বিবাহের জন্য দেওয়া পূর্ব অনুমতি আইনত অনুমোদন করলেন ডিউক। অর্ল্যান্ডো রোজালিন্ডকে ও অলিভার সেলিয়াকে একই দিনে বিয়ে করলেন। রাজপরিবারের বিয়েতে মহাসমারোহে কুচকাওয়াজ হয়। কিন্তু সেই বনে তেমন কিছুই করা গেল না। তা সত্ত্বেও বিবাহ উৎসবের আনন্দে এতটুকু ঘাটতি হল না। শীতল গাছের ছায়ায় ভোজসভায় তাঁরা হরিণের মাংস খেলেন। দয়ালু ডিউকের ছত্রছায়ায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের মিলনে আনন্দের পূর্ণঘট স্থাপিত হল। এমন সময় এক দূত এল অপ্রত্যাশিত এক আনন্দ সংবাদ নিয়ে – ডিউক-রাজ্য ন্যায়সম্মত ডিউককে প্রত্যর্পিত করা হয়েছে।
মেয়ের পলায়নে যারপরনাই রেগে গিয়েছিলেন প্রবঞ্চক। তার উপর প্রতিদিনই বিশিষ্ট রাজপুরুষের আর্ডেনের বনে ন্যায়সঙ্গত ডিউকের আশ্রয়ে যোগ দিচ্ছিলেন। এত অসুবিধার মধ্যেও ন্যায়সম্মত ডিউক কীভাবে লোকের সম্মান আদায় করছিলেন দেখে দাদার প্রতি ঈর্ষা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাঁর। তিনি বিশাল এক বাহিনী গড়ে দাদাকে সপারিষদ বন্দী করার উদ্দেশ্যে বনের পথে রওনা হলেন। কিন্তু পরমেশ্বরের কৃপায় বনে প্রবেশ করার পরই ডিউকের দুষ্ট ভাইয়ের মন পরিবর্তিত হল। এক বৃদ্ধ সন্তের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। অনেকক্ষণ কথাও হয়েছিল দু’জনের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত সন্ত তাঁর হৃদয়কে সম্পূর্ণ কলুষমুক্ত করতে সক্ষম হলেন। তাঁর মনে অনুতাপ জন্মাল। ঠিক করলেন, অন্যায়ভাবে দখল করা রাজ্য তিনি ত্যাগ করবেন। শেষ জীবন কাটিয়ে দেবেন কোনো ধর্মসংঘে গিয়ে। তাই প্রথমেই একজন দূত পাঠিয়ে (যার কথা বলা হল) তিনি দাদাকে তাঁর ডিউকরাজ্য ফিরিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে ফিরিয়ে দিলেন ডিউকের দুঃসময়ের বন্ধুবর্গের জমি ও রাজস্বভাগ।
এই অপ্রত্যাশিত আনন্দ সংবাদে রাজকন্যাদের বিবাহের উৎসবে মিলনের নতুন রং লাগল। রোজালিন্ডের বাবা ডিউকের নবলব্ধ সৌভাগ্যের জন্য সেলিয়া রোজালিন্ডকে অভিনন্দন জানাল ও আন্তরিকভাবে তার সৌভাগ্য কামনা করল। সে নিজে আর ডিউকরাজ্যের উত্তরাধিকারিণী রইল না। রোজালিন্ডের বাবা ডিউকরাজ্য ফিরে পাওয়ায় সে-ই হল রাজ্যের নতুন উত্তরাধিকারিণী। তা সত্ত্বেও দুই বোনের ভালবাসার মধ্যে এতটুকুও ঈর্ষা প্রবেশ করল না।
নির্বাসনের সময় যেসব বন্ধুরা তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তাদের পুরস্কৃত করলেন ডিউক। এই সব বিশ্বস্ত অনুগামীরা এতদিন ধৈর্য ধরে ডিউকের দুঃসময়ের সঙ্গী হয়েছিলেন। এতদিন পরে ন্যায়সঙ্গত ডিউকের প্রাসাদে শান্তিতে ফিরতে পেরে তাঁরাও খুব খুশি হলেন।
আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম
আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম
মূল রচনা: উইলিয়াম শেকসপিয়র
পুনর্কথন: মেরি ল্যাম্ব
অনুবাদ: অর্ণব দত্ত
(“টেলস ফ্রম শেকসপিয়র” থেকে)
এথেন্স শহরে এক আইন ছিল। এই আইন বলে সেখানকার নাগরিকেরা নিজেদের পছন্দসই পাত্রের সঙ্গে তাদের মেয়েদের বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারত। কোনো মেয়ে বাপের পছন্দ করা পাত্রকে বিয়ে করতে অস্বীকৃত হলে, বাপ সেই আইন প্রয়োগ করে মেয়েকে মৃত্যুদণ্ডে পর্যন্ত দণ্ডিত করার ক্ষমতা রাখত। তবে কিনা, মেয়েরা একটু-আধটু অবাধ্য হলেও, বাপেরা সাধারণত মেয়ের মৃত্যুকামনা করত না বলে, এই আইনের প্রয়োগও কদাচিৎই হত। অবশ্য, বাপ-মায়েরা তাদের কুমারী মেয়েকে এই আইনের জুজু দেখাতে ছাড়তেন না।
তবে একবার এক ঘটনা ঘটেছিল। ইজিয়াস নামে এক বৃদ্ধ এথেন্সের তৎকালীন ডিউক থিসিয়াসের কাছে নিজের মেয়ে হার্মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন। ইজিয়াসের ইচ্ছে ছিল, হার্মিয়া ডিমেট্রিয়াস নামে এথেন্সের এক সম্ভ্রান্তবংশীয় যুবককে বিয়ে করুক। কিন্তু সে ভালবাসত লাইস্যান্ডার নামে অপর এক এথেন্সীয় যুবককে। তাই সে বাপের আদেশ অমান্য করে। ন্যায়বিচার চেয়ে ইজিয়াস তখন এলেন থিসিয়াসের কাছে। দাবি করলেন, ওই নিষ্ঠুর আইনটি প্রয়োগ করা হোক তাঁর মেয়ের উপর।
আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে হার্মিয়া জানালো, ডিমেট্রিয়াস তার সই হেলেনাকে ভালবাসত। হেলেনা এখনও ডিমেট্রিয়াসকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে। কিন্তু বাপের আদেশ অমান্য করার এহেন সম্মানজনক কারণও ইজিয়াসকে টলাতে পারল না।
থিসিয়াস দয়ালু রাজা ছিলেন। কিন্তু দেশের আইন সংশোধনের ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তিনি শুধু হার্মিয়াকে চার দিন সময় দিলেন। তাকে জানিয়ে দেওয়া হল, চার দিন পরেও যদি সে ডিমেট্রিয়াসকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
লাইস্যান্ডার এই সব ঝুটঝামেলার কথা শুনে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ল। কিন্তু তখনই তার মনে পড়ে গেল, এথেন্স থেকে কিছু দূরে বাস করেন তার এক মাসি। নিষ্ঠুর আইনটা যেহেতু এথেন্সের নগরসীমানার বাইরে খাটে না, সেহেতু সেখানে পালিয়ে যেতে পারলে, কেউ আর হার্মিয়াকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করতে পারবে না। তাই দু’জনে ঠিক করল, হার্মিয়া চুপিচুপি তার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবে আর তারপর তারা লাইস্যান্ডারের মাসির বাড়ি গিয়ে তারা বিয়ে করবে। “শহর থেকে কয়েক মাইল দূরে যে বন রয়েছে, সেখানেই তোমার সঙ্গে দেখা করব। সেই যে বনে মনোহর বসন্তে আমরা হেলেনাকে নিয়ে হাঁটতে যেতাম,” লাইস্যান্ডার বলল।
হার্মিয়া সানন্দে রাজি হয়ে গেল এই প্রস্তাবে। সে তার সই হেলেনা ছাড়া আর কাউকেই তাদের পরিকল্পনার কথা জানালো না। মেয়েরা প্রেমে পড়লে কী বোকাই না হয়ে যায়! হেলেনা করল কী, মহা-অকৃতজ্ঞের মতো সব কথা ডিমেট্রিয়াসকে জানিয়ে দিল। সইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তার পাওয়ার কিছুই ছিল না। শুধু নিজের লম্পট প্রেমিকের পিছু পিছু বনে যাওয়ার আনন্দটুকু পাওয়ার আশা ছিল তার, এই যা। সে জানত ডিমেট্রিয়াস হার্মিয়ার খোঁজে যাবেই।