জামশেদজি নুসরাবানজি টাটা ভারতে প্রথম ইস্পাত শিল্পের সূচনা করেছিলেন, যদিও ব্রিটিশ সরকার তার এ আইডিয়া সমর্থন করেনি। আচার্য পি. সি. রায় ভারতের কেমিকেল ও ফার্মাসিউটিক্যালস্ শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিচর্যা করেছিলেন। এসব মহাত্মাদের হাতেই আমরা ভারতের ভুবন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো সৃষ্টি হতে দেখেছি। জে. এন. টাটা ব্যাঙ্গালোরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। পন্ডিত মদনমোহন মালবী বানারসে গড়ে তুলেছিলেন বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়। স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।
বরোদার মত বিভিন্ন স্থানেও কিছু কিছু প্রগতিশীল মহারাজারাও বহু বিশ্ববিদ্যালয় গড়েছেন। এমন বহু দৃষ্টান্ত বহু স্থানে ছড়িয়ে আছে। এসব কাজের পেছনে তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল সেটা হল ভারতের জাগরণ। বিশ্বে ভারতের উত্থান নিশ্চিত করা। বিশ্বে অন্যদের মত ভারতও সব কিছু করতে পারে- এটাই তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।
আমরা কি তাদের সেই আদর্শের অবস্থানে এখনও আছি? তাদের সেই তেজোদীপ্ত আকাঙখা সফল করার বাসনা কি আমরা লালন করতে পেরেছি? আমরা কি এ দৃশ্য দেখে যেতে পারব না যে ভারতের তৈরী গাড়িগুলো ফ্রাঙ্কফুর্ট অথবা সিউলের রাজপথে আমাদের সাফল্য গাঁথা এঁকে দিয়ে যাচ্ছে?
অথবা আমরা কি কোনদিন দেখতে পারব না যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান অথবা চীনে ভারত পাওয়ার স্টেশন নির্মাণ করে দিচ্ছে? যদি আমাদের উচ্চাশাগুলোকে নিম্নগামী করে রাখি তাহলে সে সম্ভাবনা অনেক দূরবর্তী হয়ে পড়বে।
তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আজকে ভারতের সফটওয়ার সেক্টর খুব ভাল অবস্থানে চলে এসেছে, কিন্তু হার্ডওয়ার যন্ত্রপাতির প্রায় সবকিছুই আনতে হচ্ছে বিদেশ থেকে।
আমরা কি এই অনগ্রসরতা কাটিয়ে উঠতে পারব না? ভারত কি এমন কোন অপারেটিং সিস্টেমের ডিজাইন আবিষ্কার করতে পারবে না যা বিশ্বের কম্পিউটার মার্কেটে একচ্ছত্র আধিপত্য চালাতে পারে? আমাদের রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে কাঁচা লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের মত জিনিস যার মূল্য বিশ্ববাজারের অন্যান্য দ্রব্যের তুলনায় খুবই কম। আমরা এই কাঁচামালগুলোকে সদূর প্রসারী ও ব্যাপক চাহিদাভিত্তিক পণ্য সামগ্রীতে কি রূপান্তর করতে পারি না যা বিশ্ববাজারে আধিপত্য গড়ে তুলতে পারে?
আমাদের কয়েকশ প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনকারী ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে। তারপরও ভারত কেন মেইন ব্যাটল ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, এয়ারক্র্যাফট, বন্দুক ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরী করে বিশ্ব বাজারে ছাড়তে পারছে না?
আমাদের মেধাবী ও কর্মঠ জনশক্তি ও মৌলিক ভৌত অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা তা পারছি না? আমাদের মূল অভাবটা কীসের?
আসুন, আমরা সবাই ভেবে দেখি এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কী কী বিষয় আমাদের অনগ্রসর করে তুলছে? কোন ব্যক্তি স্বার্থ নয়, কোন একক শিল্প প্রতিষ্ঠান, সংগঠনের স্বার্থে নয়, সকলের সম্মিলিত স্বার্থে এবং সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় অগ্রগতির কথা মাথায় রেখে অগ্রসর হলে ভারতের উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের মূল শক্তিকে উত্থিত হতে হবে দেশপ্রেম থেকে। আমাদের এমন একটি ভিশন থাকতে হবে যার সংগে সমগ্র জাতীয় স্বার্থ জড়িত।
উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে কোন কোন প্রদেশ অন্যান্য প্রদেশ অপেক্ষা ভাল করছে। জাতীয় প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তরুণরা বেশ সাফল্য অর্জন করছে। ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, মুম্বাই, দিল্লি এবং হায়দ্রাবাদ বাণিজ্যিক কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠেছে। কিন্তু তথাপি দেশের সামগ্রিক তথ্য-প্রযুক্তির বিচারে এ উন্নয়ন এখনও অপ্রতুল। আপনি যদি তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রকে মিশন হিসেবে নিতে চান তাহলে প্রথমেই দরকার জনশক্তি। এই সর্বোচ্চ মেধার ক্ষেত্রে কাজ করতে হলে ওই শহরগুলোয় আরও বেশী শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে।
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো–ত্রিপুরা, আসাম ও ঝাড়খণ্ড সফর করে সেখানে অজস্র প্রাকৃতিক সম্পদ উপযোগীতা সৃষ্টির অভাবে নষ্ট হতে দেখেছি। বাঁশ ও বাঁশজাতীয় পণ্যসহ বনজ সম্পদের ওপর নির্ভর করেই ত্রিপুরার অর্থনীতি চলছে। এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসসহ নানা ধরনের খনিজ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। এ রাজ্যে ভ্রমণ, যোগাযোগ ভিত্তিক ব্যবসা করা খুবই কঠিন। রাজ্যটি একরকমের এক ঘরে অবস্থায় রয়েছে। ঝাড়খন্ডেও খনিজ ও বনজ সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। কিন্তু সে সম্পদের সঠিক উপযোগীতা এখনও তৈরী করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। স্থানীয় সম্পদ সঠিকভাবে পণ্য সামগ্রীতে রূপান্তর করে রাজ্যটি সংস্কার করা জরুরী।
আসামে কোন সম্পদের ঘাটতি নেই এবং সেখানে বেশ মজবুত শিক্ষা অবকাঠামো রয়েছে। উন্নত দেশ গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও জনশক্তি থাকার পরও সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সহিংস কার্যক্রমের জন্য অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। সবার যৌথ উদ্যোগ আসামের মানুষকে এক ছাতার নিচে আনতে পারে।
তামিল নাড়, অন্ধ্র প্রদেশ, পাঞ্জাব এবং কর্নাটকের আজকের এই উন্নয়নমুখী অগ্রগতির পেছনে রাজ্যের সার্বিক ও সমন্বিত পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে তারা স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে এ রাজ্যগুলোর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।