একটা এফআরপি কম্পোজিট বিন্যাস্ত করা হয় ম্যাট্রিকসে ইনঅর্গানিক ফাইবার বুননের মাধ্যমে এতে এফআরপি কম্পোজিট জমাট হয় এবং অংশগুলোকে একটা আকার দেয়। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী টিইআরএলএসকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস সায়েন্স কক্ষ্যনিটির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে থুম্বায় আসেন। এ উপলক্ষ্যে তিনি আমাদের গবেষণাগারে দেশের প্রথম ফিলামেন্ট উইন্ডিং মেশিন প্রদান করেন। এই ঘটনা আমার দলকে বিপুল পরিতৃপ্তি এনে দিল, যে দলে ছিলেন সিআর সত্য, পিএন সুব্রামানিয়ান ও এমএন সত্যনারায়ণ। নন ম্যাগনেটিক পেলোড হাউজিং বানাতে আমরা তৈরি করলাম হাই-স্ট্রেংথ গ্লাস ক্লোথ লেমিনেট এবং টু-স্টেজ সাউন্ডিং রকেটে সেগুলো মহাকাশে পাঠালাম। এ ছাড়া ৩৬০ এমএম ডায়ামিটারের মোটর কেসিংও আমরা পরীক্ষা করলাম। ধীরগতিতে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে, দুটো ভারতীয় রকেট জন্ম নিল থুম্বায়। নভঃদেব ইন্দ্রের দরবারের দুই পৌরাণিক নর্তকী রোহিনী ও মেনকার নামে রকেট দুটোর নামকরণ করা হয়েছিল। ভারতীয় পেলোড মহাকাশে উৎক্ষেপণের জন্য ফরাসি রকেটের প্রয়োজন ছিল না আর। ইনকসপারে অধ্যাপক সারাভাই যে আস্থা ও কমিটমেন্টের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন, সেই পরিবেশ না হলে কি এসব করা যেত? তিনি প্রতিটা ব্যক্তির জ্ঞান ও দক্ষতা কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি সমস্যা সমাধানে প্রত্যেককে সরাসরি অংশ নেওয়ার মনোভাব তৈরি করে দিয়েছিলেন। দলের সদস্যদের অংশগ্রহণে সমাধান হতো নির্ভেজাল আর বাস্তবায়নের দিকে সামগ্রিক কমিটমেন্টের ফল লাভের জন্য সমগ্র দলের আস্থা অর্জন করত তা।
অধ্যাপক সারাভাই নিজের হতাশা কখনও লুকানোর চেষ্টা করতেন না। তিনি সৎ ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কথা বলতেন আমাদের সঙ্গে। কোনো কোনো সময় আমি দেখতাম, ব্যাপার যতটা ইতিবাচক নয় তার চেয়ে বেশি ইতিবাচক করে তুলতেন তিনি, তারপর আমাদের উৎফুল্ল করে তুলতেন প্রত্যয় উৎপাদনের তার প্রায় জাদুকরি শক্তিতে। আমরা ড্রয়িং বোর্ডে থাকলে, তিনি উন্নত বিশ্ব থেকে কাউকে নিয়ে আসতেন টেকনিক্যাল সহযোগিতার জন্য। আমাদের সামর্থ্য প্রসারিত করতে আমাদের সবার প্রতি ওটাই ছিল তার চ্যালেঞ্জের ধারা।
একই সময়ে, আমরা কোনো নির্দিষ্ট বিষয় অর্জনে ব্যর্থ হলেও, যেটুকু আমরা অর্জন করতাম তারও প্রশংসা করতেন তিনি। প্রথম রোহিনী-৭৫ রকেট যখন ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর টিইআরএলএস থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, সেই সময় আমরা প্রায় সবাই তার বশীভূত ছিলাম।
পরের বছর প্রথম দিকে অধ্যাপক সারাভাই জরুরি ভিত্তিতে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন দিল্লিতে। এতদিনে আমি অধ্যাপক সারাভাইয়ের কর্ম পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি সবসময় উদ্যম আর আশাবাদিতায় পরিপূর্ণ ছিলেন। মনের ওই রকম একটা অবস্থায় অনুপ্রেরণার আকস্মিক ঝলক ছিল প্রায় স্বাভাবিক। দিল্লিতে পৌঁছে আমি একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য যোগাযোগ করলাম অধ্যাপক সারাভাইয়ের সেক্রেটারির সঙ্গে, আমাকে বলা হলো রাত সাড়ে তিনটার সময় হোটেল অশোকায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। দিল্লি খানিকটা অপরিচিত জায়গা। আমার মতো লোকের জন্য এখানকার আবহাওয়াও তেমন অনুকূল নয়, আমি অভ্যস্ত দক্ষিণ ভারতের গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায়, সুতরাং ডিনার শেষ করে হোটেলের লাউঞ্জে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি সবসময় একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি, সেটা এই চেতনায় যে খোদার সঙ্গে আমি কাজের একটা অংশীদারীত্ব রক্ষা করি। আমি সচেতন ছিলাম যে আমার যা ক্ষমতা আছে ভালো কাজের জন্য তার চেয়ে আরও বেশি সামর্থ্য আমার প্রয়োজন, আর একমাত্র খোদাই আমার প্রয়োজনীয় সাহায্য আমাকে দিতে পারেন। নিজের সামথ্যের একটা প্রকৃত হিসেব আমি করেছিলাম, তারপর ৫০ শতাংশ তা উন্নীত করি, আর নিজেকে সঁপে দিই খোদার হাতে। এই অংশীদারীত্বে আমার প্রয়োজনীয় সব শক্তি আমি পেয়েছি, এবং প্রকৃতই তার প্রবাহ অনুভব করেছি নিজের মধ্যে। আজ আমি নিশ্চিত করতে পারি যে এই শক্তির আকারেই খোদার রাজ্য বিরাজমান রয়েছে। তোমার মধ্যে, তোমার লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করতে আর তোমার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করতে।
বিভিন্ন ধরন ও স্তরের অভিজ্ঞতা আছে যা এই অভ্যন্তরীণ ক্ষমতায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কখনও কখনও, যখন আমরা প্রস্তুত থাকি, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ আমরা অনুভব করি অন্তর্দৃষ্টি ও জ্ঞান দিয়ে। এটা আসতে পারে অন্য আরেক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে, একটা শব্দ থেকে, একটা প্রশ্ন থেকে, একটা ইঙ্গিত বা এমনকি একটা দৃষ্টিপাত থেকে। অনেক সময় এটা আসতে পারে একটা বইয়ের ভেতর দিয়ে, একটা আলাপচারিতার ভেতর দিয়ে, একটা বাগবৈশিষ্ট্যের ভেতর দিয়ে, এমনকি কবিতার একটা লাইন অথবা ছবির একটা দৃশ্য থেকেও। সামান্যতম সতর্কতা ছাড়াই, নতুন কিছু ঢুকে পড়ে তোমার জীবনে আর শুরু করতে একটা গোপন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, একটা সিদ্ধান্ত যে তুমি সম্পূর্ণ অসচেতন থাকবে হয়তো।
অভিজাত লাউঞ্জের চারদিকে আমি তাকালাম। কেউ একজন একটা বই ফেলে রেখে গিয়েছিল কাছের একটা সোফার ওপর। যেন সেই ঠান্ডা রাত্রির ক্ষুদ্র ঘন্টাগুলো কিছুটা উষ্ণ চিন্তায় পূর্ণ করতে আমি বইটা তুলে নিলাম এবং পৃষ্ঠা ওল্টাতে শুরু করলাম। আমি অবশ্যই বইটার কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টেছিলাম, কিন্তু আজ আর তার কিছু মনে করতে পারি না।