ইসাবেলাকে সাস্তুনা দিয়ে ডিউক বললেন, যা হবার তা হয়ে গেছে। মিছেমিছি। আক্ষেপ করে লাভ কী! কদিন বাদেই তো ফিরে আসছেন। ডিউক। তিনি দেশে ফিরে এলে এখানে যা ঘটেছে তার পুরো বিবরণ লিখে দিয়ে অ্যাঞ্জেলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবে তার কাছে।
কবে দেশে ফিরে আসছেন তা জানিয়ে প্রতিনিধি অ্যাঞ্জেলোকে চিঠি দিলেন ডিউক ভিনসেনসিও। নির্দিষ্ট দিনে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ ছেড়ে ভিয়েনায় ফিরে এলেন তিনি। তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নগরীর ভেতরে নিয়ে এলেন অ্যাঞ্জেলো। সেখানে অপেক্ষমাণ ইসাবেলা তার অভিযোগপত্র তুলে দিলেন ডিউকের হাতে। সেই সাথে সবার সামনে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন, এক রাত তার সাথে কাটাতে হবে এই শর্তে তার ভাইক্লডিওর প্রাণদণ্ড মকুব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো। কিন্তু তা করা সত্ত্বেও তার ভাইয়ের প্রাণদণ্ড কার্যকর করেছেন তিনি। ডিউক বললেন অ্যাঞ্জেলোর মতো সৎচরিত্রের লোকের পক্ষে ইসাবেলাকে এমন জঘন্য শর্ত দেওয়া মোটেই সম্ভব নয়। তখন মারিয়ানা এগিয়ে এসে বলল, ইসাবেলার সাথে নয়, অ্যাঞ্জেলো রাত কাটিয়েছেন তারই সাথে। মারিয়ানাকে সমর্থন করে ইসাবেলাও বলল অ্যাঞ্জেলো তাকে ওই শর্ত দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে তিনি রাত কাটিয়েছেন মারিয়ানার সাথেই। এক বয়স্ক সন্ন্যাসীর নির্দেশে তিনি যে মারিয়ানাকে অ্যাঞ্জেলোর প্রাসাদে পৌঁছে দিয়েছিলেন, সে কথাও কবুল করলেন তিনি। তখন সন্ন্যাসীর পোশাক পরে নিয়ে ডিউক দেখালেন যে তিনিই সেই সন্ন্যাসী। এবার ডিউকের নির্দেশে কারাধ্যক্ষ এনে হাজির করলেন ক্লডিওকে। ভাইকে জীবিত দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল ইসাবেলা।
এবার এল সবার বিদায়ের পালা; ডিউকের আদেশে মারিয়ানাকে স্ত্রী বলে গ্রহণ করলেন অ্যাঞ্জেলো, আর ক্লডিও ফিরে গেলেন জুলিয়েটের কাছে। সব শেষে ডিউক জানালেন, ইসাবেলার স্বভাবে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি, তাই স্ত্রী-রূপে গ্ৰহণ করতে চান তাকে। যেহেতু তখনও পুরোপুরি সন্ন্যাসিনী হননি, তাই ইসাবেলাও সানন্দে গ্ৰহণ করলেন ডিউকের প্রস্তাব!
লাভস লেবার লস্ট
ফার্দিনান্ড ছিলেন নাভারের রাজা। তিনি ও তার ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু লর্ড বিরাউন, লর্ড লঙ্গাভিল আর লর্ড ডুমেন—এরা সবাই অবিবাহিত।
তিন বন্ধুর সাথে একদিন বিকেলে বেড়ানোর সময় তাদের উদ্দেশ্য করে রাজা ফার্দিনান্ড বললেন, দ্যাখ মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। মানুষ চায় এ জীবনে বেঁচে থাকার সময় সে যা সাহস আর বীরত্ব দেখিয়েছে, মৃত্যুর পরও যেন সবাই তা মনে রাখে। তোমরা সবাই আমার কাছে লিখিত প্ৰতিশ্রুতি দিয়েছ যে তিনবছর আমার কাছে থেকে বিধিনিষেধ মেনে বিদ্যার্জন করবে। আর যে ওসব বিধি-নিষেধ ভাঙবে, তাকে নিজের সম্মান নিজেই বিসর্জন দিতে হবে।
হেসে লঙ্গাভিল বলল, আমি আমার সংকল্পে দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ। আর মোটে তো তিনটে বছর। লিখিত শর্ত অনুযায়ী বললে হয়তো আমার দৈহিক পরিশ্রম বাড়বে, তবুও শাস্তিতে থাকতে পারব আমি।
ডুমেন ছিল একজন দার্শনিক। সে বলল সারাজীবন দর্শনের চর্চা করেই কাটিয়ে দেবে। অনায়াসেই সে তিনবছর কাটিয়ে দিতে পারবে।
বিরাউন বলল, রাজার দেওয়া শর্তগুলোর সাথে সে আরও কিছু যোগ করতে চায়। সেগুলি হল, এই তিন বছর সময়ের মাঝে কেউ নারীর মুখ দেখবে না, দিনে-রাতে এক বারের বেশি কেউ আহার করবে না। আর সপ্তাহে অন্তত একদিন উপোস করবে। তিনঘণ্টার বেশি ঘুমানো চলবে না। রাতে আর দিনের বেলা বিশ্রামের নামে ঘুমনোও চলবে না। রাজা ফার্দিনান্ড সানন্দে মেনে নিলেন এই শর্তগুলি।
কথা বলছিলেন রাজকুমারীর সাথে। সে সময় রাজকুমারীর তিন সহচরী রোজালিন, মারিয়া আর ক্যাথরিনও ছিল সেখানে।
লর্ড বয়েত বললেন, মাননীয়া রাজকুমারী!! আপনি, মনে রাখবেন নাভারের রাজার সাথে অ্যাকুইতেন হস্তান্তর সম্পর্কিত জরুরি কথাবার্তা বলতেই আপনি এখানে এসেছেন।
রাজকুমারী বললেন, আপনি হয়তো জানেন না লর্ড বয়েত, আগামী তিনবছর রাজা ফার্দিনান্ড শুধু লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। এ সময়ে তিনি কোনও নারীর মুখদর্শন করবেন না। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি এ বিষয়ে তাঁর মতামতটুকু জেনে নেবেন। আচ্ছ। আপনি বলতে পারেন এসব আইন কাদের তৈরি? জানতে চাইলেন রাজকুমারী।
ওই যে নাভারের তিন লর্ড! বললেন বয়েত, লঙ্গাভিল, ডুমেন আর বিরাউন – ওঁরাই এসব বিধি-নিষেধের সৃষ্টি করেছেন। আর রাজা ফার্দিনান্ড কোনও আপত্তি না জানিয়ে মেনে নিয়েছেন সে সব।
রাজা ফার্দিনান্ড শুনলেন ফরাসি রাজকুমারী তাঁর সাথে দেখা করতে চান। সে কথায় ফার্দিনান্ড নিজেই এলেন রাজকুমারীর সাথে দেখা করতে। রাজার ব্রত যাতে ভঙ্গ না হয়। সেজন্য রাজকুমারী আর তাঁর তিন সহচরী আগেভাগেই নিজেদের মুখে মুখোশ এঁটে নিলেন যাতে তাদের নারী বলে বোঝা না যায়।
ফরাসি রাজকুমারীকে অভিবাদন জানিয়ে রাজা ফার্দিনান্ড এসে বসলেন তার মুখোমুখি। তাকে পাল্টা অভিবাদন জানিয়ে রাজকুমারী শুরু করলেন কাজের কথা। ফরাসি রাজকুমারীকে অ্যাকুইতেন প্রদেশ ফিরিয়ে দেওয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলে বিদায় নিলেন রাজা ফার্দিনান্ড। এবার এগিয়ে এসে রাজকুমারীর সহচরী রোজালিন আর ক্যাথরিনের সাথে যেচে আলাপ করলেন রাজা ফার্দিনান্ডের অন্যতম বন্ধু লর্ড বিরাউন। তিনি চলে যাবার পর রাজকুমারীর আর এক সহচরী মারিয়া তাকে উল্লেখ করলেন বিকারগ্রস্ত বলে।