Determine the things can and shall be done, and then we shall find the way.
— Abraham Lincoln
যখন আমাদের জ্ঞানলব্ধ অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে তখন দেশ দ্রুত প্রগতির পথে ত্বরান্বিত হবে; যেখানে থাকবে উচ্চশিক্ষিত প্রশাসকমণ্ডলী; আর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে রাজনীতিকদের ন্যূনতম উদার হস্তক্ষেপ।
আমার বিবেচনায় উন্নয়ন হলো একটি নিরাপত্তামূলক বিষয় যা দারিদ্র্য থেকে নিরাপত্তা দেবে। খাদ্য সংস্থানের নিশ্চয়তা দেয়, সামাজিক নিরাপত্তা দেয় এবং সর্বোপরি যা জাতীয় প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করে।
২০২০ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গঠনে ৫টি ক্ষেত্রকে আমরা আমাদের প্রধান কর্মলক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছি।
পাঁচটির মধ্যে আমরা কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর জোর দিয়েছি যার আওতায় বছরে ৩৬০ মিলিয়ন টন খাদ্য ও কৃষিজাত পন্য উৎপাদনের টার্গেট হাতে নেওয়া হয়েছে। কৃষি এবং কৃষি নির্ভর খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকল্প গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সাধন করবে যা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখবে।
দ্বিতীয় সংস্কার ক্ষেত্র হল বিদ্যুৎ। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সারাদেশে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা চালু অবশ্য জরুরী।
আমাদের তৃতীয় সংস্কারমূলক ক্ষেত্র হল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা। আমরা গবেষণা করে দেখেছি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, কেরালার মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক শিক্ষিত ও স্বাস্থ্য সচেতন, যে কারণে সে এলাকায় জন্মহার কমে এসেছে এবং সেখানকার মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠিক একইভাবে তামিল নাড়তেও জন্মহার অনেক কমে এসেছে যার প্রধান কারণ হিসেবে শিক্ষাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশেও শিক্ষার প্রসার ঘটায় সেখানকার জনসং রি কমেছে। জীবন যাত্রার মান আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। এই সমস্ত রাজ্যগুলোর শিক্ষা প্রবণতা বিহার ও উত্তর প্রদেশের এলাকাগুলোতে সম্প্রসারিত করা দরকার, কারণ বিহার ও উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও অনেক বেশী।
আমাদের চতুর্থ পরিকল্পনাধীন সংস্কার ক্ষেত্র হলো তথ্য প্রযুক্তি। দ্রুত শিক্ষা বিস্তার ও উন্নত জনস্বাস্থ্যের লক্ষ্য পূরণে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও পশ্চাৎপদ এলাকাগুলোকে দ্রুত আধুনিকায়নের আওতায় আনতে তথ্য প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করতেই হবে।
আমাদের পঞ্চম লক্ষ্য কৌশলগত ক্ষেত্রের উন্নয়ন। এক্ষেত্রে অবশ্য আমরা অনেকটা এগিয়ে এসেছি। পরমাণু, স্পেস এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রযাত্রা আশাব্যঞ্জক।
এই পাঁচটি ক্ষেত্রে আমাদের সমন্বিত অগ্রযাত্রা আমাদের খাদ্য, অর্থনীতি, সামাজিক ও জাতীয় প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সর্বস্তরের মানুষের সংগে সরকারী অধিদপ্তর ও পরিশক প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতামূলক বন্ধন তৈরী করা দরকার। সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবেই এই পারস্পরিক যোগাযোগ দরকার। ছোট পরিবার ও অধিক কর্মশক্তির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এটা কর্মসংস্থান ও সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন খাদ্যসংস্থাপনের নিরাপত্তা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের অগ্রগতি দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ শক্তি উন্নয়নের সর্বক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। শিল্প কারখানা ও কারিগরি উন্নয়নের পেছনে প্রকৌশলগত ও কারিগরি সহায়তা ব্যবস্থা জরুরী। মোটকথা একটি ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য এই পাঁচটি ক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি এই পাঁচ ক্ষেত্রের একটি সমন্বিত সংস্কার করা সম্ভব হয় তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী ৩০ থেকে ৪০ কোটি লোকের জীবনযাপনের মানে অভাবনীয়ভাবে উন্নতি আসবে।
আমি টিফাক (টিআইএফসি) টিমের সংগে একটা তিন বছর কৃষি, আধুনিক শিক্ষা এবং গ্রামীণ সংযোগ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে কাজ করেছি। একাজ করতে গিয়ে আমি চিনি, ফ্লাইঅ্যাশ এবং সুতা উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমার বিগত অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করেছি। বিখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী এস কে সিনহার নেতৃত্বে টিফাঁক মধ্য বিহার ও পূর্ব ভারতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। ১৯৯৮ সালের খরিফ ঋতুতে একটি রাজ্যের ৬টি ও অন্য রাজ্যের ৯টি গ্রাম এ প্রকল্পের অধীনে আনা হয়। প্রকল্পের বিজ্ঞান পদ্ধতিতে জমির মাটি পরীক্ষা, বীজ নির্ধারণ, চাষের মৌসুম, সার নির্ধারণ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করা হয়।
সে বছর বিজ্ঞানী ও স্থানীয় কৃষকদের পারস্পরিক সহযোগীতায় প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন আড়াই টন থেকে ৫ টনে উন্নীত হয়েছিল। সে বছর আমি এবং আমার বন্ধু ওয়াই এস রাজন সেখানকার কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেছি কৃষকরা দ্রুত ফসল কাটার যন্ত্রপাতি, গুদামজাতকরণ ব্যবস্থাপনা, বাজারজাতকরণ এবং ব্যাংক লোন সংগ্রহের বিষয়ে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ওই প্রকল্পের কাজে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, কৃষকরা যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে দলীয় পদ্ধতিতে চাষ করে তাহলে উৎপাদনের খরচ এবং সময় দুইই বাঁচে।