কর্নওয়াল বলল, তুমি ঠিক কথাই বলেছ প্রিয়তম। আর এডমন্ড, যথার্থ পুত্রের মতোই আন্তরিক তোমার কর্তব্যবোধ।
আনন্দে গদগদ স্বরে উত্তর দিল গ্লস্টার, ঠিক সে কারণে সে আহত হওয়া সত্ত্বেও সমঝোতা করেনি। অন্যায়ের সাথে।
কর্নওয়াল বলল, ওর খোঁজে আপনি চর পাঠান চারিদিকে। এ ব্যাপারে সবরকম সাহায্য আপনি পাবেন আমার কাছ থেকে। আর এডমন্ড, আমাদের এখন প্রয়োজন তোমার মতো সৎ, কর্তব্যপরায়ণ, বিশ্বাসী, বীর যুবকের। আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা তুমি সহচর রূপে আমাদের কাছাকাছি থাকো।
এই যদি আপনাদের ইচ্ছা হয়, তাহলে সততা আর বিশ্বাসযোগ্যতার গুণে আপনাদের স্নেহভাজন হতে পেরে আমি ধন্য মনে করছি নিজেকে, বলল এডমন্ড।
আনন্দের সাথে গ্লস্টারও সায় দিলেন তার কথায়।
রিগান বলল, হে মাননীয় আর্ল অফ গ্লস্টার। আপনি আমাদের পুরনো বন্ধু। এই অন্ধকার রাতে আমরা এখানে এসেছি একটা গুরুতর বিষয়ে আপনার পরামর্শ নিতে। আমাদের পিতাকন্যার বিরোধের ব্যাপারে কোনটি গ্রহণযোগ্য সে ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত জানালে বাধিত হব।
আগে আমার বাড়িতে চলুন। তারপর সবাই মিলে না হয় পরামর্শ করা যাবে–বলল গ্লস্টার।
রিগান বলল, বেশ, তাই চলুন।
অসওয়ান্ড বলল, নমস্কার বন্ধু। আমার প্রতি যদি তোমার বিন্দুমাত্ৰও ভালোবাসা থাকে, তবে সে ভালোবাসার দোহাই, দয়া করে আস্তাবলটা দেখিয়ে দাও আমাকে।
কেন্ট বলল, তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্রও ভালোবাসা নেই।
তাতে আমার কিছু এসে যায় না, উত্তর দিল অসওয়ান্ড।
লিপসবেরি পাউন্ডে গেলে কিন্তু গ্রাহ্য করাটা প্রয়োজন হবে, বলল কেন্ট।
অসওয়াল্ড বলল, আমার সাথে এভাবে ঝগড়া করছি কেন? আমি মোটেও চিনি না তোমাকে।
তবে আমরা কিন্তু দুজনে দুজনকে চিনি। তুমি হচ্ছ.পরান্নে পালিত একটা নিঃস্ব, দুৰ্বত্ত, কাপুরুষ ক্রীতদাস। মনে নেই কদিন আগে আমারই আঘাতে রাজার সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলে তুমি। এবার অস্ত্র ধর শয়তান— চিৎকার করে বলে উঠল কেন্ট।
অসওয়াল্ড বলল, চলে যাও তুমি। আমার কোনও শত্রুতা নেই তোমার সাথে।
রাগের সাথে কেন্ট বলতে লাগল, তোমার একমাত্র দোষ এই যে তুমি রাজার বিরুদ্ধে উদ্ধত, ঘৃণিত গনেরিলের লেখা চিঠি বয়ে নিয়ে এসেছী। পাঁজি শয়তান, তলোয়ার না বের করলে তোমার পা দুটোই কেটে নেব আমি।
ভয় পেয়ে অসওয়াল্ড যতই সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে লাগল, ছদ্মবেশী কেন্ট ততই আঘাত করতে লাগল তাকে।
খোলা তলোয়ার হাতে ঘরে ঢুকে এডমন্ড ছাড়িয়ে দিল তাদের দুজনকে। ত্রুদ্ধ কেন্ট বলতে লাগল, লড়াই করতে ভয় পোচ্ছ কেন হে ছোকরা!
অসওয়াল্ড বলল, যদি প্ৰাণের মায়া না থাকে। তবে ভয় পাচ্ছিস কেন? আমাদের উভয়ের মধ্যে লড়াইয়ের কারণটাই বা কী?
রিগান বলল, এদের চিনতে পেরেছি আমি। এরা আমার বোন ও বাবার দূত।
তাহলে তোমাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধিল কেন? আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইল কর্নওয়াল।
অসওয়াল্ড বলল, এই বুড়োটা বেজায় পাজি। শুধু ওর সাদা দাড়ির খাতিরে আমি ছেড়ে দিয়েছি। ওকে।
ফের মিথ্যে কথা, গজে উঠে বলল কেন্ট।
চুপ কর, তুমি কি ভদ্রতাবোধও ভুলে গেছ? বলল অসওয়ান্ড।
কর্নওয়ালকে উদ্দেশ করে কেন্ট বলল, স্যার, এ ধরনের লোকেরা মানুষের ভেতরের কোমল ও পবিত্র সম্বন্ধের অবসান ঘটায়। ভূতের মতো এরা প্রভুকে নির্মল তোষামোদ করে তাকে আরও ভয়ংকর করে তোলে। আবার হাসছিস; মৃগী রোগীর মতো তোর ওই বিবৰ্ণ মুখটায় নেমে আসুক অভিশাপ। এর মতো বদমাশ লোক আমি কখনও দেখিনি।
ও বদমাস কীসে হল? জানতে চাইল কর্নওয়াল।
ওর মুখই তার প্রমাণ, উত্তর দিল কেন্ট।
অসওয়াল্ড বলল, স্পষ্টবাদী হবার দরুন। এ জাতীয় লোকেরা সরল হলেও খুব ভয়ানক বা ধূর্ত হয়, সে কথা আমি জানি।
আমার কিন্তু আপনার প্রতি সেরূপ কোনও বদমতলব নেই, বলল কেন্ট, আমি সরল তবে প্ৰতারক নই। আমার মতো সাধারণ শ্রেণির সরল ও সৎ লোক কখনও পর হয় না।
অসওয়ান্ড বলল, ওর বিরুদ্ধে আমার কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ নেই প্ৰভু। তবে কিছুদিন আগে ভুল বুঝে রাজা লিয়ার আমায় আঘাত করলে এই লোকটাও আমাকে আঘাত করে পেছন দিক থেকে। রাজার প্রশংসা কুড়েবার জন্য এই হীন জঘন্য লোকটা আমায় যাচ্ছেতাই গালাগাল আর অপমান করে।
রেগে গিয়ে অসওয়াল্ড আদেশ দিলেন তার অনুচরদের, বদমাশ মিথ্যেবাদী শয়তান এই বুড়োটার দুপায়ে কাঠের খুটো পরিয়ে দাও। ওকে আমি এমন শাস্তি দেব যে-
স্যার, আমি কিন্তু রাজার দূত। রাজদূতের পায়ে খুঁটো পরালে পরোক্ষভাবে রাজারই অপমান হবে, বলল কেন্ট।
রিগান বলল, ও সব কিছু শুনতে চাই না আমি। পায়ে খুঁটো বেঁধে ও দুপুর পর্যন্ত, না রাত পর্যন্ত থাকবে।
তাহলে এই সেই অন্যতম বদমাশ, যার কথা বলেছিল। গনেরিল, বলল কর্নওয়াল।
গ্লাস্টর বলল, মাননীয় ডিউক, চোরের মতো কঠিন শাস্তি আপনি ওকে দেবেন না। ওর প্রভুর উপরেই আপনি ছেড়ে দিন ওর শাস্তির ভার। রাজদূতকে এভাবে অপমান করলে রাজা রুষ্ট হবেন আপনার উপর।
রিগান বলল, কিন্তু মাননীয় গ্লস্টার, ওকে শাস্তি না দিলে যে আমার অনুচরদের প্রতি অন্যায় করা হবে। তাই আপনার অনুরোধ রক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। এবার কর্নওয়ালের দিকে ফিরে সে বলল, চলুন, আমরা সবাই এখান থেকে চলে যাই।