এই প্রযুক্তি মিশন সম্পর্কে ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক ভুল তথ্যের পর ভুল তথ্য। অগ্নি কখনই শুধুমাত্র পারমাণবিক অস্ত্র হিসাবে তৈরির উদ্দেশ্য ছিল না। দূর পাল্লার অপারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সামর্থ্য অর্জনটাও ছিল অন্যতম লক্ষ। সমকালীন রণকৌশলগত তত্ত্বের ক্ষেত্রে এটা আমাদের টেকসই অপারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারীও করেছিল।
১৪৯ অগ্নির টেস্ট ফায়ার বিশাল ক্রোধ সৃষ্টি করেছিল অনেকের মধ্যে। আমেরিকার একটা সুপরিচিত প্রতিরক্ষা জার্নালের প্রতিবেদনে তা প্রকাশিত হলো। যারা ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে, বিশেষ করে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা, দ্বৈত-ব্যবহার উপযোগী ও মিসাইল সংশ্লিষ্ট সকল প্রযুক্তি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিলেন, সেই সঙ্গে বহুজাতিক সহযোগিতাও।
গ্যারি মিলহোলিন, একজন তথাকথিত মিসাইল ওয়ারহেড টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ, দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায় দাবি করলেন যে ভারত পশ্চিম জার্মানির সাহায্য নিয়ে অগ্নি তৈরি করেছে। আমি আর হাসি চেপে রাখতে পারলাম না যখন পড়লাম যে, জার্মান অ্যারোস্পেস রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট (ডিএলআর) তৈরি করেছে। অগ্নির গাইডেন্স সিস্টেম, ফাস্ট-স্টেজ রকেট, এবং একটা কম্পোজিট নোজ, আর অগ্নির অ্যারোডাইনামিক মডেল পরীক্ষা করা হয়েছিল ডিএলআরের উইন্ড টানেলে। ডিএলআরের পক্ষ থেকে এসব বক্তব্যের প্রতিবাদ আসতে বিলম্ব হলো না। বরং তারা অভিযোগ করল যে, আগ্নির গাইডেন্স ইলেকট্রনিকস সরবরাহ করেছে ফ্রান্স। মার্কিন সিনেটর জেফ বিঙ্গাম্যান এমনকি এত দূর পর্যন্ত বললেন যে, অগ্নির জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আমি চুরি করেছি ১৯৬২ সালে ওয়ালপস দ্বীপে আমার চার মাস অবস্থানকালে। তবে প্রকৃত যে কথাটি তিনি চেপে গেলেন তা হলো, ২৫ বছরেরও বেশি সময় আগে আমি যখন ওয়ালপস দ্বীপে ছিলাম তখনও পর্যন্ত অগ্নিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে সে ধরনের প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ছিল না।
আজকের বিশ্বে প্রযুক্তিগত পশ্চৎপদতার সুযোগ নিয়ে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে অধীন করে। আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা কি এর সঙ্গে আপোস করতে পারি? এই হুমকির বিরুদ্ধে দেশের অবিচ্ছেদ্যতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অপরিহার্য দায়িত্ব। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমাদের দেশের মুক্তি এনেছিলেন যে পূর্বপুরুষরা তাদের মহিমা কি আমরা উঁচুতে তুলে ধরব না? তাদের স্বপ্ন কেবল তখনই পরিপূর্ণ হবে যখন আমরা প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারব।
অগ্নি উৎক্ষেপণ পর্যন্ত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়েছিল আমাদের দেশের নিরাপত্তা রক্ষার কঠোর প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালনের জন্য, আমাদের চারপাশের দেশগুলোর হাঙ্গামা থেকে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষা করার জন্য, এবং বাইরের আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দিতে। এখন অগ্নি তৈরি হওয়ায় ভারত এমন এক স্তরে উপনীত হলো যে, যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সে প্রতিরোধ করার সক্ষমতা অর্জন করল।
আইজিএমডিপির পাঁচ বছরের কাজের পূর্ণতা ছিল অগ্নি। আমাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে পৃথ্বী ও ত্রিশূল আগেই সংযোজিত হয়েছিল, নাগ ও আকাশ আমাদের নিয়ে যায় এমন স্তরে যেখানে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা খুবই সামান্য অথবা একেবারেই নেই। এই দুই মিসাইল সিস্টেম ছিল বিশাল প্রযুক্তিগত ব্রেকথ্র। এগুলোর ওপর আমাদের আরও দৃষ্টিপাত করার প্রয়োজন ছিল।
১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে বোম্বাইয়ের মহারাষ্ট্র একাডেমি অব সায়েন্সেস আমন্ত্রণ জানাল জওহরলাল নেহরু স্মারক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। একটা দেশীয় এয়ার-টু এয়ার মিসাইল, যেটার নাম দিয়েছিলাম অস্ত্র, তৈরি করার আমার পরিকল্পনা স্কুটননানুখ বিজ্ঞানীদের সামনে তুলে ধরার এ সুযোগ আমি কাজে লাগলাম। এই মিসাইলটি হবে ইন্ডিয়ান লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফটের (এলসি)-এর জোড়। আমি তাদের বললাম যে, নাগ মিসাইল সিস্টেমের জন্য ইমেজিং ইনফ্রা রেড (আইআইআর) এবং মিলিমেট্রিক ওয়েভ (এমএমডব্লিউ) রাডার টেকনোলজির ক্ষেত্রে আমাদের কাজ মিসাইল টেকনোলজিতে আন্তর্জাতিক ভ্যানগার্ডের আসনে বসিয়েছে আমাদের। রি-এন্ট্রি টেকনোলজি অর্জনের কার্বন-কার্বন ও অ্যাডভান্সড কম্পোজিট ম্যাটারিয়ালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়ও আমি তাদের সামনে তুলে ধরলাম। অগ্নি ছিল একটা প্রযুক্তিগত প্রচেষ্টার ফলাফল যার শুরুটা করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, যখন দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রযুক্তিগত পশ্চাৎপদতার দীর্ঘ অসাড়তা ভেঙে বেরিয়ে আসার এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর অধস্থনতার মরা চামড়া ফেলে দেওয়ার।
১৯৮৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে পৃথ্বীর দ্বিতীয় ফ্লাইটও সফল হলো। আজ বিশ্বের সেরা সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল হিসাবে পৃথ্বী প্রমাণিত। এটা ২৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বহন করতে পারে ১০০০ কেজি ওয়ারহেড আর ৫০ মিটার রেডিয়াসের মধ্যে তা ডেলিভারি দিতে পারে। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত পরিচালনার মাধ্যমে অসংখ্য ওয়ারহেডের ভার ও ডেলিভারির দূরত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি অনুযায়ী। সবদিক থেকে এটা শতভাগ দেশীয় ডিজাইন, পরিচালনা, মোতায়েন। প্রচুর সংখ্যায় এটা তৈরি করা সম্ভব, যেহতু বিডিএলের উৎপাদন সুবিধাও এটার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে। বহুগুণ। সেনাবহিনী এর গুরুত্ব দ্রুত ধরতে পেরেছিল। তারা সিসিপিএর কাছে আবেদন জানিয়েছিল পৃথ্বী ও ত্রিশূল মিসাইল সিস্টেমের প্লেসিং অর্ডারের জন্য, এটা ছিল এমন একটা ব্যাপার যা আগে আর কখনও ঘটেনি।
৪. ধ্যান [১৯৯১-]
৪. ধ্যান [১৯৯১-]