এমন নাছোড়বান্দা লোক দেখে বাধ্য হয়ে ম্যালভোলিও গেল তার কর্ত্রীকে খবর দিতে। যাবার আগে সে বলে গেল, কর্ত্রী অনুমতি দিলে আপনাকে আমি নিয়ে যাব তার কাছে। ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে।
ম্যালভোলিও বলল তার কর্ত্রীকে, ডিউকের চিঠি নিয়ে একজন লোক এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। আমি বসিয়ে রেখেছি!
ধমক দিয়ে লেডি অলিভিয়া বললেন তাকে, তবে আর কী? কেউ দেখা করতে এলেই বসিয়ে রাখবে তাকে। তোমাকে তো আগেই বলেছি। ডিউকের কোনও লোকের সাথে দেখা করব না আমি। এরপর একটু গলা চড়িয়ে বললেন, যাও, এখনই প্রাসাদ থেকে দূর করে দাও লোকটাকে। ম্যালভোলিও বলল, আমি তো বারবার তাকে বলছি চলে যাবার জন্য। কিন্তু সে আমার কথায় কান দিচ্ছে না। বলছে আপনার সাথে দেখা না করে সে যাবে না।
খুব অবাক হয়ে বলল অলিভিয়া, বা! বেশ মজার ব্যাপার তো! এমন নাছোড়বান্দা লোক তো দেখিনি! লোকটাকে কেমন দেখতে?
দেখে-শুনে তো মনে হয় খুবই সুন্দর, বলল ম্যালভোলিও, তবে ওকে লোক না বলে ছেলে বললেই মানানসই হয়। আপনি জানতে চাইলেন বলেই বলছি খুবই সুন্দর ছেলেটি।
ডিউকের দূতের বয়স আর চেহারার বর্ণনা ম্যালভোলিওর মুখে শুনে অলিভিয়ার খুবই আগ্রহ হল ছেলেটিকে দেখার। পাতলা একটা রেশমি ওড়নায় নিজের মুখ ঢেকে তিনি বললেন ম্যালভোলিওকে, বেশ তো! ডিউকের দূত যখন বলেছে আমার সাথে দেখা না করে যাবে না, তখন তাকে সোজা নিয়ে এস আমার কাছে। যে হুকুম বলে অলিভিয়াকে সেলাম ঠুকে চলে গেল ম্যালভোলিও। কিছুক্ষণ বাদে সিজারিওবেশী ভায়োলাকে এনে সে হাজির করুল লেডি অলিভিয়ার সামনে।
নারীর মন দেবতারাই জানেন না মানুষ তো কোন ছাড়া। ডিউক যা এতদিনেও করতে পারেননি, ভায়োলাকে মাত্র একবার দেখেই মুগ্ধ হয়ে গেলেন তিনি। ভায়োলা অনুরোধ করতে মুখের ঢাকনা সরিয়ে নিলেন তিনি। অলিভিয়ার মন ভোলাতে যে কথা তাকে বলতে শিখিয়েছিলেন ডিউক, তোতাপাখির মতো হুবহু সেগুলি আউড়ে গেল ভায়োলা। কিন্তু সে সবে কান দিলেন না। লেডি অলিভিয়া। তিনি একদৃষ্টি চেয়ে রইলেন ভায়োলার সুন্দর মুখের দিকে। এমন সুন্দর চেহারার যুবক আগে কখনও দেখেননি তিনি। কিছুক্ষণ বাদে লাজ-লজ্জা বিসর্জন দিয়ে তিনি বললেন, দেখ, তোমার মনিবের কোনও কথাই আমি শুনতে চাই না তোমার মুখ থেকে। তবে তোমার জন্য সব সময় খোলা রইল। আমার দরজা। তোমার প্রয়োজনে যখন খুশি তুমি আসতে পার এখানে।
ভায়োলা বলল, আপনি যে উদারতা দেখালেন তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনাকে। কিন্তু শুধু শুধু এখানে এসে আর কী হবে— বলে সে বিদায় চাইল লেডি অলিভিয়ার কাছে। তবে এত তাড়াতাড়ি তাকে বিদায় দিতে ইচ্ছে করছিল না লেডি অলিভিয়ার। তাকে আরও কিছুক্ষণ আটকে রাখার উদ্দেশ্যে তিনি জানতে চাইলেন তার বংশ-পরিচয়।
উজ্জ্বল আমার বংশের ইতিহাস। তাছাড়া আমি একজন ভদ্রলোক তো বটেই। উপহারস্বরূপ লেডি অলিভিয়া তাকে কিছু টাকা দিতে চাইলে সে অস্বীকার করল তা নিতে। সে বলল, আপনি শুধু আমার প্রভুর দিকে একটু কৃপাদৃষ্টি দিন, তাহলেই সন্তুষ্ট হব আমি–এই বলে লেডি অলিভিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এল সে। ভায়োলা বেরিয়ে যেতেই তার জন্য মন খারাপ হয়ে গেল লেডি অলিভিয়ার। তিনি তাকে আবার দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তিনি হাতের আঙুল থেকে একটি দামি আংটি খুলে নিয়ে ম্যালভোলিওকে দিয়ে বললেন, তুমি এখনই ছুটে গিয়ে ডিউক অর্সিনোর দূতকে ধর। তাকে বলবে ডিউক তার মাধ্যমে যে আংটিটা আমায় পাঠিয়েছেন সেটা আমি ফেরত পাঠালাম। সেই সাথে আরও বলবে কাল যদি তিনি সময় করে এখানে আসেন, তাহলে আমি তাকে বুঝিয়ে বলব কেন আমার পক্ষে ডিউককে বিয়ে করা সম্ভব নয়। তুমি আমার হয়ে তাকে অনুরোধ করবে। কাল যেন তিনি অবশ্যই এখানে আসেন।
লেডি অলিভিয়ার কাছ থেকে আংটিটা নিয়ে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এল ম্যালভোলিও। তাড়াতাড়ি হেঁটে কিছুদূর গিয়ে সে ধরে ফেলল ভায়োলাকে। মনিবানীর নির্দেশমতো তাকে সবকিছু বলে হিরের আংটিটাি গুজে দিল তার হাতে। সব কিছু শোনার পর অবাক হয়ে ভায়োলা বলল, কই! আমি তো কোনও আংটি নিয়ে আসিনি?
ম্যালভোলিও বলল, আমার কর্ত্রী তো আর মিছে কথা বলেননি। তিনি বলেছেন বলেই তো আমি এতদূর ছুটে এসেছি আপনার কাছে। কিন্তু ভায়োলা অস্বীকার করল সে আংটি নিতে।
তখন ম্যালভোলিও বলল, আপনি এটা ফেরত না নিলে রাস্তায় ফেলে যাব। ফল হবে। আজে-বাজে যে কেউ কুড়িয়ে নেবে–বলেই আংটিটি রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে গেল সে। অনন্যেপায় হয়ে আংটিটা তুলে নিতে হল ভায়েলাকে। লেডি অলিভিয়ার মতো ভায়োলাও এক যুবতি মেয়ে। তার বুঝতে বাকি রইল না। উনি তার প্রেমে পড়ে গেছেন। শেষমেশ ব্যাপারটা যে এরূপ দাঁড়াবে, তা সে কল্পনাও করতে পারেনি। তার ভয় হল এসব জানতে পেরে ডিউক যদি তাকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেন তাহলে কী হবে!
ভায়োলা না চাইলেও মনিবের আদেশে তাকে পুনরায় যেতে হল লেডি অলিভিয়ার প্রাসাদে। কিন্তু এবার ভেতরে যেতে সে কোনও বাধা পেল না। কারণ লেডি অলিভিয়া আগেই তার প্রাসাদের রক্ষী ও চাকর-বকিরদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন যে গতকাল যে সুন্দর যুবকটি ডিউকের দূত হয়ে এসেছিল, সে এলে যেন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তার কাছে।