হাতের ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অর্ল্যান্ডো দুর্বল বোধ করতে লাগল। সেদিন আর গ্যানিমিডের কাছে যেতে পারল না। বরং দাদাকে দুর্ঘটনার খবরটা গ্যানিমিডের কাছে পৌঁছে দিতে পাঠাল। অর্ল্যান্ডো বলে দিল, “ওকে আমি মজা করে রোজালিন্ড বলি।”
অলিভার গিয়ে গ্যানিমিড ও এলিয়েনাকে গিয়ে বললেন, কেমন করে অর্ল্যান্ডো তার জীবন রক্ষা করেছে। অর্ল্যান্ডের বীরত্বের কাহিনি ও তার ভাগ্যক্রমের বেঁচে যাওয়ার গল্প শেষ করে তিনি অর্ল্যান্ডোর দাদা হিসেবে আত্মপরিচয় দিলেন। জানালেন, আগে তিনি অর্ল্যান্ডোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও এখন আবার তাঁদের দুই ভাইয়ে মিল হয়ে গেছে।
পূর্বকৃত অপরাধের জন্য অলিভারকে এত অনুতপ্ত দেখে দয়াময়ী এলিয়েনা মুহুর্তে তাঁর প্রেমে পড়ে গেল। তাঁর কষ্টে এলিয়েনাকে সমব্যথী হতে দেখে অলিভারও এলিয়েনার প্রেমে পড়ে গেলেন। এইভাবে দু’জনের মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গেল। এদিকে গ্যানিমিড তো অর্ল্যান্ডোর বিপদের কথা শুনে, সে সিংহীর দ্বারা আহত হয়েছে জেনে অজ্ঞানই হয়ে গেল।
জ্ঞান ফিরলে সে এমন ভান করল যেন, রোজালিন্ড নামে কোনো কাল্পনিক চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। অলিভারকে বলল, “আপনার ভাই অর্ল্যান্ডোকে বলবেন, আমি কেমন সুন্দর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।” অলিভার কিন্তু তার দেহের পান্ডুরতা লক্ষ্য করে বুঝলেন যে ওটা অভিনয় ছিল না। যুবকের দুর্বলতা দেখে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। বললে, “তা অভিনয় করতে হলে, পুরুষের অভিনয় করলেই তো পারো।” গ্যানিমিড উত্তরে বলল, “আমি তো তাই করি। তবে আমার নারী হওয়াই উচিত ছিল।”
অলিভার অনেকক্ষণ তাদের কাছে রইলেন। ফিরে এসে ভাইকে অনেক কথাই বললেন তিনি। কেমন করে গ্যানিমিড অর্ল্যান্ডোর আহত হওয়ার কথায় অজ্ঞান হয়ে গেল; কেমন করে তিনি সুন্দরী রাখালিনী এলিয়েনা আগ্রহে মুগ্ধ হয়ে তিনি তার প্রেমে পড়লেন, সে সব খুলে বললেন। এলিয়েনাকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন ভাইয়ের কাছে। বললেন, বিয়ে করে তিনি বনে রাখালের বৃত্তিই নেবেন। বাড়ি আর এস্টেটপত্র সব অর্ল্যান্ডোকে লিখে দেবেন।
অর্ল্যান্ডো বলল, “আমি রাজি। কালই বিয়েটা সেরে ফেলো। আমি ডিউক ও তাঁর বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাবো। যাও, রাখালিনীকে রাজি করিয়ে নাও। ও এখন একা আছে। ওই দ্যাখো, ওর দাদা এখানে এসেছে।” গ্যানিমিড তার আহত বন্ধুকে দেখতে এসেছিল। তা দেখে অলিভার এলিয়েনার কাছে গেল।
অলিভার আর এলিয়েনার প্রেম নিয়ে আলোচনা করতে লাগল অর্ল্যান্ডো ও গ্যানিমিড। বলল, দাদাকে সে রাখালিনীর কাছে পাঠিয়েছে পরের দিনই তাকে বিয়ে করার জন্য সম্মতি আদায় করতে। তারপর সে বলে ফেলল, ওই দিনই রোজালিন্ডকে বিয়ে করতে পারলে সে খুব সুখী হত।
গ্যানিমিড নিজেই যখন লেডি রোজালিন্ড তখন পরের দিনই অর্ল্যান্ডোকে বিয়ে করা তার পক্ষে মোটেও শক্ত কাজ নয়। সে বলল, তার কাকা ছিলেন এক বিখ্যাত জাদুকর। কাকার থেকে সেও কিছু জাদু শিখেছিল। সেই জাদুর বলে পরের দিনই সে রোজালিন্ডকে এনে হাজির করতে পারে।
প্রেমোন্মত্ত অর্ল্যান্ডো তার কথা খানিক বিশ্বাস করল, খানিক করল না। একবার ভাবল, গ্যানিমিড বুঝি রসিকতা করছে। গ্যানিমিড বলল, “আমার মাথার দিব্যি, আমি রসিকতা করছি না। আগামীকাল ভাল পোষাক পরে থেকো। আর ডিউক ও তাঁর বন্ধুদের তোমার বিয়েতে নেমন্তন্ন কোরো। কালই যদি রোজালিন্ডকে বিয়ে করতে চাও, তাহলে কালকেই সে এখানে এসে হাজির হবে।”
এদিকে অলিভার এলিয়েনার সম্মতি আদায় করতে পেরেছিলেন। পরদিন তাঁরা এলেন ডিউকের কাছে। সঙ্গে এল অর্ল্যান্ডোও।
ডিউক ও তাঁর বন্ধুরা এসেছিলেন দুটি বিয়েতে আমন্ত্রিত হয়ে। কিন্তু এসে দেখলেন, মাত্র একজন বধূই উপস্থিত। সকলে ভাবলেন, গ্যানিমিড অর্ল্যান্ডোর সঙ্গে রসিকতাই করেছে।
তাঁর মেয়েকে জাদুবলে হাজির করা হবে শুনে ডিউক অর্ল্যান্ডোকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওই রাখাল ছোকরাটিকে সে বিশ্বাস করে কিনা। অর্ল্যান্ডো সে কথার কোনো সদুত্তর দিতে পারল না। এমন সময় গ্যানিমিড এসে ডিউককে বলল, ডিউক যদি নিজ কন্যার সঙ্গে অর্ল্যান্ডোর বিয়ে দিতে সম্মত হন, তবেই সে ডিউক-কন্যাকে হাজির করবে। ডিউক বললেন, “বিয়েতে যৌতুক দেওয়ার মতো রাজ্য যদি আমার হাতে থাকত, তাহলে অবশ্যই করতাম।” গ্যানিমিড অর্ল্যান্ডোকে জিজ্ঞাসা করল, “তাকে এখানে আনলে তুমি তাকে বিয়ে করবে তো?” অর্ল্যান্ডো বলল, “যদি অনেক রাজ্যের রাজা হতাম, তাহলে অবশ্যই করতাম।”
তখন গ্যানিমিড ও এলিয়েনা একসঙ্গে বেরিয়ে গেল। গ্যানিমিড তার পুরুষবেশ ত্যাগ করল। পরল নারীর বেশ। জাদুর সাহায্য ছাড়াই চকিতে সে হয়ে গেল রোজালিন্ড। এলিয়েনা তার গ্রাম্য বালিকার বেশ ত্যাগ করে রাজপোষাক পরল। সেও চকিতে হয়ে গেল লেডি সেলিয়া।
ওরা বেরিয়ে যেতেই ডিউক রাখাল গ্যানিমিডের সঙ্গে তাঁর মেয়ের চেহারাগত সাদৃশ্যের কথা বললেন অর্ল্যান্ডোকে। অর্ল্যান্ডো বলল, মিলটা সেও লক্ষ্য করেছে।
শেষকালে সবাইকে অবাক করে রোজালিন্ড ও সেলিয়া নিজ নিজ বেশে প্রবেশ করল। সবাই ভাবল জাদুর বলেই তারা সেখানে হাজির হয়েছে। কিন্তু রোজালিন্ড আর তার বাবার সঙ্গে ছলনা করল না। সে তার বাবার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে তাঁর আশীর্বাদ চাইল। তারপর সে তার নির্বাসন, বনে রাখালের বেশে বসবাস ও খুড়তুতো বোন সেলিয়াকে নিজের বোন বলে পরিচয় দেওয়ার কথা সব খুলে বলল।