ক্যাপ্টেনকে বললেন ডিউক, তুমি বলছি আজই তোমার জাহাজ ভিড়েছে ইলিরিয়া বন্দরে? কিন্তু যার বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগ, সে তো অনেকদিন ধরে কাজ করছে আমার কাছে। তাই তোমার অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য বলে মেনে নিতে পারছি না। আমি–বলেই রক্ষীদলের নেতাকে ডেকে প্রশ্ন করলেন, কী অপরাধে একে ধরেছ তোমরা?
রক্ষীদলের নেতা বললেন, হুজুর! এরই সাথে লড়তে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন আপনার ভাইপো। সেই অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন ইনি।
ভায়োলাকে দেখিয়ে ডিউক বললেন ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিওকে, তুমি বলছি তোমার জাহাজে ওকে আশ্রয় দিয়েছিলে। আরও বলছি তোমার জাহাজ আজই ভিড়েছে ইলিরিয়া বন্দরে। কিন্তু ও তো তারও আগে থেকে রয়েছে। আজ সকালে ওকে টাকার থলি দেবার যে কথা বলছি, সেটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। কথা শেষ করে ডিউক রক্ষীদের আদেশ দিলেন, এখন ওকে নিয়ে যাও। ওর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আছে তা পরে বিবেচনা করব আমি।
ডিউকের কথা শেষ হতে না হতেই নিজের প্রাসাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন লেডি অলিভিয়া! আশেপাশের সবকিছু ফেলে ডিউক হাঁ করে চেয়ে রইলেন তার দিকে। তাকে ঐভাবে তাকাতে দেখে শুধু বিরক্তিই নয়, তার প্রতি প্ৰচণ্ড অসন্তুষ্ট হলেন লেডি অলিভিয়া। ডিউকের সাথে তার দূত সিজারিও এসেছেন এটা যেন তখনই নজরে এল লেডি অলিভিয়ার। ডিউককে ধর্তব্যের মধ্যে না এনে সরাসরি প্ৰেমালাপ শুরু করলেন সিজারিওর সাথে। সিজারিওকে যে লেডি অলিভিয়া ভালোবাসেন সেটা বুঝতে পেরে মনে মনে খুবই রেগে গেলেন ডিউক। সিজারিওকে ডেকে তিনি বললেন, এবার চল এখান থেকে। মানিবের সাথে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছে সিজারিও ঠিক সেসময় মিনতিভরা স্বরে সিলভিয়া বললেন তাকে, তুমি চলে যেও না সিজারিও, প্রাসাদে এস। অনেক কথা আছে তোমার সাথে।
সিজারিও বলে উঠলেন, নাঃ আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। মনিবের সাথেই যেতে হবে আমাকে। আমি ওকে প্ৰাণাধিক ভালোবাসি। কোনও নারীকে এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা সম্ভব নয়।
জোর গলায় বলে উঠলেন লেডি অলিভিয়া, সিজারিও! তুমি আমার স্বামী। আমার কথা রাখ। এভাবে চলে যেও না তুমি।
অবাক হয়ে বললেন ডিউক, তুমি লেডি অলিভিয়ার স্বামী?
সিজারিও উত্তর দিল, নাঃ মহামান্য ডিউক, আমি ওর স্বামী নই, আর অন্য কোনও নারীর স্বামী হতেও চাই না আমি।
লেডি সিলভিয়া বললেন, ও যে আমার স্বামী তার প্রমাণ আমি এখনই দিচ্ছি! এরপর তিনি ডেকে আনলেন সেই পাদ্রিকে1.সিজারিওকে দেখিয়ে বললেন পাদ্রিকে, আচ্ছ ফাদার, আজ সকালে কি আপনার সামনে এই যুবক সিজারিওর সাথে আমার বিয়ের বাগদান অনুষ্ঠান হয়নি?
ভালো করে সিজারিওর মুখটা দেখে নিয়ে পাদ্রি বললেন, এর সাথেই তো প্ৰায় দু-ঘণ্টা আগে তোমার বাগদান হয়েছে। বাগদান তো আমার সামনেই হল। এমন সুন্দর মুখ কি এত সহজে ভোলা যায়!
পাদ্রির কথা শুনে ডিউক নিশ্চিন্ত হলেন সে সিজারিওই লেডি অলিভিয়ার স্বামী। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে তাকে এভাবে টপকে গিয়ে সিজারিও বিয়ে করবে। লেডি অলিভিয়াকে। ডিউক একবার ভাবলেন তাকে প্ৰাণদণ্ড দেবেন। পরীক্ষণেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সিজারিওকে বললেন, তুমি আমার সাথে যা করেছ তা স্রেফ বিশ্বাসঘাতকতা। যাই হোক, তুমি আর আমার সামনে এস না।
ডিউকের হুকুম শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ল সিজারিও। যাই হোক এই বিদেশ-বিভূইয়ে তার থাকা-খাওয়ার একটা হিল্পে হয়েছিল, সাথে সাথে রোজগারও হচ্ছিল তার। এবার সে সব চলে গেল। ওদিকে সিজারিও তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে দেখে মনে মনে খুবই দুঃখ পেলেন। লেডি অলিভিয়া। এরই মাঝে এসে হাজির দুই পাঁড় মাতাল স্যার টোবি আর স্যার অ্যাণ্ডু। তাদের ক্ষতস্থান থেকে দরদরি করে পড়ছে রক্ত।
সিজারিওকে দেখিয়ে তারা বলল, এই তো সেই লোক যে কিছুক্ষণ আগে জখম করেছে। আমাদের।
বিরক্তি সহকারে বললেন ডিউক, কী যা তা বলছি তোমরা! ওতো সকাল থেকেই আমার সাথে রয়েছে। তাহলে কীভাবে ও জখম করল তোমাদের?
এক সাথে বলে উঠল। স্যার টোবি আর স্যার অ্যান্ড, মহামান্য ডিউক! আমরা কেউ মিথ্যে বা বাড়িয়ে বলছি না। কিছুক্ষণ আগে ও সত্যিই আমাদের জখম করেছে।
এবার ধান্দে পড়ে গেলেন ডিউক। তাদের কথার ধরনে এমন কিছু ছিল যাতে মনে হয় না। তারা মিথ্যে কথা বলছে। আসল ব্যাপার তাহলে কী?
এই ধাঁধার মধ্যে পড়ে গিয়ে ডিউক বুঝতে পারলেন না। এবার তিনি কী করবেন। ঠিক সে সময় সমস্যার সমাধান করতে এসে হাজির ভায়োলার ভাই সেবাস্টিয়ান। দ্বন্দ্বযুদ্ধে জখম করার জন্য প্রথমেই সে ক্ষমা চাইল স্যার টোবি আর স্যার অ্যাণ্ডুর কাছে।
এবার অবাক হয়ে লেডি অলিভিয়া দেখলেন তার সামনে দাঁড়িয়ে দুজন স্বামী। তাদের উচ্চতা, গায়ের রং, এমনকি পোশাক পর্যন্ত হুবহু এক। কে যে আসল স্বামী তা বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি।
ডিউক দেখতে পেলেন নবাগত যুবকটি দেখতে হুবহু তার পাশ্বচর সিজারিওর মতো। লেডি অলিভিয়া এবং ডিউকের মতো একই সমস্যার মধ্যে পড়ে গেলে বন্দি ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিও [ নবাগত ছেলেটি দেখতে সেবাস্টিয়ানের মতো অথচ সেবাস্টিয়ান দাঁড়িয়ে রয়েছে ডিউকের পাশে। তাহলে এ কে? কিন্তু ভায়োলা ভুল করেনি নবাগত যুবকটিকে চিনতে। সে ছুটে এসে যুবকটির গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমিও আমায় চিনতে পারছি না সেবাস্টিয়ান? আমি তোমার বোন ভায়োলা।