আমার জীবনের তৃতীয় পর্যায় শুরু হয় তখন যখন আমি ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রপ্রযুক্তি অর্জনের মিশনে যোগ দিই। ডিএই (ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাটমিক এনার্জি) এবং ডিআরডিওর সাথে পার্টনারশীপ করে ও সশস্ত্র সেনাবাহিনীর প্রহরায় ভারতের নিউক্লিয়ার মিশন শুরু হয়েছিল। আজ সে মিশন সফলভাবে শেষ হয়েছে।
যাহোক, কচিকাঁচা শিশুরা যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, গত চল্লিশ বছরে সংঘটিত কোন ঘটনা আপনাকে সবচে বেশী আনন্দ দিয়েছে? তখন তাদের বলি, আমি সবচে খুশি হই তখন যখন দেখি হৃদরোগীরা তাদের ধ্বমনীতে কেআর করোনারী স্টেন্ট সঞ্চালন করে সুস্থ্য বোধ করছে অথবা পঙ্গু শিশুরা এফআরও (ফ্লোর রিঅ্যাকশন অর্থোসিস) ক্যালিপারের সাহায্যে তাদের চলাফেরার কষ্ট কিছুটা লাঘব করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই দুটি উপাদানই এসেছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি থেকে।
এ পর্যায়ে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়াধীন আমি একটানা আট বছর টিআইএফএসি (টেকননালজি ইনফরমেশন, ফোরকাস্টিং অ্যাণ্ড অ্যাসেসমেন্ট কাউন্সিল)র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এ সময়ে ২০২০ সালের সম্ভাব্য প্রযুক্তির কথা মাথায় রেখে আমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ৫ হাজার বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদের মধ্য থেকে ৫শ বিশেষজ্ঞ বাছাই করে একটি টিম গঠন করি। পরবর্তীতে ভারতের প্রযুক্তি ক্ষেত্র ও জাতীয় প্রতিরক্ষার যৌথ উদ্যোগে ইণ্ডিয়া মিলেনিয়াম মিশনস (আইএমএম ২০২০) এর উত্থান ঘটে। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে ভারত সরকারের প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করার পর আমার প্রধান কাজ ছিল সরকারের কাছে আইএমএম-২০২০ এর কর্মপরিকল্পনা ব্যাখ্যা করা। এ পরিকল্পনাটি ছিল মূলত ভারতকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার রোডম্যাপ। পাশাপাশি শিক্ষা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়নও বর্তমান উন্নয়ন ধারায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আমি দায়িত্বে থাকাকালে সরকারের অনুমোদনের জন্য কেবিনেটে একটি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। আমার জীবনের এই তৃতীয় পর্যায়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত ওই কর্মপরিকল্পনার সহায়তায় অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে যা আমাদের সামাজিক চাহিদা পূরণেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর আমি বুঝতে পারি আমি মানব জীবনের তৃতীয় পর্যায়ের পরিপাক অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। আমার এ ধারণা আরও পোক্ত হল মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ২ অক্টোবর যেদিন আমি কেরালার কোল্লামে অবস্থিত মাতা অমৃতানন্দময়ীর আশ্রম পরিদর্শন করলাম। মাতা ওই সময় প্রজ্ঞাবান ও ধীশক্তি সম্পন্ন ভবিষ্যত নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় আধ্যাত্মবাদ ও দর্শনের সন্নিবেশ ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
২০০১ সালের ১২ অক্টোবর, আমার ৭০তম জন্মদিনের মাত্র ৩দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি পদত্যাগের আবেদন করি। তিনি অনুমতি দিলেন না। আমি মেনে নিলাম।
যাহোক এখন আমি ভারতের বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করছি নিয়মিতই। বহু প্রদেশের বহু স্কুলে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরা ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও তামিল নাড় র স্কুলগুলোতে অজস্র শিক্ষার্থীর মধ্যে আমি প্রায়ই বক্তব্য দিই। তামিল নাড়ু তে কিছুদিন আগে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে আমি ভাষণ দিয়েছিলাম। আমি খেয়াল করে দেখেছি ছোট ছোট শিশুকিশোরদের সংগে আমার মেজাজ ভালো মেলে। আমি তাদের কল্পনার সংগে শেয়ার করতে পারি। সবচে বড় কথা হলো তাদের সংগে কথোপকথনের মাধ্যমে আমি তাদের ভেতরে বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারি। এই গভীর আগ্রহই তাদেরকে ভবিষ্যতের উন্নত ভারত গড়তে সহায়তা করবে।
আজ জীবন সায়াহ্নের কাছাকাছি এসে মনে হচ্ছে, আমি কি মানবজীবনের চতুর্থ পর্যায়ে যেতে পারব? আমি আদৌ সফল হতে পারবো? এর উত্তর আমি জানি না। কিন্তু একটি বিষয় আমি ভালো করেই জানি, বড় হবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির চেয়ে বড় শক্তি স্বর্গে-মর্তে কোথাও নেই। স্বপ্ন হলো এমন এক অমিত শক্তির আধার যা হৃদয়ে ধারণ করার সংগে সংগে মানুষের বস্তু জগৎ ও আধ্যাত্মিক জগত সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বিগত কয়েক বছর ধরেই গবেষণা ও শিক্ষকতা করার নেশা আমার মাথায় ভর করেছে। এ কারণেই বারবার বিভিন্ন স্কুলে শিশুদের কাছে ছুটে যাই। সৃষ্টির উল্লাসে তরুণ প্রজন্ম মেতে উঠেছে, ভাবলেই এক শিহরণ অনুভব করি আমি। আগামী দিনের জাতি গঠনের এই প্রচণ্ড শক্তিগুলো যাতে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে তার জন্য বয়স্কদের কাঁধে কত দায়িত্ব। তাদের পরিচর্যায় আমাদের ভাবতে হবে। ভাবতে হবে কী করে অতীতের ভুল ত্রুটিগুলো আবার শুধরে নেওয়া যায়।
২. আমাদের একজন ‘রোলমডেল’ দাও
২. আমাদের একজন ‘রোলমডেল’ দাও
Men of ten become what they believe themselves to be. If I believe I can not do something, it wakes me inca pable of doing it. But when I believe I can, then I acquire the ability to do it even if I didnt have it in the beginning.
–Mahatma Gandhi
কেন বারবার বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থীদের সংগে আমি দেখা করি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাকে ছাত্রজীবনে ফিরে যেতে হয়। রামেশ্বরম দ্বীপ থেকে আমি উঠে এসেছিলাম। তারপর কী সুদীর্ঘ যাত্রা! আমার পেছনের দিনগুলোর দিকে তাকালে নিজের কাছেই তা অবিশ্বাস্য মনে হয়।