ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহার কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তার পথ বাতলাতে পারবেন?’
আমি বললাম, ‘ইন্টারনেট ব্যবহারের ঘনত্ব অত্যন্ত কম আমাদের দেশে। অনেক বেশি ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীর প্রয়োজন একে বৃদ্ধি করতে। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন অবশ্যই আছে, ইন্টারনেট যোগাযোগ ট্র্যাফিকের কারণে।’
শ্রীকুমার জানতে চাইলেন টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের সচিব আর আমি নিজেদের মধ্যে বসে এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারি কিনা। সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রোবোটিক্স-এর তদানীন্তন অধিকর্তা অধ্যাপক এম বিদ্যাসাগরের সভাপতিত্বে আমরা দু’জনে একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করে দিলাম। তিনি কমিটির আলোচনাগুলি আমাকে জানিয়ে যেতেন। তিনি আমাকে জানালেন যে, যদিও আইএসপি-র বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে সকলেই একমত, তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে কিন্তু সংশয় আছে।