তারুণ্যের শক্তি উপলব্ধি করে এবং বয়োজেষ্ঠ্যদের প্রজ্ঞাকে সম্বল করে আমি আমার প্রযুক্তি কেন্দ্রীক উন্নয়ন পরিকল্পনায় হাত দিয়েছি। যেখানে মানুষ নতুন নতুন বাধা অতিক্রম করবে নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে।
সেখানে তারা বুঝতে চেষ্টা করবে কঠিন সমস্যা উৎরে কীভাবে সফলতার পথে আসতে হয়। আমরা আগেই আলোচনা করেছি কীভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়, কীভাবে প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবায়ন করতে হয়। আর কীভাবে আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগতিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করতে হয়। এতে কি সৃষ্টিচক্রের কিছুমাত্র ক্ষতি হতে পারে?
৫. দেশ প্রেম, রাজনীতি আর ধর্মের উর্ধ্বের ধর্ম
৫. দেশ প্রেম, রাজনীতি আর ধর্মের উর্ধ্বের ধর্ম
I do not care for liberation, I would rather go to a hun dred thousand hells, doing good to others (silently) like the spring, this is my religion.
–Swami Vivekananda
নিয়মিত হাঁটা আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। যেখানেই যাই না কেন প্রতিদিন ভোরে উঠে আমি অন্তত পাঁচ কিলোমিটার হাঁটি। সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য দর্শনের সংগে আমি যেন নিজেকে বেঁধে ফেলেছি। এ গ্রহের আরেকটি সকালকে স্বাগত জানাতে পাখিগুলো যখন গেয়ে ওঠে, তখন সে সুরে যেন আমার শ্রবণেন্দ্রিয় নতুন করে সঞ্জীবিত হয়।
প্রশান্ত বাতাস, পাখির গান, সূর্যোদয়–প্রকৃতির উপাদানগুলো প্রতিদিন উপভোগ করি আর ভাবি প্রকৃতি কী নিখুঁতভাবে এগুলোর সমন্বয় করে এমন একটি শান্তির মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি ভাবতে থাকি আর আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই।
আমি খুব ভাগ্যবান এ কারণে যে আমার কাজের কারণেই আমাকে বহু জায়গায় যেতে হয়েছে। এসকল সুন্দর সুন্দর জায়গা উপভোগের অভিজ্ঞতা আমার মনের দুয়ার খুলে দিয়েছে।
এমনই একটি মোহময়ী সুন্দর জায়গা উড়িষ্যার চন্ডিপুর। কলকাতা থেকে বালাসোরের দূরত্ব ২৩৪ কিলোমিটার আর বালাসোর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরেই চন্ডিপুর।
চন্ডিপুর মানেই হলো দুর্গা বা চন্ডিদেবীর অধিষ্ঠান ক্ষেত্র। এখানকার সমুদ্র সৈকত নিঃসন্দেহে ভারতের অন্যান্য সৈকতগুলোর চেয়ে সুন্দর। মৃদু জোয়ারের সময় তটসংলগ্ন প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জোয়ার প্লাবিত হয়ে পড়ে।
নির্জন সৈকত, সৈকতসংলগ্ন তমরীক্ষ গাছের পাতার মর্মরধ্বনি, আর মৃদুমন্দ বাতাস এক অনন্য নৈঃশব্দতার সৃষ্টি করে। সুবর্ণরেখা নদীটি সাগরের যেখানে এসে মিশেছে তার পাশের তটভূমি দিয়ে আমি বহুবার হেঁটেছি।
বড় বড় ঢেউগুলো যখন তীরে এসে আছড়ে পড়তো তখন আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যেতাম। মনে হতো ঈশ্বরের আশীর্বাদ যেন ঝরে ঝরে পড়ছে।
ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন– আইএসআরওর শ্রীহরিকোটা রেঞ্জ থেকে আমরা আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপন পরীক্ষা চালানো শুরু করি। কিন্তু আমাদের আলাদা একটি স্থায়ী মিসাইল টেস্ট রেঞ্জ দরকার ছিল।
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপন, রকেট ও নভোযান উৎক্ষেপনের স্থায়ী পরীক্ষাক্ষেত্র আইটিআর (ইনটেরিম টেস্ট রেঞ্জ) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৯ সালে।
বহুমুখী ক্ষেপণাস্ত্র ত্রিশুল, একাধিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ, ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নাগ মিসাইল, ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত করতে সক্ষম পৃথ্বী এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নিসহ বিভিন্ন শ্রেণীর ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা হয়েছে এখানে।
ইন্দো-রুশ যৌথ উদ্যোগে বানানো সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রাহমোস এর পরীক্ষা হয়েছে এই টেস্ট রেঞ্জে। এছাড়াও আইটিআর-এর সহায়তায় মাল্টিব্যারেল রকেট লঞ্চার পিনাকা ও পাইলটবিহীন এয়ার ক্র্যাফট লক্ষ্যর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপন হয় এখানেই।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে আইটিআরকে এমনভাবে সজ্জিত ও সক্ষম করে তোলা হয়েছে যে এখন সেখানে যে কোন ধরনের এয়ারবর্ণ উইপনের পরীক্ষা করা সম্ভব।
এখানে পরীক্ষীত হয় দূরপাল্লার মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম, হাল্কা যুদ্ধ বিমানের সমরাস্ত্র প্রযুক্তি ও মাল্টি টার্গেট উইপনস্ সিস্টেম।
সমুদ্র উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে ১৭ কিলোমিটার দূরবর্তী এলাকা জুড়ে আইটিআরের ব্যাপ্তি। এই বিশাল এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে ট্র্যাকিং সিস্টেম বা সমরযানের পথ চিহ্ন শণাক্তকারী প্রযুক্তি। তাছাড়া উৎক্ষেপিত নভোযানের ফ্লাইট পথ বা উডডয়ন রেখা শনাক্ত করার যন্ত্রপাতিও এখানে স্থাপন করা হয়েছে। আইটিআরে যেসব প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসানো হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– মোবাইল অ্যান্ড ফিক্সড ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেম, মোবাইল এস ব্যান্ড ট্র্যাকিং রাডার, ফিক্সড সিব্যান্ড ট্র্যাকিং রাডার, রেঞ্জ কম্পিউটার, ফটো প্রসেসিং সিস্টেম, মেটিওরোলজিক্যাল সিস্টেম এবং রেঞ্জ সেফটি সিস্টেম। রকেট অথবা অন্য কোন নভোযান উৎক্ষেপনের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সহায়তা করার জন্য সেখানে আরও আধুনিক প্রযুক্তির নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি বসানো হচ্ছে।
আইটিআর ধীরগতিতে হলেও নিশ্চিতভাবে বিশ্বমানের রেঞ্জ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
১৯৯৫ সালের জুলাই মাসের কোন এক নাতিশীতোষ্ণ রাতে ভূমি থেকে ভূমিতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপনাস্ত্র পৃথ্বীর সফল উৎক্ষেপনের পর সবাই খুব খোশ মেজাজে। প্রায় ১২শ টিম মেম্বারের ৩০ জন প্রতিনিধি আমরা। খুব গর্বভরে ভাবছিলাম–এর পরের প্রকল্প কী?