আরেকটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প বর্তমানে চালু রয়েছে। সেটির নাম রিচ (আরইএসিএইচ-রিলেভেন্স অ্যান্ড এক্সিলেন্স অব অ্যাচিভিং নিউ হাইটস্ ইন এডুকেশন ইনস্টিটিউশনস্)। এ প্রকল্পে ৮০ থেকে ১০০টি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই সেন্টারগুলো সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠক্রম অনুসরণ করছে এবং সর্বোচ্চ সফলতা অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সেন্টারগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করছে, একে অন্যের সংগে মতামত আদান প্রদান করছে এবং প্রয়োজনে সম্মিলিত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে পাতিয়ালা, ডিব্ৰুগড়, মুম্বাই, থানজাবুর এবং সুরাটের শিল্পভিত্তিক জৈব প্রযুক্তি, আধুনিক কম্পিউটিং ও ইনফরমেশন প্রসেসিং, পেট্রোলিয়াম মজুদকরণ কারখানার নিরাপত্তা, এনভায়রোনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ কারখানার আশেপাশে গড়ে উঠছে কোর (সিওআরই–সেন্টারস্ অব রিলেভেন্স অ্যান্ড এক্সিলেন্স)।
কৃষি বিষয়ক রিচ প্রকল্পের সাফল্য দেখে উৎপাদন ও শিল্প বিষয়ক কোর প্রোগ্রামে শিল্প-কারখানাগুলো যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন কিন্তু আশে পাশের এলাকার শিল্প-কারখানার মালিকরা তাদের এলাকায় কোর প্রতিষ্ঠার মোট খরচের ৪০ শতাংশ স্বেচ্ছায় ব্যয় করতে চাইছে। কোর প্রতিষ্ঠিত হলে এর বিনিময়ে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনশক্তি পাবে, অন্যদিকে গবেষণাগারে সর্বাধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তিও তাদের কাজে লাগাতে পারবে। প্রযুক্তি উন্নয়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে শিল্পপতিদের অংশীদারী হবার আগ্রহে আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। সমন্বিত শিক্ষা পদ্ধতির নেতৃস্থানে প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টা হিসেবে ড. এম. এস. বিজয় রাঘবনকে পাওয়ায় আমরা আরও বেশী আশাবাদী হয়েছি। তার অভিনব আইডিয়া এই শিক্ষা প্রকল্পের প্রতি সবার প্রতিশ্রুতিশীল মানসিকতা গড়তে সহায়তা করেছে।
আরেকটি গ্রাম ভিত্তিক সহযোগীতামূলক প্রকল্পের উদাহরণ গড়ে উঠেছে মাদ্রাজের আইআইটির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক পি.ভি. ইন্দিরেসানকে ঘিরে। পূর্বোল্লেখিত আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গ্রামে শহরের আধুনিক সুবিধা সৃষ্টি করে আরও বেশী কর্মসংস্থানের সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রাম ও শহরের ব্যাবধান কমানোর জন্য তার প্রোগ্রাম কাজ করে যাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে তার প্রোগ্রামের মডেল অনুযায়ী অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে গ্রামের মানুষ শহরমুখী হবে না। ক্রমশ গ্রামগুলো আরও উন্নত হয়ে উঠবে। বর্তমানে গ্রামগুলোকে পারস্পরিক সহযোগীতায় এগিয়ে আসার মাধ্যম হিসেবে বহু প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং গ্রামগুলোর মধ্যে সার্বিক যোগযোগের দূরত্ব কমে আসছে।
গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে আমরা পুরা নামের একটি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। গ্রামগুলোর মধ্যে বহুমুখী সংযোগ ব্যবস্থা চালুর জন্য আমরা চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছি। সেগুলো হল : পদার্থ বিদ্যা, ইলেক্ট্রনিক্স, অর্থনীতি ও সমন্বিত শিক্ষা। এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিষয় হলো তথ্যপ্রযুক্তি পরিচালিত টেলিমেডিসিন।
গত বছর মে মাসে আমি হায়দ্রাবাদের কেয়ার হাসাপাতাল পরিদর্শন। করেছিলাম। টেলিমেডিসিন সিস্টেমের উদ্বোধনী দিন উপলক্ষ্যে হাসপাতালের হল রুমে সেদিন ডাক্তার, কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞদের মিলন মেলা বসেছিল। টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বহু দূরের রোগীকে পরীক্ষা করার ও ব্যবস্থাপত্র দেবার আয়োজন চলছিল। এ পদ্ধতিতে পাকস্থলির জটিলতা বিষয়ক কোন রোগীকে ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফী যন্ত্রের নিচে শুইয়ে দেওয়া হবে। মজার ব্যাপার হল রোগী থাকবে বহু দূরে কিন্তু হায়দ্রাবাদে বসেই তার রোগ ডায়াগনোসিস করা হবে ইলেক্ট্রোমেডিসিন পদ্ধতিতে। ডাক্তার ও রোগী স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কথোপকথন করবে। হাই রেজুলেশন ইমেজ ট্রান্সফারের মাধ্যমে ইসিজি ডাটা এবং ক্লিনিক্যাল ইনফরমেশন সঠিক সময়ে পাঠানো সম্ভব হয়।
আমি মনিটরে বহুদূরের একটি হাসপাতালের কোন এক রোগীর পাকস্থলি ও হৎপিন্ডের জীবন্ত ছবি দেখলাম। দেখলাম দূরবর্তী সেই হাসপাতালের রোগীর চিকিৎসক ও হায়দ্রাবাদের বিশেষজ্ঞরা কীভাবে রোগীর সংকট নিয়ে আলোচনা করছেন। যেসব শহরে উন্নত চিকিৎসার ও বিশেষজ্ঞদের অভাব রয়েছে তাদের সেবা দানের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি আশাবহ পদ্ধতি। টেলিমেডিসিন পদ্ধতি অজ গ্রামেও আধুনিক চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে পারে এবং গ্রামের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে শুরু করে আঞ্চলিক হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতালের সংগে রাজধানীর সর্বোন্নত হাসপাতালের যোগাযোগ স্থাপন করে দিতে পারে। আধুনিক স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন এবং তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে, প্রকৌশল বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সম্মিলন ঘটিয়ে কয়েকশ মাইল দূরের একজন রোগীকে কীভাবে চিকিৎসা করা হচ্ছে- এটা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম।
এক বন্ধুর পরামর্শ অনুযায়ী আমার চোখ পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ১৯৯০ সালে মাদুরাইয়ে অবস্থিত অরবিন্দ চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে দেখি অসংখ্য চোখের রোগী ভর্তি হবার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ লম্বা লাইন। কিন্তু লাইন লম্বা হলেও দ্রুতগতিতে তা শেষ হচ্ছিল এবং ওই লাইনে দাঁড়িয়ে আধঘণ্টার মধ্যেই ড. জি. নাচিয়ারের সাক্ষাত পেলাম। তিনি হাসপাতালে ভর্তির জন্য সুপারিশ করলেন। হাসপাতালের ভর্তি ফি দিতে গিয়ে এক বিপত্তি বাধল। আমি কাউন্টারে চেক দিতেই ক্যাশ কাউন্টারে বসা মেয়েটি তা গ্রহণে অস্বীকার করলো। বললো চেক তাদের সেখানে গ্রহণযোগ্য নয়, অথচ আমার কাছে তখন নগদ টাকা নেই। আমি আবার ডা. নাচিয়ারের কাছে ফিরে এলাম এবং আমার সমস্যা তার কাছে খুলে বললাম। ভদ্রমহিলা সহজেই আমার সমস্যা বুঝতে পারলেন এবং আমাকে ভর্তি করতে রাজী হলেন। কয়েকদিনের চিকিৎসা শেষে আমাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হল। এর কদিন পরে ডা. নাচিয়ারের কাছ থেকে একটি চিঠি পেলাম। ভদ্রমহিলা আমাকে চিনতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হাসপাতাল ছাড়ার দিন আমার নিরাপত্তা কর্মীরা হাসপাতালে আমার খোঁজ করতে যাওয়ার পর তিনি আমার সম্পর্কে জানতে পারেন।