এসএলভি-৩ দল সৃষ্টি করছিল তাদের অভ্যন্তরীণ সাফল্যের ক্রাইটেরিয়া। আমরা আমাদের মান, প্রত্যাশা ও লক্ষ্য বোধগম্য করেছিলাম। সারাংশ করেছিলাম সফল হতে আমাদের কী প্রয়োজন, আর সাফল্যের পরিমাপ করব কীভাবে। যেমন আমাদের কাজ কীভাবে আমরা পূর্ণ করব, কে কী করবে, আর কীসের মান অনুসারে। সময়সীমা কী হবে, আর অন্যান্য সংস্থার প্রতি রেফারেন্সসহ দল কীভাবে যোগাযোগ করবে।
একটা দলের সাফল্যের ক্রাইটেরিয়ায় পৌঁছানোর প্রক্রিয়া হচ্ছে দক্ষতা। কারণ ভূগর্ভের নিচে বহুকিছু আছে। মাটির ওপর দল সাধারণভাবে কাজ করবে প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জন। কিন্তু আমি বারংবার দেখেছি, মানুষেরা কী চায় তা বোধগম্য করে তুলতে কতটা অপারগ-যতক্ষণ না তারা দেখে একটা কর্মকেন্দ্র কিছু করছে বা তারা চায় না তারা করুক। প্রকল্প দলের একজন সদস্যকে অবশ্যই কাজ করতে হবে গোয়েন্দার মতো। কীভাবে প্রকল্প সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, তাকে তা খুঁজে বের করতে হবে।
অন্য এক স্তরে প্রকল্প-দল ও কর্মকেন্দ্রের মধ্যে সম্পর্ক উৎসাহিত ও উন্নত করে তুলতে হবে আর এ দায়িত্ব প্রকল্প নেতার। পারস্পরিক নির্ভরতার ব্যাপারে উভয় পক্ষকে অবশ্যই পরিষ্কার থাকতে হবে, আর এটাও বুঝতে হবে যে উভয়ের ওপরই প্রকল্পের কাজের অংশ চাপান আছে। অন্য এক স্তরে এক পক্ষকে অপর পক্ষের সামর্থ মূল্যায়ন করতে হবে এবং কী করা দরকার তা নিয়ে পরিকল্পনার জন্য শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলো শনাক্ত করতে হবে। বস্তুত পুরো বিষয়টি হতে হবে কন্ট্রাকিং প্রক্রিয়ার মতো। আইজিএমডিপিতে শিবাথানু পিল্লাই ও তার দল তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত কৌশল পিএসিইর মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে স্মরণীয় কিছু কাজ করেছিলেন, যা কাজে লেগেছিল প্রোগ্রাম অ্যানালাইসিস, কন্ট্রোল ও ইভালুয়েশন ইত্যাদিতে। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তারা একটা নির্দিষ্ট কর্মকেন্দ্রে একটা প্রকল্প দলের সঙ্গে বসতেন আর তাদের ভেতরকার সাফল্যের মূল্যায়ন করতেন। সাফল্যের পথে পরিকল্পনা আর সাফল্য থেকে ভবিষ্যতের চিত্র যে উদ্দীপনা সঞ্চার করত তাতে অপ্রতিরোধ্য গতি পেত তারা, আর আমি সবসময় দেখতাম তার থেকে সৃষ্টি হচ্ছে কাক্ষিত বস্তু।
.
টেকনোলজি ম্যানেজমেন্টের ধারণার শিকড় ডেভলপমেন্ট ম্যানেজমেন্টের অনেক গভীরে প্রোথিত। এর উৎপত্তি ষাটের দশকের প্রথমভাগে। ম্যানেজমেন্ট ওরিয়েন্টেশনের ধরন মূলত দুটো: প্রাইমাল, যা ইকোনমিক কর্মীকে মূল্য দেয়, আর র্যাশনাল, যা মূল্য দেয় অর্গানাইজেশনাল কর্মীকে। আর এ ব্যাপারে আমার ধারণা হলো এমন ব্যক্তিকে নিয়ে যে হবে একজন টেকনোলজি পারসন। প্রাইমাল ম্যানেজমেন্ট ধারা মানুষকে স্বীকৃতি দেয় তাদের স্বাধীনতার জন্য, এবং র্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট স্বীকৃতি দেয় তাদের নির্ভরশীলতার জন্য। অন্য দিকে আমি মূল্য দিই মানুষের পরস্পর নির্ভরতাকে।
আব্রাহাম ম্যাসলো প্রথম ব্যক্তি যিনি সে-অ্যাকচুয়ালাইজেশনের নতুন মনস্তত্বকে একটা ধারণাগত পর্যায়ে উন্নীত করেছিলেন। ইউরোপে রুডোল্ফ স্টেইনার ও রেগ রেভান্স এই ধারণাটিকে ব্যক্তির শিক্ষা ও সাংগঠনিক নবায়নের পদ্ধতিতে উন্নীত করেছিলেন। অ্যাংলো-জার্মান ম্যানেজমেন্ট ফিলোসফার ফিস শুমাখার প্রবর্তন করেছিলেন বৌদ্ধ অর্থনীতি এবং স্মল ইজ বিউটিফুল নামে বই লিখেছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে মহাত্মা গান্ধী তৃণমূল প্রযুক্তির গুণকীর্তন করেছেন আর সমগ্র তৎপরতার মাঝখানে রেখেছেন ব্যবহারকারীদের। জেআরডি টাটা প্রগতি চালিত অবকাঠাম সৃষ্টি করেন। ড. হোমি জাহাঙ্গির ভাভা ও অধ্যাপক বিক্রম সারাভাই প্রবাহ ও সমগ্রতার স্বাভাবিক নিয়মের পরিষ্কার বৈশিষ্ট্য নিয়ে চালু করেন উঁচু, প্রযুক্তিভিত্তিক আণবিক শক্তি ও মহাকাশ কর্মসূচি। ড. ভাভা ও অধ্যাপক সারাভাইয়ের উন্নয়নমূলক দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে ড, এমএস স্বামীনাথন ভারতে চালু করেন সবুজ বিপ্লব। ড, ভার্গিস কুরিয়েন ডেয়ারি শিল্পে এক বিপ্লবের ভেতর দিয়ে শুরু করেন শক্তিশালী সমবায় আন্দোলন। অধ্যাপক সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ গবেষণায় প্রতিষ্ঠা করেন। মিশন ম্যানেজমেন্টের ধারণা। আইডিয়া বাস্তবায়নের এ হলো সামান্য কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। এভাবেই সারা পৃথিবীজুড়ে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে গবেষণা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবয়ব।
আইজিএমডিপিতে আমি অধ্যাপক সারাভাইয়ের ভবিষ্যৎ দর্শন আর অধ্যাপক ধাওয়ানের মিশন একীভবনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ভারতীয় গাইডেড মিসাইল তৈরিতে আমি যোগ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম লেটেন্সির প্রাকৃতিক নিয়ম, সম্পূর্ণ দেশীয় টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। বিষয়টা পরিষ্কার হবে একটা প্রতাঁকের মাধ্যমে তুলে ধরলে।
টেকনোলজি ম্যানেজমেন্টের বৃক্ষ সেখানেই শেকড় গাড়ে যেখানে রয়েছে প্রয়োজনীয়তা, নবায়ন, পরস্পরনির্ভরতা এবং স্বাভাবিক প্রবাহ। এর বেড়ে ওঠার ধরন মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য, যার অর্থ ঘটনা এগিয়ে যাবে ধীর পরিবর্তন ও আকস্মিক রূপান্তরের একটা সমন্বয়ের ভেতর দিয়ে। প্রতিটা রূপান্তর থেকে সৃষ্টি হবে আরও জটিল কোনো স্তর কিংবা সে খুঁড়িয়ে দেবে আগের পর্যায়টিকে। ঝামেলাপূর্ণ হয়ে উঠলে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছাৰে আধিপত্যকারী মডেল; এবং পরিবর্তনের ধারা চলতেই থাকবে।