.
কিছুটা সময় আমি অবসর নিলাম, ডিআরডিএল-আরসিআইয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য আইটিআরে রেখে এলাম আমার দলকে। ১৯৮৯ সালের ৮ মে কর্ম ঘন্টা শেষ হওয়ার পর ডিআরডিএল-আরসিআইয়ের কর্মীরা জড়ো হয়েছিল। আমি বক্তৃতা দিলাম ২০০০-এরও বেশি ব্যক্তির জমায়েতে। অগ্নির মতো কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম সুযোগ দেওয়া হয় খুব কমই। আমাদের বিশাল এক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বড়ো সুযোগের সঙ্গে সমানভাবে আসে বড়ো চ্যালেঞ্জও। আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয় আর আমরা সমস্যার কাছে মাথা নত করতে পারি না। দেশ আমাদের কাছে সফলতা আশা করে। এখন সাফল্যের জন্য লক্ষ্যস্থির করা যাক। আমার বক্তৃতা প্রায় শেষ করেছি, ঠিক তখন, আবিষ্কার করলাম আমার লোকদের আমি বলছি, আমি আপনাদের কাছে অঙ্গীকার করছি, এ মাস শেষ হবার আগেই সফলভাবে অগ্নি উৎক্ষেপণের পর আমরা ফিরে আসব।
দ্বিতীয় প্রচেষ্টার সময় যে অংশে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ অনুযায়ী কন্ট্রোল সিস্টেম নতুন করে ঘষেমেজে ঠিকঠাক করা হলো। এ কাজের ভার দেওয়া হয়েছিল একটা ডিআরডিও-আইএসআরও দলের ওপর। তারা আইএমআরওর লিকুইড প্রোপেল্যান্ট সিস্টেম কমপ্লেক্স (এলপিএসসি)-এ ফাস্ট স্টেজ কন্ট্রোল সিস্টেম মেরামতির কাজ সম্পন্ন করল। বিপুল একাগ্রচিত্ততা ও ইচ্ছাশক্তির জোরে রেকর্ড সময়ের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারল তারা। এতে বিস্ময়ের কিছু ছিল না যে শত শত বিজ্ঞানী ও কর্মী অবিরাম কাজ করে মাত্র ১০ দিনেই সিস্টেমটাকে প্রস্তুত করে ফেলল। এগারো তম দিনে পরিশোধিত কন্ট্রোল সিস্টেম নিয়ে ত্রিবান্দ্রাম থেকে বিমান আকাশে উড়ল আর আইটিআরের কাছেই ল্যান্ড করল। কিন্তু এবার বাধা হয়ে উঠল শত্রুর মতো খারাপ আবহাওয়া। একটা ঘূর্ণীঝড়ের আশঙ্কা জোরদার হচ্ছিল। সমস্ত কর্মকেন্দ্র সংযুক্ত ছিল স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ও এইচএফ লিঙ্কের মাধ্যমে। দশ মিনিট বিরতিতে প্রবাহিত হতে শুরু করল আবহগত ডাটা।
শেষ পর্যন্ত উৎক্ষেপণের শিডিউল নির্ধারিত হলো ২২ মে ১৯৮৯। তার আগের রাতে ড. অরুণাচলম, জেনারেল কেএন সিং ও আমি একত্রে হাঁটছিলাম প্রতিরক্ষামন্ত্রী কেসি পন্তের সঙ্গে। উৎক্ষেপণ দেখতে তিনি আইটিআর-এ এসেছিলেন। রাতটা ছিল পূর্ণিমার, প্রচণ্ড জোয়ার ছিল সমুদ্রে এবং ঢেউ সগর্জনে আছড়ে পড়ছিল, যেন সেই মহাসর্বশক্তিমানের গৌরব ও ক্ষমতার গান গাইছিল। আমরা কি আগামীকাল অগ্নি উৎক্ষেপণে সফল হবো? এ প্রশ্ন ছিল আমাদের সবার মনেই, কিন্তু আমরা কেউই চন্দ্রালোকিত রাতের মোহিনী সৌন্দর্য্যের ঐন্দ্রজালিকা ভাঙতে চাইছিলাম না। দীর্ঘ। নীরবতার পর অবশেষে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কালাম! আগামীকাল অগ্নি উৎক্ষেপণের সাফল্যে কী রকম উৎসব করতে বলেন আপনি আমাকে? প্রশ্নটা ছিল সাধারণ, এর জবাব কী হতে পারে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে আমার মাথায় এল না। আমি কী চাই? আমার নেই কী? আর কী আছে যা আমাকে আরও সুখী করবে? আর তখনই আমি উত্তরটা খুঁজে পেলাম। আরসিআইতে লাগানোর জন্য আমাদের ১০০০০০ চারাগাছ প্রয়োজন, আমি বললাম। তার মুখ বন্ধুত্বের আভায় আলোকিত হয়ে উঠল। অগ্নির জন্য ধরিত্রী মাতার আশীর্বাদ কিনছেন আপনি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কেসি পন্ত সরস জবাব দিলেন। আগামীকাল আমরা সফল হবো, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করলেন।
পরদিন অগ্নি উৎক্ষিপ্ত হলো ০৭১৪ ঘন্টায়। উৎক্ষেপণটা ছিল নিখুঁত। একেবারে কেতাবি ট্রাজেক্টরি অনুসরণ করল মিসাইলটা। সমস্ত ফ্লাইট প্যারামিটার কাজ করল যথাযথ। ব্যাপারটা ছিল দুঃস্বপ্নময় ঘুম থেকে এক সুন্দর সকালে জেগে ওঠার মতো। পাঁচ বছর বিভিন্ন কেন্দ্রে অবিরাম কাজ করার পর অবশেষে আমরা লঞ্চ প্যাডে পৌঁছেছি। গত পাঁচ সপ্তাহে আমাদের বসবাস করতে হয়েছে ধারাবাহিক সংকটের ভেতর। সমস্ত ব্যাপারটা থামিয়ে দেওয়ার চাপ ছিল আমাদের ওপর সবখান থেকেই। সে চাপ আমরা সহ্য করেছিলাম। আর আমরা শেষ পর্যন্ত আমাদের কাজটা করতে পেরেছি। এটা ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম একটা মুহূর্ত। মিসাইলটার ৬০০ সেকেন্ড উড্ডয়ন এক মুহূর্তের মধ্যেই আমাদের এতদিনের অবসাদ ধুয়ে দিল। আমাদের প্রচণ্ড শ্রমের বছরগুলোর কী বিস্ময়কর উত্থান। সেই রাতে আমার ডাইরিতে লিখেছিলাম:
Do not look at Agni
as an entity directed upward
to deter the ominous
or exhibit your might.
It is fire
in the heart of an Indian.
Do not even give it
the form of a missile
as it clings to the burning pride of this nation
and thus is bright.
প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী অগ্নির উৎক্ষেপণকে বললেন নিজস্ব উপায়ে। আমাদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষার অব্যাহত চেষ্টার এ এক বিশাল অর্জন। অগ্নির মাধ্যমে প্রদর্শিত প্রযুক্তি আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য অগ্রসর প্রযুক্তির দেশীয় উন্নয়নের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন। আপনার প্রচেষ্টায় দেশ গর্বিত, তিনি আমাকে বললেন। প্রেসিডেন্ট ভেঙ্কটরমন অগ্নির সাফল্যে তার স্বপ্ন পূরণ দেখতে পেলেন। সিমলা থেকে তিনি তারবার্তা পাঠালেন, আপনার কঠিন পরিশ্রম, প্রতিভা আর আত্মোৎসর্গের এই হলো উপহার।