একশো কোটির প্রশাসন
পরিশেষে কিন্তু একজন সিভিল সার্ভেন্টের কাজ হল রাষ্ট্রকে ভাল প্রশাসন দেওয়া। প্রশাসনের বিচার হয় সে কতটা মানুষের চাহিদা সম্পর্কে ক্রিয়াশীল এবং সংবেদনশীল, তার ওপর এর থেকেই তাঁরা এক নৈতিকভাবে সুঠাম, বৌদ্ধিকভাবে উচ্চতর ও উন্নত মানের জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন। এ একমাত্র সম্ভব শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনে এবং তার সমৃদ্ধিতে। কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়?
আমি মনে করি এক সমাজভিত্তিক গ্রিড তৈরি করার প্রয়োজন আছে যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে জ্ঞানের গ্রিড, স্বাস্থ্য গ্রিড এবং ই-গভর্নেন্স গ্রিড যা ‘পুরা’ গ্রিড-এ এসে মিশবে। প্রথমটি নাগরিকদের গণতান্ত্রিক উপায়ে সঠিক জ্ঞানে বলীয়ান করে জ্ঞান-সমাজের বৃদ্ধি ঘটাবে। দ্বিতীয়টি নজর রাখবে যাতে সঠিক মানের স্বাস্থ্য পরিসেবা আর্তদের কাছে পৌঁছয়। এর দ্বারা তাঁদের জীবনের মান উন্নত হবে এবং ব্যক্তি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে যা রাষ্ট্রের উন্নয়নের গতিকে বৃদ্ধি করবে। তৃতীয়টি প্রশাসনিক কাজে আনবে স্বচ্ছতা এবং তা যেন তার মানে এবং পরিমাণে হ্রাস না হয়ে প্রত্যেকের কাছে সমানভাবে উপলব্ধ হয় তার খেয়াল রাখবে।
যদি এই গ্রিডগুলি একে অপরের পরিপূরক হয় এবং ‘পুরা’ গ্রিড, যা ভারতের ৬,০০,০০০ গ্রামকে যুক্ত করে রেখেছে, তার কার্যকারিতার মানকে উন্নত করে, তা হলে গ্রামগুলি হয়ে উঠবে অধিক ক্ষমতাবান। ক্ষমতাপ্রাপ্ত গ্রাম মানেই ভাল তত্পর প্রশাসন। আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, সমাজভিত্তিক গ্রিড মডেলটি প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব। এবং তা ভারতকে ২০২০ সালের মধ্যে এক উন্নত রাষ্ট্রে পরিবর্তন করার আমাদের লক্ষ্যকে সাহায্য করবে।
শ্রী ভেঙ্কটেশাম বুরা, আইএএস, ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের (বর্তমানে তেলেঙ্গানা) মেডাক জেলার কালেকটর। তাঁর সঙ্গে আমার বেশ ভাল আলাপ হয়েছিল যখন আমি অধ্যাপক এন বি সুদর্শন আচার্যর শুরু করা Lead India ২০০২ প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল, সমাজ রূপান্তর প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের দূত হিসেবে তরুণদের প্রশিক্ষিত করা। প্রকল্পটির দর্শন ছিল, ব্যক্তির উন্মেষ আনে জাতির উন্নয়ন।
তাঁর কাজের ব্যাপারে এবং ভাল প্রশাসন ব্যবস্থা কায়েম করায় সিভিল সার্ভিস অফিসারদের ভূমিকা সম্পর্কে আমি শ্রীবুরাকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম। তাঁর প্রতিক্রিয়াগুলি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই এখানে:
APJ: আপনার জেলায় Lead India প্রকল্প কতটা যুবসমাজকে প্রভাবিত করেছে?
VB: আমি যখন মেডাক জেলার কালেকটর ছিলাম, আমি বুঝেছিলাম Lead India প্রকল্প মনোযোগ কাড়বে। আমি প্রকল্পটিকে বিপুলভাবে আমার সমর্থন দিই। এই জেলার ৫০,০০০-এর বেশি পড়ুয়ারা এই প্রকল্পটি থেকে অনেক কিছু নিজেদের ভিতর নিতে পেরেছিলেন। প্রকল্পটি তাঁদের অন্তরের অন্তঃস্থলে পৌঁছে তাঁদের জীবনদর্শনের পরিবর্তন এনেছে। নিজের বাড়িতে, ক্লাসে এবং খেলার মাঠে তাঁদের আচরণেই তা প্রকাশ পায়। প্রকল্পটি তাঁদের সুপ্ত ক্ষমতাকে জাগিয়ে তুলে তাঁদের ব্যক্তিত্বর এক সার্বিক উন্নতি ঘটিয়েছে।
APJ: আপনার সব থেকে বড় সমস্যা কী ছিল এবং তার সমাধান আপনি কীভাবে করলেন?
VB: এই জেলায় কিছু মানুষ অসম্ভব রকমের বঞ্চিত। যাঁরা অত্যন্ত অসুস্থ এবং শারীরিকভাবে অক্ষম তাঁদের রুজিরোজগারের ভীষণ সমস্যা। অনেকেই অনাহারে থাকেন। মানসিক জরাগ্রস্ত যাঁরা রাস্তায় থাকেন, তাঁরা সম্মানজনক কোনও শুশ্রূষা পান না। সমস্যাটা সাংঘাতিক এবং সাধারণ সরকারি কার্যক্রম ও পরিষেবা তাঁদের সমস্যাকে মোকাবিলা করতে অক্ষম। তাঁরা অযত্নে অবহেলায় থেকে যান।
বিভিন্ন এনজিও এবং জনগোষ্ঠীকে এই বিষয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করলাম আমি। কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সহায়তায় একটি প্রকল্প শুরু করা হল। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হল Assara। তার লক্ষ্য ছিল ওই সব আর্তদের বিশেষ করে বয়স্ক এবং যাঁরা মৃত্যুপথযাত্রী, তাঁদের দিনে অন্তত দু’টি আহারের ব্যবস্থা করা। প্রত্যেক গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠী সেই সব আর্তদের সন্ধান করে একজন বেকার মহিলাকে নিযুক্ত করল যিনি এঁদের দু’টি আহারের ব্যবস্থা করবেন। দ্রব্যসামগ্রীর যা প্রয়োজন তা দিলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং স্থানীয় মানুষ।
আর একটি প্রকল্প Ashray নামে শুরু করা হয় জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন এনজিও-গুলির সহযোগিতায়। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানসিক জরাগ্রস্ত গৃহহীনদের জন্য সম্মানীয় জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা। রাস্তা থেকে তুলে এনে তাঁদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করা হত। তাঁদের পুষ্টিকর খাদ্য ও ওষুধ দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হত।
নিউ ইয়র্কের একটি সংস্থা সোশাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ইন্টারন্যাশনাল, মেডাক জেলাকে তার কাজের জন্য SA8000 সার্টিফিকেট প্রদান করে ২০০৭ সালে। নিরক্ষা সম্মত সামাজিক সার্টিফিকেট প্রদান প্রক্রিয়ায় এটি বিশ্বের প্রথম যা দেওয়া হয় শিল্পক্ষেত্রে সম্মানজনক কর্মস্থানের ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য। সমগ্র এশিয়াতে এটি প্রথম একটি সরকারি সংস্থা যা এই শংসাপত্র পেয়েছিল।