টেকনোলজি ম্যানেজমেন্টের বৃক্ষ, যদি যত্ন করে লালন করা হয়, বয়ে আনে অ্যাডাপটিভ অবকাঠামোর ফল। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রযুক্তিগত ক্ষমতার আওতায় আনা যায় এর ফলে। তাছাড়া মানুষের মধ্যে কারিগরি দক্ষতা সঞ্চারিত করা সম্ভব হয়।
১৯৮০ সালে আইজিএমডিপি অনুমোদন করার সময় আমাদের পর্যাপ্ত টেকনোলজি বেজ ছিল না। সামান্য কিছু বিশেষায়িত বিভাগ ছিল, কিন্তু সেই এক্সপার্ট টেকনোলজি ব্যবহারের কর্তৃত্ব আমাদের ছিল না। কর্মসূচির বহু প্রকল্প পরিবেশ একটা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছিল, একই সঙ্গে পাঁচটা অ্যাডভান্সড মিসাইল সিস্টেম তৈরি করার ক্ষেত্রে। ঘটনাক্রমে আইজিএমডিপির অংশীদার ছিল ৭৮ টি, সেই সঙ্গে ৩৬টি প্রযুক্তি কেন্দ্র আর ৪১টি উৎপাদন কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সরকারি খাতের ওপর, অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির ওপর, বেসরকারি শিল্পকারখানার ওপর। আমাদের নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে পারবে এমন ধরনের একটা মডেল আমরা তৈরি করেছিলাম কর্মসূচির ব্যবস্থাপনায়। মোট কথা, আমাদের দরকারি ব্যবস্থাপনা ও সমবায়ী উদ্যোগের সমন্বয় প্রতিভা বিকাশে ও ব্যবহারে কাজে লেগেছিল। যা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়েছিল, তা কাজে লেগেছিল আমাদের গবেষণাগারে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ও বেসরকারি শিল্পকারখানায়।
আইজিএমডিপির টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট দর্শন মিসাইল তৈরির ক্ষেত্রে এক্সক্লসিভ কিছু নয়। এই সাফল্যের পেছনে ছিল জাতির অন্তরগত এক কামনা, যাতে করে দুনিয়া আর কখনও পেশীশক্তি বা টাকার জোরে পরিচালিত না হতে পারে সেই আকাঙ্ক্ষা। প্রকৃতপক্ষে এই দুটো ক্ষমতাই টেকনোলজির ওপর নির্ভরশীল। টেকনোলজি শুধু টেকনোলজিকেই সম্মান করে। এবং, আমি আগে যেমন উল্লেখ করেছি, টেকনোলজি বিজ্ঞানের মতো নয়, এটা দলগত তৎপরতা। ব্যক্তিবিশেষের বুদ্ধিমত্তা থেকে এটা জন্ম নেয় না, জন্ম নেয় পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া আর মুক্ত প্রভাব থেকে। আর সেটাই আমি করার চেষ্টা করেছিলাম, আইজিএমডিপিতে: ৭৮ টি একীভূত ভারতীয় পরিবার, যে পরিবার মিসাইল সিস্টেম তৈরি করতেও সক্ষম।
.
আমাদের বিজ্ঞানীদের জীবন ও সময় নিয়ে প্রচুর দার্শনিকতা আর বিস্ময়ের। সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোথায় যেতে চেয়েছিলেন আর কীভাবে সেখানে পৌঁছেছিলেন সে সব কথা আবিষ্কার করা হয়েছে খুবই কম। আমার একটা ব্যক্তি হয়ে ওঠার পেছনে যে সংগ্রামের কাহিনি আছে, সম্ভবত তার খানিকটা আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পেরেছি এই লেখায়। আমি আশা করি অন্তত কিছু সংখ্যক তরুণকেও এটা সাহায্য করবে আমাদের এই কর্তৃত্ববাদী সমাজে উঠে দাঁড়াতে। এই সমাজের বৈশিষ্ট্য এমনই যে মানুষের মনের মধ্যে সে প্রবিষ্ট করে স্কুল আকাঙ্ক্ষা পুরষ্কার, ধনসম্পদ, মর্যাদা, পদ, পদোন্নতি, অন্যদের দ্বারা। জীবনযাত্রা অনুমোদন, আনুষ্ঠানিক সম্মান, আর সব ধরনের স্ট্যাটাস সিম্বল।
এসব পদার্থ অর্জন করার জন্য তারা এটি শেখে আর নিজেদের পরিচিত করে রীতি, ঐতিহ্য, প্রটোকল ইত্যাদির সঙ্গে। আজকের তরুণদের অবশ্যই জীবনের এই সৰ আত্মপরাজয়ী পন্থা শেখা চলবে না। শুধু ভোগবিলাসের আর পুরস্কারের জন্য কাজ করার প্রবণতা অবশ্যই ছাড়তে হবে। আমি যখন ধনী, ক্ষমতাবান ও শিক্ষিত লোকদের দেখি একটু শান্তির জন্য সংগ্রাম করছে, তখন আমি স্মরণ করি আহমেদ জালালুদ্দিন ও ইয়াড়রাই সলোমনের মতো মানুষদের কথা। দৃশ্যত বস্তুগত কোনো ধনদৌলত ছাড়াই তারা কতটা সুখী ছিলেন!
On the cost of Coromandel
Where the earthy shells blow,
In the middle of the sands
Lived some really rich souls.
One cotton lungi and half a candle–
One old jug without a handle
These were all the worldly possessions
Of these kings in the middle of the sands,
কেমন করে তারা নিরাপত্তার অনুভূতি নিয়ে থাকতে পারতেন? আমার বিশ্বাস তারা নিজের ভেতরে শক্তিধারণ করতেন। অন্তরগত সংকেতের ওপর তারা নির্ভর করতেন বেশি, বাইরের সেই সব পদার্থের চেয়ে যার কথা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। আপনার অন্তরগত সংকেত সম্পর্কে আপনি কি সচেতন? আপনার আস্থা আছে তার প্রতি? আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছেন আপনি? আমার কথা শুনুন, বাইরের চাপ যত বেশি আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন, যা সর্বক্ষণ আপনাকে নিজ উদ্দেশ্য সাধনে লাগানোর চেষ্টা করে, তত বেশি সুন্দর হবে আপনার জীবন, তত বেশি সুন্দর হবে আপনার সমাজ। প্রকৃতপক্ষে দৃঢ়, আত্মদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষে গোটা জাতি লাভবান হবে।
আপনার জীবনে আপনার নিজের ভেতরকার ক্ষমতা ব্যবহারের ইচ্ছা আপনাকে সাফল্য এনে দেবে। আপনার একক ব্যক্তিসত্ত্বা থেকে যখন আপনি। কোনো কাজ নির্দিষ্ট করতে পারবেন, কেবল তখনই আপনি হয়ে উঠবেন একজন পূর্ণ ব্যক্তি।
এই গ্রহের সবাইকেই তিনি পাঠিয়েছেন নিজের ভেতরকার সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগানোর জন্য, আর নিজেদের মতো করে শান্তিতে থাকার জন্য। আমার পথ আলাদা হতে পারে অনেক ক্ষেত্রে। জীবন একটা কঠিন খেলা। মানুষ হিসাবে নিজের জন্মের অধিকার ধারণ করেই আপনি এ খেলায় জিততে পারেন। আর এই অধিকার ধারণ করতে সকল চাপ উপেক্ষা করে আপনাকে সামাজিক ও বাইরের ঝুঁকি গ্রহণে ইছুক হতে হবে। শিবসুব্রামানিয়াম আয়ার তার সঙ্গে খাবার খেতে আমাকে যে তার রান্নাঘরে আমন্ত্রণ করেছিলেন তাকে আপনি কী বলবেন? আমার বোন জোহরা আমাকে প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে নিজের সোনার বালা ও চেইন বন্ধক রেখেছিল, তাকে কী বলবেন? অধ্যাপক স্পন্ডার গ্রুপ ফটো তুলতে আমাকে সামনের সারিতে তার পাশে বসিয়েছিলেন, তাকে কী বলবেন? একটা মোটর গ্যারেজে হোভারক্রাফট তৈরিকে কী বলবেন? তারপর সুধাকরের সাহস? উ. ব্রহ্ম প্রকাশের সমর্থন? নারায়ণনের ব্যবস্থাপনা? ভেঙ্কটরমনের ভবিষ্যৎ-দর্শন? অরুণাচলমের উদ্যোগ? এসবই হচ্ছে দৃঢ় অন্তরগত শক্তি ও উদ্যমের এক একটা উদাহরণ। পঁচিশ শতাব্দী আগে যেমনটা বলেছিলেন পিথাগোরাস, সমস্ত কিছুর ওপরে, নিজেকে শ্রদ্ধা কর।