ডিউক বললেন, তবে তোমার প্রাণদণ্ডাদেশ রদ হবার কোনও আশা নেই ক্লডিও। এবার মৃত্যুর জন্য তৈরি হও তুমি। তার কথা শেষ হতেই কারারক্ষক ক্লডিওকে নিয়ে গেলেন অন্যদিকে। এবার ইসাবেলাকে ডিউক বললেন, শোনা ইসাবেলা, তোমার সাথে দরকারি কথা আছে আমার। এরপর চারপোশ একবার দেখে নিয়ে তিনি বললেন, তুমি কি সত্যিই তোমার ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে চাও ইসাবেলা?
নিশ্চয়ই চাই ফাদার, বলল ইসাবেলা, তবে আপনি অ্যাঞ্জেলোকে যে সৎ এবং ধর্মপ্ৰাণ বললেন, আমি তা মেনে নিতে রাজি নই। ডিউক ফিরে এলে আমি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জনাব।
সে তো ভালো কথা, বললেন ছদ্মবেশী ডিউক, আমি তো শুনেছি। ডিউক সম্প্রতি দেশে ফিরে আসছেন! যাইহোক, এ মুহূর্তে ভাইকে বাঁচাতে হলে অন্য পথে এগুতে হবে তোমাকে। এবার মন দিয়ে শোন আমার কথা। আমার কথা মতো চললে একদিকে ধর্মপ্ৰাণ নারীর যথেষ্ট উপকার হবে। এমনকি কৌমার্য বিসর্জন না দিয়েও তুমি তোমার ভাইয়ের প্রাণ বঁচাতে পারবে। সেই সাথে একজন নিরপরাধ যুবতিরও যথেষ্ট উপকার হবে। এবার বল তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি কিনা?
নিশ্চয়ই রাজি, বলল ইসাবেলা, এবার বলুন কী করতে হবে আমায়?
ডিউক বললেন, তুমি নিশ্চয়ই বীর যোদ্ধা ফ্রেডারিকের নাম শুনেছ?
সেই ফ্রেডরিক, মানে যিনি জাহাজ ডুবি হয়ে মারা যান? বলল ইসাবেলা।
ডিউক বললেন, হ্যা, সেই ফ্রেডরিক। তারই ছোটেগবোন মারিয়ানার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল অ্যাঞ্জেলোর। জাহাজে করে বোনের বিয়ের যৌতুক সামগ্ৰী নিয়ে ফিরে আসছিলেন ফ্রেডরিক। কিন্তু মাঝসমুদ্রে জাহাজ ডুবে যাওয়ায় শুধু জিনিসপত্রই নয়, ডুবে মারা গেলেন ফ্রেডরিকও। ফলে বন্ধু হয়ে গেল অ্যাঞ্জেলোরা সাথে মারিয়ানার বিয়ে। আজও দুজনে অবিবাহিত রয়েছে। আমি জানি মারিয়ানা এখনও ভালোবাসে অ্যাঞ্জেলোকে। এবার তোমার যা করতে হবে তা মন দিয়ে শোন ইসাবেলা। তুমি অ্যাঞ্জেলোর সাথে দেখা করে বলবে তুমি তার শর্তে রাজি। আজ রাতে তার সাথে থাকবে তুমি।
ডিউকের কথা শুনে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল ইসাবেলা, ছিঃ ছিঃ! এ সব কী কথা বলছেন আপনি?
ডিউক বললেন, তুমি মিছেই আমায় ভুল বুঝছইসাবেলা। আগে আমার কথা শোন, তারপর যা বলার বলো। অ্যাঞ্জেলো আজকের রাতটা ঠিকই কাটাবে এক নারীর সাথে। তবে সে তুমি নও, মারিয়ানা, যার সাথে একসময় অ্যাঞ্জেলোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তুমি গোপনে মারিয়াকে নিয়ে অ্যাঞ্জেলোর কাছে গিয়ে তাকে সেখানে রেখে ফিরে আসবে। অ্যাঞ্জেলো ভাববে রাতে তুমিই তার কাছে ছিলো। এটা করলে উভয়ের মধ্যে মিলন ঘটবে। তাছাড়া ওদের বিয়ে আগেই ঠিক হয়েছিল আর মারিয়ানা আজও ভালোবাসে অ্যাঞ্জেলোকে–কাজেই একাজ করলে কোনও পাপ হবে না, তোমার ভাই ক্লডিও ছাড়া পেয়ে যাবে।
সব শুনে ইসাবেলা বলল, বেশ! আপনার কথামতেই কাজ হবে। আমি এখনই যাব অ্যাঞ্জেলোর কাছে।
ডিউক বললেন, তোমায় অজস্র ধন্যবাদ জানাই ইসাবেলা। আমি এখনই মারিয়ানার কাছে যাব। গোটা পরিকল্পনাটা তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে সেই মতো তৈরি করতে হবে তাকে। আচ্ছা! ইসাবেলা! তুমি তো চেন সেন্ট লুক-এর জমিদারদের পুরনো গোলবাড়িটা! সেখানেই থাকে মারিয়ানা। তুমি অ্যাঞ্জেলোর সাথে কথা-বার্তা সেরে সেখানে চলে যাবে। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করব সেখানে।
অ্যাঞ্জেলোর সাথে দেখা করে ইসাবেলা জানাল যে সে তার শর্তে রাজি। তারপর সে চলে এল মারিয়ানার বাড়িতে। সেখানে ছদ্মবেশী ডিউক তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি মারিয়ানার সাথে ইসাবেলার পরিচয় করিয়ে দিলেন। ইসাবেলা জানাল কাল রাতে সে মারিয়ানাকে নিয়ে গোপনে যাবে অ্যাঞ্জেলোর প্রাসাদের লাগোয়া বাগানে। তিনি কথা দিয়েছেন সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করবেন।
মারিয়ানাকে হাঁশিয়ার করে দিয়ে ডিউক বললেন, কখনও বেশি কথা বলবে না। অ্যাঞ্জেলোর সাথে। দেখবে, ও যেন তোমায় চিনতে না পারে। আর চলে আসার সময় ক্লডিওর প্রাণদণ্ড মকুব করার কথাটা অবশ্যই মনে করিয়ে দেবে।
মারিয়ানাকে নিয়ে ইসাবেলা চলে যাবার পর ডিউক এলেন। কারাগারে। কারাধ্যক্ষের কাছে শুনলেন আগামীকাল সকালেই নাকি ক্লডিওর কাটামুণ্ডু দেখতে চেয়েছেন অ্যাঞ্জেলো। বারনার ডাইন নামে আরও এক কয়েদিরও সেদিন প্ৰাণদণ্ড হবার কথা। ডিউক কারারক্ষককে অনুরোধ করলেন তিনি যেন ক্লডিওর পরিবর্তে বারনারডাইনের কাটা মুণ্ডুটাই পাঠিয়ে দেন। অ্যাঞ্জেলোর কাছে।
অবাক হয়ে কারাধ্যক্ষ বললেন, কী করে তা সম্ভব হবে? কারণ ওদের দুজনকেই চেনেন অ্যাঞ্জেলো। এবার ছদ্মবেশী ডিউক ভিনসেনসিওর সিলমোহর আর পাঞ্জা বের করে কারাধ্যক্ষকে দেখিয়ে বললেন, সে যদি তার কথা মতো কাজ করে তাহলে তার মঙ্গল হত। তাকে এও বললেন, ডিউক ফিরে এসে এ কাজের জন্য তাকে যথোচিত পুরস্কার দেবেন। ছদ্মবেশী সন্ন্যাসী যে ডিউকের খুব কাছের লোক, সেটা বুঝতে পেরে কারাধ্যক্ষ বললেন, এই কারাগারের এক বন্দি, জলদসু্যু র্যাগোজাইন, অনেক দিন ধরে অসুখে ভুগে ভুগে আজ সকালে মারা গেছে। অনেকটা ক্লডিওর মতো দেখতে সে।
তাহলে তো ভালোই হল, বললেন ডিউক, কাল সকালেই তার মুণ্ডুটা কেটে নিয়ে পাঠিয়ে দেবেন। অ্যাঞ্জেলোর কাছে। আর ডিউক ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি ক্লডিও আর বারনারডাইনকে এমন ভাবে লুকিয়ে রাখবেন যাতে অ্যাঞ্জেলো টের না পায়। এটুকু বলে ডিউক চলে যাবেন এমন সময় সেখানে হাজির হলেন ইসাবেলা। তিনি ডিউককে জানালেন আজ রাতে অ্যাঞ্জেলোর সাথেই প্রাসাদে রাত কাটাচ্ছে মারিয়ানা। এবার তিনি জানতে চাইলেন। ক্লডিওর প্রাণদণ্ড রদ করা হয়েছে। হয়েছে কি? উত্তরে ডিউক বললেন, না যথাযথ তার প্রাণদণ্ড বহাল আছে। ইচ্ছা করেই মিছে কথা বললেন ছদ্মবেশী ডিউক। ক্লডিওর মৃত্যুর কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ল ইসাবেলা।