ডিউক যে পুনরায় তাকে প্রেম নিবেদন করেছেন এ কথা ভায়োলার মুখে শুনে বেজায় রেগে বললেন অলিভিয়া, আমি তো আগেই বলেছি ডিউকের ও সব ঘ্যানঘেনে প্রেমের কথা শুনতে মোটেও রাজি নই আমি। পরীক্ষণেই শাস্ত হয়ে বললেন, অবশ্য ডিউক ছাড়া অন্য কেউ যদি আমায় বিয়ে করতে ইচ্ছক হয়, তাহলে অনায়াসে তার কথা বলতে পার আমাকো — বলেই এমনভাবে চাইলেন ভায়োলার দিকে যে সে বেচারি লজ্জা পেয়ে গেল। সে কেশ বুঝতে পারল পুরুষবেশী তাকেই বিয়ে করতে চাইছেন লেডি অলিভিয়া। লজ্জায় সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। লেডি অলিভিয়া তাকে বললেন, তুমি কি ডিউককে ভয় পোচ্ছ? তাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমি যে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। এ কথা লুকিয়ে রেখে আর কোনও লাভ নেই। যদি তুমি আমায় বিয়ে করতে রাজি হও, তাহলে আমি কথা দিচ্ছি, তুমিও ক্ষমতাবান হবে ডিউকের মতো।
এ কথা শুনে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না ভায়োলা। সে প্রাসাদ থেকে বাইরে যাবার জন্য পা বড়াল। যেতে যেতে শুনতে পেল লেডি অলিভিয়া বলছেন তাকে, আমি তোমায় প্ৰাণাধিক ভালোবাসি সিজারিও। তুমি আবার এস। তোমার অপেক্ষায় রইলাম আমি।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে যাবার মুখেই ঝামেলায় পড়ে গেল ভায়োলা। এক তলার দুই বাসিন্দাদের একজন স্যার অ্যাভু অগচিক জানতে পেরে গেছেন যে ডিউকের দূত সিজারিও ছোকরাকে ভালোকেসে ফেলেছে লেডি অলিভিয়া। ব্যাপারটা যথেষ্ট ভয়ের কারণ।–লেডি অলিভিয়া সিজারিওকে বিয়ে করলে প্রাসাদ ছেড়ে চলে যেতে হবে তাদের দু-বন্ধুকে। অলিভিয়ার দূর সম্পর্কিত খুল্লতাত স্যার টোবির সাথে আলোচনা করে স্যার অ্যাভু ঠিক করেছে যে দ্বন্দ্ব যুদ্ধের মাধ্যমে সে হত্যা করবে সিজারিওকে। মূলত তার এক গেলাসের ইয়ার স্যার টোবির প্ররোচনায় সে এক নির্দিষ্ট দিনে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিল সিজারিওকে। দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে স্যার অ্যাভু যে সিজারিওকে চিঠি পাঠিয়েছে। এ কথা জেনে মনে মনে হাসল স্যার টোবিও। কারণ সে তো জানে তার বন্ধু কত ভীরু। ওদিকে ভায়োলা অর্থাৎ সিজারিও যে একজন দক্ষ তলোয়ারবাজ সে কথা জানিয়ে বন্ধুকে ভয় পাইয়ে দিল স্যার টোবি।
ওই দিনই সকালে অ্যান্টনিও নামক একজন কাপ্টেনের জাহাজে করে ইলিরিয়ায় পৌঁছেছে ভায়োলার ভাই সেবাস্টিয়ান। জাহাজ ডুবির পর ওই ক্যাপ্টেন তাকে প্ৰাণে বঁচিয়ে আশ্রয় দিয়েছেন তার নিজের জাহাজে। নানা জায়গা ঘুরে ঘুরে জাহাজ এসে পৌঁছেছে। এখানকার বন্দরে। এখান থেকে খুবই নিকটে ডিউক আর্সিনোর প্রাসাদ।
সেবাস্টিয়ান বললে, আসুন, জাহাজ থেকে নেমে একবার বন্দরটা ঘুরে দেখা যাক। সেই সাথে ডিউকের প্রাসাদটাও দেখা হয়ে যাবে।
ক্যাপ্টেন অ্যান্টেনিও বললেন, তুমি যেতে চাও যাবে। কিন্তু আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সেবাস্টিয়ান এর কারণ জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন বললেন, কারণ কিছুদিন আগে আমারই হাতে গুরুতর আহত হয়েছে ডিউকের ভাইপো। ডিউকের রক্ষীরা আমায় দেখতে পেলে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দেবে। কাজেই একাই যেতে হবে তোমাকে।
ক্যাপ্টেনের অসুবিধার কথা শুনে সেবাস্টিয়ান স্থির করল সে একাই যাবে বন্দর দেখতে। জাহাজ থেকে নেমে যাবার আগে সেবাস্টিয়ানকে সাবধান করে বললেন ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিও, মনে রেখা এটা বিদেশ-বিভূই। কাজেই খুব সাবধানে চলা-ফেরা করবে— বলে একটা টাকা ভর্তি থলে তার হাতে দিয়ে বললেন, এটা সাথে রােখ। এই অচেনা জায়গায় ঘুরে-ফিরে বেড়াতে হলেও অর্থের প্রয়োজন। নিজের মনে করেই এই টাকা থেকে তুমি প্রয়োজনীয় খরচ-খরচা করবে।
কী হবে এত টাকা দিয়ে? জানতে চাইল সেবাস্টিয়ান।
ক্যাপ্টেন বললেন, টাকাগুলো সঙ্গে রাখ। খিদে পেলেও তো খাবার কিনতে পয়সা লাগবে। কিছু বেশি টাকা সাথে রাখা ভালো। ক্যাপ্টেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাহাজ থেকে পথে নামল সেবাস্টিয়ান।
ওদিকে নির্দিষ্ট দিনেই সিজারিও-বেশী ভায়োলার সাথে তলোয়ার বাজিতে নামলেন স্যার অ্যাণ্ডু। প্রচণ্ড উত্তেজনায় কঁপিছে পাঁড় মাতাল স্যার অ্যাণ্ডুর হাত–অন্যদিকে তলোয়ার ধরা সিজারিওর ডান হাত কাঁপছে ভয়ে। হয়তো ভয়ংকর একটা কিছু হয়ে যাবার ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারত সিজারিও। ঠিক সে সময় দেবদূতের মতো সেখানে এসে হাজির হল এক অচেনা ভদ্রলোক। স্যার অ্যাভুকে উদ্দেশ্য করে সে চেঁচিয়ে বলে উঠল, থামুন আপনি। আমার সাথে লড়বেন। এর বদলে আমি লড়ব, আপনার সাথে।
ভায়োলা তো জানে না যে এই লোকটিই ক্যাপ্টেন অ্যান্টনিও। সেবাস্টিয়ানের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে ধরা পড়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও তিনি নিজে বেরিয়েছেন তার খোঁজে। ভায়োলাকে সেবাস্টিয়ান ভেবে ভুল করেছেন তিনি। তাকে সাহায্য করতে আসার দরুন অপরিচিত ভদ্রলোককে ধন্যবাদ জানাল সিজারিও। ঠিক তখনই একদল রক্ষী এসে হাজির সেখানে। অ্যান্টনিওকে চিনতে পেরে রক্ষীদের দলপতি প্ৰেপ্তার করলেন তাকে।
সিজারিওর দিকে তাকিয়ে ক্যাপ্টেন বললেন, বন্ধু সেবাস্টিয়ান! তোমায় বাঁচাতে এসে আমি নিজেই পড়ে গেলাম বিপদে। যাকগে সে কথা। যে টাকার থলিটা তোমায় দিয়েছিলাম সেটা এবার আমায় দেও! জানি না। কদিন গারদে আমায় আটক থাকতে হবে। ওখানে তো টাকার দরকার হবে আমার।