.
আমি কোনো দার্শনিক নই। আমি প্রযুক্তির মানুষ। আমার সারাটা জীবন আমি খরচ করেছি রকেট বিজ্ঞান শেখার পেছনে। কিন্তু বিপুলসংখ্যক বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে আমার বোঝার সুযোগ হয়েছিল প্রচণ্ড জটিলতার মধ্যে পেশাগত জীবনের প্রপঞ্চ। যা আরও আগে বর্ণনা করেছি সেদিকে তাকালে আমার নিজের পর্যবেক্ষণ ও উপসংহার ডগমাটিক বলে প্রতীয়মান হয়। আমার সহকর্মীরা, সহযোগীরা, নেতারা; রকেট বিদ্যার জটিল বিজ্ঞান; টেকনোলজি ম্যানেজমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু; সমস্তই মনে হয় করা হয়েছে নেহাৎ কর্তব্য হিসাবেই। হতাশা এবং সুখ, সাফল্য ও ব্যর্থতা-আলাদাভাবে চিহ্নিত হয় বর্ণনায়, কালে ও স্থানে-সমস্তই মনে হয় মিলে গেছে এক সঙ্গে।
একটা বিমান থেকে আপনি নিচে তাকালে লোকজন, বাড়ি, পাথর মাঠ, গাছপালা ইত্যাদি সবকিছুই আপনার মনে হবে যেন একটা সমরূপ ল্যান্ডস্কেপ, একটা থেকে অন্যটাকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করা খুব কঠিন হবে। আমার জীবনের যেটুকু আপনি পড়েছেন তা দূর থেকে দেখা ওই বার্ডস্-আই ভিউয়েরই অনুরূপ।
My worthiness is all my doubt
His merit-all my fear–
Contrasting which my quality
Does however-appear.
প্রথম অগ্নি উৎক্ষেপণের সঙ্গে শেষ হওয়া সময়ের এই গল্প-জীবন কিন্তু চলতেই থাকবে। এই বিশাল দেশ সকল ক্ষেত্রেই বিপুল সাফল্য অর্জন করতে পারবে, যদি আমরা ৯০ কোটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ এক জাতির মতো সবকিছু ভাবি। আমার গল্প-জয়নুলাবদিনের পুত্রের গল্প, যে রামেশ্বরম দ্বীপের মস্ক স্ট্রিটে জীবন কাটিয়ে গেছেন একশ বছরের ওপর আর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেছেন; এক বালকের গল্প যে তার ভাইকে খবরের কাগজ বিক্রি করতে সাহায্য করত; এক ছাত্রের গল্প যাকে তৈরি করেছিলেন শিবসুব্রামানিয়া আয়ার ও ইয়াড়রাই সলোমন; এক ছাত্রের গল্প যে শিক্ষা পেয়েছিল পান্ডালাইয়ের মতো শিক্ষকদের কাছে; একজন প্রকৌশলীর গল্প যাকে চিনতে পেরেছিলেন এমজিকে মেনন ও লালন করেছিলেন অধ্যাপক সারাভাই; একজন বিজ্ঞানীর গল্প যে ব্যর্থতা ও বাধাবিপত্তিতে পরীক্ষিত হয়েছিল; এক নেতার গল্প যাকে সমর্থন দিয়েছিল প্রতিভাদীপ্ত ও নিবেদিতপ্রাণ প্রফেশনালদের বিশাল একটি দল। এই গল্প শেষ হবে আমার সঙ্গেই, যেহেতু পার্থিব কিছুই আমার নেই। আমি কোনো কিছুরই মালিক নই, কিছুই সৃষ্টি করিনি, অধিকারী নই কোনো কিছুর-না পরিবার, না পুত্র-কন্যা।
I am a well in this great land
Looking at its millions of boys and girls
To draw from me
The inexhaustible divinity
And spread His grace everywhere
As does the water drawn from a well.
অন্যদের মাঝে নিজেকে একটা উদাহরণ হিসাবে আমি স্থাপন করতে চাই না, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, কিছু পাঠক হয়তো অনুপ্রেরণা পাবেন আর পরম তৃপ্তির অভিজ্ঞতা পাবেন যা কেবল আত্মিক জীবনেই পাওয়া সম্ভব। খোদার দূরদর্শিতা ও সদয় তত্ত্বাবধান আপনার উত্তরাধিকার। আমার প্রপিতামহ আবুল, আমার পিতামহ পাকির, আমার পিতা জয়নুলাদিন-এর ব্লাডলাইন হয়তো শেষ হবে আবদুল কালামে এসে, কিন্তু খোদার মহিমা কখনও থামবে না, যেহেতু তা চিরন্তন।
.
উপসংহার
ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল এসএলভি-৩ ও অগ্নি প্রোগ্রামের সঙ্গে আমার গভীর সম্পৃক্ততা নিয়ে বিজড়িত এ বই। এমন সেই সম্পৃক্ততা যা আমাকে ১৯৯৮-এর মে মাসের পারমাণবিক পরীক্ষার মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গেও জড়িত করেছে। তিনটি বৈজ্ঞানিক এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম-মহাকাশ, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও আণবিক শক্তি। এসব এস্টাবলিশমেন্টে কাজ করার সময় আমি দেখেছি, আমাদের দেশের সেরা মানুষ আর সেরা উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক দুষ্প্রাপ্য নয়। একটা ব্যাপার সবখানেই ছিল সাধারণ, আর সেটা হলো বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা মিশন চলাকালীন ব্যর্থতায় কখনও শংকিত হতেন না। ব্যর্থতার ভেতরে আছে আরও শিক্ষাগ্রহণের বীজ যা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে আরও ভালো প্রযুক্তির দিকে, আরও উঁচু সাফল্যের দিকে। এইসব মানুষেরা ছিলেন মহান স্বপ্নদ্রষ্টাও এবং তাদের স্বপ্ন শেষপর্যন্ত সত্যি হয়েছিল আশ্চর্য সাফল্যের ভেতর দিয়ে। আমি অনুভব করি যে, এই সমস্ত বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত প্রযুক্তিগত শক্তি যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে এর তুলনা করা যেতে পারে দুনিয়ার যে কোনো স্থানের সেরা স্থাপনাগুলোর সঙ্গে। সর্বোপরি, আমার সুযোগ হয়েছিল দেশের মহান স্বপ্নদ্রষ্টাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার, বিশেষ করে অধ্যাপক বিক্রম সারাভাই, অধ্যাপক সতীশ ধাওয়ান ও ড. ব্রহ্ম প্রকাশ, যারা প্রত্যেকেই আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন প্রচণ্ডভাবে।
উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য একটা জাতির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও দৃঢ় নিরাপত্তা দুটোই প্রয়োজন। আমাদের Self Reliance Mission in Defence System 1995– 2005 আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে একটা স্টেট-অব-দ্য-আর্ট প্রতিযোগিতামূলক উইপন সিস্টেম যোগান দেবে। Technology Vission-2020 পরিকল্পনা জাতির অর্থনৈতিক বিকাশ ও সমৃদ্ধির নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও স্কিমগুলোয় কাজে লাগান হবে। এই দুই পরিকল্পনা জাতির স্বপ্নকে মেলে ধরেছে। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস আর প্রার্থনা করি যে, এই দুই পরিকল্পনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল আমাদের দেশকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করবে এবং উন্নত দেশের মর্যাদাসম্পন্ন জাতিগুলোর মধ্যে আমাদের ন্যায্য স্থানটি করে নেবে।