এমন কথাই ডাক্তাররা ভেবেছিলেন, কিন্তু গুডম্যানের কাছে সে কথার কোনও গুরুত্ব ছিল না। তিনি নিজে কী ভাবছেন সেইটিই ছিল তাঁর কাছে বেশি জরুরি। তিনি কল্পনা করতেন যে, তিনি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে হাসপাতাল থেকে পায়ে হেঁটে বেরোচ্ছেন। তিনি মনের সঙ্গে তাঁর ক্রীড়া চালিয়ে যেতে থাকলেন। তাঁর বইতে তিনি লিখেছেন যে, একবার যদি মনকে তুমি তোমার সঙ্গে পেয়ে যাও, তোমার সবকিছু নিজের নিজের জায়গায় ফিরে আসবে। দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহের গভীর অনুশীলনের পর গুডম্যান একদিন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই প্রথমবার শ্বাস গ্রহণ করতে সক্ষম হলেন। স্পিচ থেরাপিস্টের সঙ্গে বসে তিনি তাঁর প্রথম একটি শব্দ বলে উঠলেন: Mama: কয়েকমাস পর তাঁকে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হল। সেখানে তিনি নিজে হাতে খেতে শুরু করলেন এবং হাঁটতে শেখার চেষ্টা করতে থাকলেন। শারীরিক পরিচর্যায় তিনি তাঁর পেশিশক্তির বৃদ্ধি ঘটাতে থাকলেন এবং বাড়িয়ে তুলতে থাকলেন তাঁর মনোবল যতক্ষণ না তিনি নিজের ক্ষমতায় দাঁড়াতে পারছেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ পর তিনি কোনও সাহায্য ছাড়াই হাঁটতে সক্ষম হলেন।
ডাক্তারেরা দিশাহারা। ক্রিসমাসের আগেই গুডম্যান মনস্থির করেছেন হাসপাতাল থেকে হেঁটে বেরোবেন। এবং তিনি ঠিক তা-ই করে দেখালেন। পৃথিবীর জন্য তিনি যে বার্তা দিলেন তা হল, ‘মানুষ তাই-ই হয়ে ওঠেন যা তিনি চিন্তা করেন’। আমি আশা করি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীরা, এই কাহিনিগুলি মনে করবেন, যখন তাঁদের রুগিদের চিকিৎসা করবেন এবং শেখাবেন কেমনভাবে, শুধুমাত্র ওষুধে নয়, তাঁদের নিজ চিন্তার শক্তিতে নিরাময় হতে পারেন।
উপসংহার
আমি শেষ করতে চাই স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য দু’টি শপথ দিয়ে। প্রথমটি নার্সদের জন্য:
১। আমি আমার এই নার্সিং পেশাকে ভালবাসি। এটি একটি মহান ব্রত।
২। আমি মনে করি কারোর যন্ত্রণার উপশম করা একটি মহান, ঈশ্বরপ্রদত্ত ব্রত।
৩। আমি সকল রুগিকে সমানভাবে যত্ন ও সহমর্মিতা দিয়ে সেবা করব।
৪। আমি অন্তত কুড়িজন গ্রাম্য রুগির বিশেষ সেবা যত্ন করব।
৫। আমি জীবনভর নার্সিং-এ শিক্ষা নিয়ে যাব।
৬। আমি সেই ব্রত নিয়ে চলব যেখানে বলা হয়েছে, ‘আমার যত্ন তোমার যন্ত্রণাকে নিরাময় করে তোমার মুখে হাসি ফোটাক’।
দ্বিতীয়টি ডাক্তারদের জন্য:
১। আমি মনে করি চিকিত্সক পেশায় আমি ঈশ্বরপ্রদত্ত কাজ করে চলেছি।
২। আমার সময়ের কিছুটা আমি সেই সব রুগিদের চিকিৎসার জন্য দেব, যাঁদের সামর্থ্যের অভাব।
৩। আমি কোনও সময়েই আমার রুগিদের অপ্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষার যন্ত্রণা দেব না এবং পরামর্শ দেব একান্ত জরুরি পরীক্ষাগুলি করতে।
৪। গ্রামে গিয়ে আমি বছরে অন্তত কুড়িজন গ্রাম্য রুগির চিকিৎসা করব ন্যূনতম খরচে।
৫। আমার যাবতীয় রোগ নির্ণয়ে এবং চিকিৎসায় আমি উৎসাহ দেব উচ্চমানের দেশি সরঞ্জাম এবং অন্য সামগ্রীর ব্যবহারে।
৬। যদি আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানে যাই আমি তাহলে নির্দিষ্ট গবেষণায় যাব যেমন এইচআইভি-র জন্য ভ্যাকসিন বা ডায়াবেটিস টাইপ ১ এবং টাইপ ২-এর স্থায়ী নিরাময়ের উপায়।
৭। আমি সেই ব্রত মেনে চলব যেখানে বলা হয়েছে, ‘আমার মেধা যেন সকল পীড়িতের যন্ত্রণা নিরাময় করে হাসি ফোটায় তাঁদের মুখে।’
.
এগারো : সিভিল সার্ভেন্ট
ভারতের সিভিল সার্ভিসই সব থেকে উত্তম এবং সব থেকে নিকৃষ্ট সময়ে রাষ্ট্রকে চালনা করে নিয়ে যায়। ২০১০ সালের হিসেব মতো দেশে সিভিল সার্ভেন্টদের সংখ্যা ৫০,০০০। আমাদের এই বিশাল দেশের দৈনন্দিন শাসনব্যবস্থাকে তাঁরাই দেখাশুনা করেন। দেশের অস্থির সময়েও তাঁরাই দেশকে মসৃণভাবে এগিয়ে নিয়ে যান।
মধ্য ১৯৯০ দশকে ভারতের Vision ২০২০-র পরিকল্পনা রচনার এক অভিজ্ঞতার কথা আমার মনে পড়ে যায়। আমাকে টিআইএফএসি-র সভাধ্যক্ষর দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রথম বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় যে, কাউন্সিল একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে যাতে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত এক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা যায়। ভারতের জিডিপি-র বৃদ্ধির হার যেখানে প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ শতাংশ ছিল, এই লক্ষ্য পূরণে সেখানে আমাদের ধরে নিতে হচ্ছিল নিরন্তর দশ বছরের বেশি সময় ধরে সেই বৃদ্ধির হার দশ শতাংশ রাখার কথা। কাউন্সিলের সকলের মনকে এই বিষয়টি প্রজ্বলিত করে দিল।
সেই সময়ে টিআইএফএসি-র সদস্যরা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব; ভারত সরকারের ন’জন সচিব; কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই), অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অফ ইন্ডিয়া (এএসএসওসিএইচএএম) এবং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)-র প্রধানরা; আইডিবিআই, আইসিআইসিআই এবং আইএফসিআই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানরা; কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা; কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা; এবং ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (ডিএসটি)-র বিজ্ঞানীরা।
নানান তর্কবিতর্কের পর ৫০০-র কিছু বেশি সদস্য নিয়ে সতেরোটি কার্যনির্বাহী দল তৈরি করা হল। অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৫০০০ মানুষের সঙ্গে বৈঠক করলেন এঁরা। এই কমিটিগুলি দু’বছরের কিছু বেশি সময় কাজ করে পঁচিশটি রিপোর্ট প্রস্তুত করলেন যা তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার হাতে ২ অগাস্ট ১৯৯৬ তুলে দেওয়া হয়। কীভাবে বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং সংস্থা যা ভারতের সিভিল সার্ভিসের শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্কের সমন্বয়, একযোগে জাতীয় উন্নয়নে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেন, এটি ছিল তার এক চিত্তাকর্ষক নিদর্শন।