ড. মহালিঙ্গম উত্তর দিলেন, আমি তামিল পান্ডুলিপি বিশ্লেষণ করেছি যা ২৫০০ বছরের পুরনো। এখন আমি ৫০০০ বছর আগের তামিল পান্ডুলিপি নিয়ে গবেষণা করতে চাই! সেবারও আমার মনে হয়েছিল স্বপ্নদ্রষ্টারা বুড়ো হন না।
শিল্পের ক্ষেত্রে, ১৯৬০ সালে, ক্ষুদ্র ও বৃহদায়তন কারখানায় যুক্ত ছিল জনসংখ্যার ১১ শতাংশ। ১৯৯২ সাল পর্যন্তও এ প্রবণতা অব্যাহত ছিল। যাহোক, এ সংখ্যা ২৫ শতাংশে বৃদ্ধি করতে হবে ২০২০ সালের মধ্যে, এটা মাথায় রেখে যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি শ্লথ আর বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর প্রতিযোগিতাও ক্রমবর্ধমান। কর্মসংস্থানের প্যাটার্নও একটা নতুন আকার নেবে। ১৯৬০ সালের ২৫ শতাংশ থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক শিল্প ও পরিষেবায় নিয়োগ ১৯৯২ সালে বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অবকাঠাম রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্র, আটটি খাত ও বিনোদনের চাহিদার দিক থেকে এটা আরও ৫০ শতাংশ বাড়বে। এসব বৃহৎ পরিবর্তনের ফলে প্রয়োজন হবে আরও অধিক প্রশিক্ষিত জনবল। বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে আমাদের নেতৃস্থানীয়দের প্রস্তুত হতে হবে এই রূপান্তরের জন্য।
গ্রাম থেকে শহরে আগমনের হার থেকে এ দুয়ের জীবনমান সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হয়। আদর্শিকভাবে গ্রামীণ ও শহুরে এলাকাই হতে হবে আকর্ষণীয় যাতে গ্রাম ছেড়ে শহরে আগমনের হেতু কমে। এই আগমন শূন্যের কোঠায় নেমে এলে তা হবে উন্নয়নের চিহ্ন। আমরা সুখময় সেই ভারসাম্য কীভাবে অর্জন করতে পারি? পল্লীর উন্নয়নই এর একমাত্র সমাধান। তার মানে হল জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় সব কিছু গ্রামাঞ্চলেও সুলভ করা যা এখন কেবল শহরেই পাওয়া যায়। এতে একই মাত্রায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, এবং শহরাঞ্চলের মত একই পর্যায়ে। আরেকটা চ্যালেঞ্জ হল এসব সুবিধা দিতে হবে আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রতিবেশিক খরচের ক্ষুদ্র একটা অংশ দিয়ে যা বহন করবে শহরগুলোই।
প্রত্যাশাটা হল পরিবেশের কথা মাথায় রেখে কর্মসংস্থান বিস্তৃত করার এই সমন্বয় পল্লী অঞ্চলকেও আকর্ষণীয় করে তুলবে শহরাঞ্চলের মতই, যদি না তা শহরের চেয়েও আকর্ষণীয় হয়। তারপর, পল্লী উন্নয়ন থেকে প্রত্যাশা করা যেতে পারে যে এতে শহরে আগমন বন্ধ হয়ে যাবে। এইভাবে পিইউআরএর লক্ষ্য হল ফলিত পদার্থবিদ্যাগত এবং ইলেক্ট্রনিক জ্ঞান ও অর্থনৈতিক সমন্বয়।
ভারতের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে প্রতিবন্ধীরা অকিঞ্চিৎকর সমন্বয় ও ছোটখাটো বিষয়ে ভোগে। একটা রিংরোড আর উঁচু মানসম্পন্ন পরিবহন একগুচ্ছ গ্রামকে একসূত্রে গাঁথতে পারে। এভাবে সংযুক্ত গ্রামগুলো বিভিন্ন পরিষেবার সাহায্য প্রদানে একটা বড় বাজার সৃষ্টি করবে, কিন্তু এককভাবে তা সম্ভব নয়। রিংরোড আর পরিবহন একত্রে অবিলম্বে গ্রামগুলোকে একটা ভার্চুয়াল শহরে পরিণত করবে, যা হবে হাজার হাজার মানুষের একটা বাজার। এমন একটা অঞ্চল, যেখানে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও থাকবে, দ্রুত প্রবৃদ্ধির বিস্তর সম্ভাবনা ধারণ করবে- অধিক মানুষের মধ্যে যোগাযোগ থাকার ফলে অধিকহারে বিনিয়োগের আকর্ষণও তৈরি হবে, আবার অধিক বিনিয়োগে আকর্ষিত হবে অধিক সংখ্যক মানুষ ইত্যাদি। মূলত, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে একগুচ্ছ গ্রামের একটা বলয় বিনির্মাণ করা। উঁচু মানসম্পন্ন পরিবহন ও টেলিযোগাযোগ পদ্ধতি গড়ে ভোলার মাধ্যমে ওই বলয়ে গ্রামগুলোকে যুক্ত করা। আর বলয়ের মধ্যে অবস্থিত এলাকার স্কুল, হাসপাতাল ও অন্যান্য সামাজিক পরিষেবায় প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞদের আগমনে উৎসাহিত করা। এছাড়া ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা।
এই মডেলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পল্লী অঞ্চলে উন্নত জীবন মানের একটা নকশা, আর এতে বিশেষ পরামর্শও রয়েছে শহরের জনসংখ্যার আধিক্য হ্রাসেরও। স্বাভাবিক ভাবেই এটি আমাদের সবচেয়ে উদ্বেগজনক শহুরে সমস্যা। পানি সরবরাহ আর পয়ঃনিষ্কাশন জরুরি নাগরিক চাহিদার অন্যতম। একটা ন্যূনতম আকৃতির নিচে কোথাও বসতি দৃশ্যগ্রাহ্য হয় না, আবার বিদ্যমান ভিড়াক্রান্ত শহরের সঙ্গে তুলনীয়ও নয়। একই সঙ্গে, বিদ্যমান ভিড়াক্রান্ত শহর অর্থনৈতিকভাবে নতুন একটা শহরের সঙ্গে তুলনীয় হয় না যার ন্যূনতম আকৃতি সম্প্রসারণের সীমারেখা অতিক্রম করে গেছে। এখানে হিসেবটা হচ্ছে-~~ প্রচলিত শহরের আয়তন ১০ থেকে ৬ কিলোমিটার আর আকৃতি চতুষ্কোণ, অন্যদিকে মডেলটার আকার বলয়ের মত যার মধ্যে থাকবে অন্তত আট থেকে দশটা গ্রাম, মেধাবী সমাজ আয়তন হবে ৬০ বর্গ কিলোমিটার। এতে দরকার হবে মাত্র একটা পরিবহন পথ, যা চতুষ্কোণ আকৃতির শহরের তুলনায় অর্ধেক। এতে জংশন থাকবে না, শহরাঞ্চলের আটটির বিপরীতে এতে থাকবে একটিমাত্র রুট, সুতরাং লোকজনকে একটা লাইন পরিবর্তন করে আরেক লাইনে যেতে হবে না। তাতে পরিবহনের সময় বাঁচবে। অধিকন্তু, যেহেতু সমস্ত ট্রাফিক যুক্ত থাকবে একটি মাত্র রুটে, অতি দক্ষ ব্যাপক পরিবহন পদ্ধতিও হবে সাশ্রয়ী। ফলে জনগণের খরচ কমবে।
ভারতকে জ্ঞানের পরাশক্তিতে রূপান্তরের জন্য পল্লী উন্নয়ন অপরিহার্য। নির্দিষ্ট এলাকায় উন্নয়নের রোডম্যাপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আমাদের এ নিয়ে কাজ করতে হবে।