পিতামাতার কোনও একজনের উচিত আহারের সময়ে কোনও একটি বই থেকে কাহিনি বা আখ্যান পড়ে শোনানো, যেখানে আছে নীতি ও মূল্যবোধের কথা। সেই কাহিনি শুনে সন্তানরা তাদের মতামত জানাবে। এই অভ্যাস ছেলেমেয়েদেরও অনুপ্রাণিত করবে বই পড়ায়। নীতি ও মূল্যবোধের শিক্ষা তারা প্রয়োগ করবে তাদের জীবনে। কেউ কেউ স্কুলে তাদের বন্ধুদের ওই সব কাহিনির কথা বলবে। এবং এইভাবেই এক বৃহৎ গোষ্ঠীর মধ্যে সেই শিক্ষার উপকারিতা ছড়িয়ে পড়বে।
এই দৈনন্দিন পারিবারিক মিলনের ফলে সমাজ জুড়ে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তথ্য ও জ্ঞানের সঙ্গে নীতিবোধের সম্প্রসারণ ঘটবে। এই অভ্যাস থেকে যে সন্তানরা লাভবান হবে, তারা সকল সময়েই যে-কোনও কাজে হবে দায়িত্বশীল। সে দায়িত্ব তারা সুন্দরভাবে, নিষ্ঠাভরে ও আত্মসম্মানের সঙ্গে অতিবাহিত করবে।
২। মায়ের প্রসন্নতা
এক সুখী মা-ই যে কোনও সুখী পরিবারের ভিত। সংসারের সকলের পরিচর্যা ও লালন করেন যেহেতু তিনি, তাই তাঁর সুখসমৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়— যেখানেই আমি তরুণদের সাক্ষাৎ পাই, আমি তাদের জোর দিই যাতে প্রতিদিন তারা একটি সময় বের করে তাদের মায়েদের প্রসন্ন রাখার চেষ্টা করে। তাদের একটা শপথবাক্য পাঠ করাই। সেটা অনেকটা এইরকম:
আজ থেকে আমি আমার মাকে সুখী রাখব।
আমার মা সুখে থাকলে, আমার পরিবার সুখে থাকবে।
আমার পরিবার সুখে থাকলে, সমাজ সুখে থাকবে।
সমাজ যদি সুখে থাকে, আমার রাজ্য সুখে থাকবে।
রাজ্য যদি সুখে থাকে, দেশ সুখে থাকবে।
৩। স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত পরিবার
এক স্বচ্ছ দুর্নীতিমুক্ত সমাজের অপেক্ষায় আজ সারা রাষ্ট্র। দুর্নীতি শুরু হয় কিছু পরিবারে, তাই ঘরের অভ্যন্তরেই তাকে বিনাশ করে দিতে হবে। প্রায় ২০ কোটি পরিবারের সমাজ আমাদের। তার এক তৃতীয়াংশ যদি আমরা মনে করি দুর্নীতিগ্রস্ত, তা হলে কমবেশি প্রায় ৬ কোটি পরিবার দুর্নীতির কবলে।
এর থেকে বেরিয়ে আসার একটা পথ আছে। আমি তরুণদের বলব, তারা যদি তাদের পরিবারে এই দুর্নীতি-ভাইরাসের সন্ধান পায়, তারা যেন তাদের পিতামাতাকে স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে এই পথ— যে পথে রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যাবে— সেই পথ থেকে নিবৃত্ত করে। আমার বিবেক বলছে, কোনও আইন নয়, যুবকদের এই অভিযানই পারবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা নিতে।
৪। সবুজ গৃহকোণ
আবহাওয়ার পরিবর্তন আজ পৃথিবীর সবথেকে বড় সমস্যা। অরণ্যবিনাশ, শিল্পায়ন এবং পরিবহণ— আমাদের এই গ্রহের উষ্ণতার কারণ। পৃথিবী জুড়ে আজ যে ভয়াবহ বন্যা বা খরা, তার কারণ এই উষ্ণায়ন।
আমাদের প্রতিটি পরিবার যদি দায়িত্ব নেয়, এই পরিস্থিতি পালটে দেওয়া যায়। প্রত্যেক পরিবার অঙ্গীকার করুক, তারা অন্তত একটি গাছের পরিচর্যা ও লালন করবে। একটি পূর্ণ বয়সের ২০ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং ১৪ কেজি অক্সিজেন ত্যাগ করে। যদি প্রতিটি পরিবার একটি গাছ রোপণ করে তাকে পরিচর্যা করে, তবে ২০ কোটি গাছ থাকবে আমাদের, যা আবহাওয়া পরিবর্তনের সমস্যায় সাহায্য করবে অবশ্যই।
এক সুন্দর ভারত
আলোকপ্রাপ্ত মানুষজন আর সুখী পরিবার একসঙ্গে এক সুন্দর ভারত গড়ার কাজে বহু দূর যাবে। এক সুন্দর ভারতের বিবর্তনের বিষয়ে আমার কিছু চিন্তাভাবনা আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। এই বিবর্তনের সঙ্গে আছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আর প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে আহরিত মূল্যবোধ। বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের ভবিষ্যৎ বাণী বলছে যে, ২০২০ সালের মধ্যে ভারত সারা পৃথিবীতে এক গৌরবময় স্থান নিয়ে উঠে আসবে। ওই লক্ষ্য-বছরটিকে ধরে এবং গত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক উন্নতির চেহারাটা দেখে, আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে প্রয়োজন একটি বিরাট ধাক্কার। ভবিষ্যতের প্রজন্মকে আমরা এমন এক প্রতিযোগিতামূলক রাষ্ট্র উপহার দেব যার নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকবে-
১। এক সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সুখী রাষ্ট্র।
২। গ্রাম-নগরের বিভাজন রেখা যে রাষ্ট্রে অতি সূক্ষ্ম।
৩। যে রাষ্ট্রে শক্তি ও উন্নতমানের জলের ন্যায়সংগত বিতরণ আছে।
৪। এমন রাষ্ট্র যেখানে কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলি প্রযুক্তির সাহায্যে এক সুরে বেজে ওঠে, যাতে এক নিরবচ্ছিন্ন সম্পদসৃষ্টি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৫। সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণে যে রাষ্ট্রের মেধাবী বিদ্যার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় না।
৬। সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মেধার শিক্ষার্থী ও বিজ্ঞানীদের জ্ঞান লাভের আদর্শ গমনস্থান হয় যে রাষ্ট্র।
৭। যে রাষ্ট্রে সমগ্র জনগণের জন্য শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্য পরিষেবা সহজলভ্য হয়।
৮। যে রাষ্ট্রের সরকার প্রযুক্তির ব্যবহারে তার শাসনকে করে তোলে সকলের কাছে গ্রহণীয়, স্বচ্ছ ও সহজে সংযোগকরণীয়, আর আইন যেখানে সরল হওয়ায় সরকার হয় দুর্নীতিমুক্ত।
৯। যে রাষ্ট্রে দারিদ্র্য সম্পূর্ণরূপে অবলুপ্ত, অশিক্ষা এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিলুপ্তি ঘটেছে, আর সমাজের কোনও ব্যক্তিই যেখানে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবেন না।
১০। যে দেশ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাসযোগ্য স্থান, আর যে দেশ একশো কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
২. শপথ
পর্ব ২ : শপথ