ক্যাপ্টেনের কথায় সহমত হয়ে বললেন ডিউক, ঠিকই বলেছেন আপনি। নানারকম কাজের জন্য লোকের দরকার হয় আমার। এরপর ভায়োলার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বললেন ডিউক, কী নাম তোমার?
চটপট জবাব দিল ভায়োলা, আজ্ঞে হুজুর, সিজারিও।
ডিউক জানতে চাইলেন, তা তুমি মনোযোগ দিয়ে কাজ-কর্ম করবে তো?
ভায়োলা উত্তর দিল, ক্যাপ্টেনের সামনে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি হুজুর আমার কাজে কোনও ত্রুটি পাবেন না আপনি।
ডিউক হেসে বললেন, বেশ! আমি তোমাকে খাস সহচরের পদে বহাল করলাম। কাজটা খুব কঠিন নয়। সব সময় আমার আশে-পাশে থাকবে, ফাই-ফরমাশ খাটবে। আর কোনও কাজে পাঠালে ভালোভাবে সে কাজটা করে আসবে। কী! পারবে তো?
ভায়োলা বলল, আমায় একবার সুযোগ দিন আপনাকে সেবা করার! আশা করি সেজন্য হতাশ হতে হবে না। আপনাকে। আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম।
ডিউকের কাছে ভায়েলাকে কাজে লাগাতে পেরে স্বস্তি অনুভব করলেন ক্যাপ্টেন। ডিউকের কাছে বিদায় নিয়ে নিজের কাজে চলে গেলেন তিনি।
সিজারিওবেশী ভায়োলা আপ্ৰাণ চেষ্টা করছে ডিউককে খুশি করার। সব সময় সে ডিউকের আশে পাশে থাকে, একঘেয়েমি দূর করতে মাঝে মাঝে সে ডিউককে গান শোনায় আর ডিউকের মনখারাপ হলে সে মজার মজার কথা বলে তাকে আনন্দ দেবার চেষ্টা করে। এরই ফাকে ফাকে সেডিউকের কাছ থেকে শুনতে পায় লেডি অলিভিয়াকে তিনি কত ভালোবাসেন, হৃদয়ের গভীরে তিনি আরাধ্যদেবী রূপে বসিয়ে রেখেছেন তাকে। এত গভীরভাবে লেডি অলিভিয়াকে ভালোবাসা সত্ত্বেও তিনি যে ডিউককে মোটেও পাত্তা দেন না, এ কথা শুনে খুবই দুঃখ পায় ভায়োলা।
ডিউকের নিকটে থেকে কাজ করতে এক সময় তার প্রেমে পড়ে গেল ভায়োলা। কিন্তু তার ভালোবাসাকে সে লুকিয়ে রেখে দিল তার হৃদয়ের গভীরে, তার কোনও আঁচই পেলেন না ডিউক।
এর কয়েকদিন বাদে ডিউক একটা শিলমোহর করা খাম ভায়োলার হাতে দিয়ে বললেন, তুমি এখনই লেডি অলিভিয়ার কাছে গিয়ে এটা তাকে দেবে। আর বলবে আমি কত গভীরভাবে ভালোবাসি তাকে। তুমি তাকে এও বলবে তিনি আমার প্রতি নির্দয় হলেও আমৃত্যু আমি ভালোবেসে যাব তাকে। তোমার বয়স কম আর আমার চেয়েও দেখতে সুন্দর। তাই এ-কাজটা তোমাকে দিয়েই ভালোভাবে হবে।
এ কথা শুনে খুবই মন খারাপ হয়ে গেল ভায়োলার। ডিউককে ভালোবাসা সত্ত্বেও সে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না। তাকে। উপরন্তু ডিউকের চিঠি নিয়ে যার কাছে যেতে হবে তিনি মোটেও পাত্তা দেন না তাকে। শুধু চিঠি দেওয়াই নয়, তাকে নিজমুখে বলতে হবে ডিউক তাকে কত ভালোবাসেন, বিয়ে করতে চান তাকে।
লেডি অলিভিয়ার প্রাসাদের একতলায় থাকেন তার দূর সম্পর্কের খুল্লতাত স্যার টোরিব বেলচ্ আর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্যার অ্যান্ড্রু আগচিক। এরা উভয়েই পাঁড় মাতাল–এদের কেউ বিয়ে করেননি। স্যার টোবি মনে করেন অলিভিয়ার খুল্লতাত হবার দরুন এই প্রাসাদে থাকার অধিকার আছে তার। অবশ্য এ ব্যাপারে অন্য স্বার্থ রয়েছে। খুল্লতাত হবার দরুন তিনি মাঝে মাঝে নাক গলান ভাইঝির বিয়ের ব্যাপারে। কিন্তু অলিভিয়া সেটা মোটেও পছন্দ করেন না। স্যার টোবির ইচ্ছা যে ভাইঝি। বিয়ে করুক তার এক গ্রাসের ইয়ার স্যার অ্যাভু অগচিককে। বন্ধুর সাথে বিয়ে হলে তার কর্তৃত্বও বেড়ে যাবে, বন্ধুর মাধ্যমে ভাইঝির সম্পত্তির উপরও তার অধিকার বাড়বে–মনে মনে এসব স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু খুল্লতাতের মতলব যে সুবিধার নয়, সেটা ঠিকই আঁচ করেছেন অলিভিয়া। তাই তিনি দয়া করে তাকে আর বন্ধু স্যার অ্যাভু অগচিককে থাকতে দিয়েছেন প্রাসাদের একতলায় একটি ঘরে। তবে আগে থেকেই তিনি রক্ষীদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন তারা যেন একতলা ছেড়ে উপরে উঠতে না পারে। লেডি অলিভিয়া যেমন তাদের পাত্তা দেন না, তেমনি কেউ তার সাথে দেখা করতে এলে দু-বন্ধু তাকে ধমকে-ধামকে, এমন কি মার-ধর করে তাড়িয়ে দেয়। বাইরের কেউ যে অলিভিয়াকে বিয়ে করলে তাদের মৌরসীপাট্টা থাকবে না, এজন্য তারা কাজ করেন। লেডি অলিভিয়ার সাথে দেখা করার জন্য ডিউকের লোক যে প্রতিদিন প্রাসাদে আসে, সে কথাও জানে ওই দুই বদ্ধ মাতাল। তবে তারা এটা জেনে নিশ্চিত যে লেডি অলিভিয়া ডিউককে বিয়ে করতে রাজি নন।
সিজারিও-বেশী ভায়োলা এসে হাজির হল লেডি অলিভিয়ার প্রাসাদে। তাকে দেখেই এগিয়ে এল অলিভিয়ার চাকর ম্যালভোলিও ডিউক যে তার নিজস্ব লোক মারফত অলিভিয়াকে প্ৰেমপত্ৰ পাঠান সে কথা জানে সে। তাই ভায়েলাকে দেখেই ধমকে উঠল সে, যাও! যাও! এখন দেখা হবে না লেডি অলিভিয়ার সাথে।
তার এরূপ অভদ্র আচরণে ক্ষুন্ন হয়ে ভায়োলা জানতে চাইল, কোন দেখা হবে না তার সাথে?
ম্যালভোলিও জবাব দিলে, দেখা হবে না। কারণ তিনি অসুস্থ।
আরে! অসুস্থ বলেই তো তার সাথে করতে এসেছি–বলল ভায়োলা।
কী করে আর দেখা হবে! উনি তো এখন ঘুমোচ্ছেন–ম্যালভোলিও বলল।
একটুও দমে না গিয়ে ভায়োলা বলল, ঠিক আছে। আমি অপেক্ষা করছি যতক্ষণ না উনি ঘুম থেকে ওঠেন।
এবার রেগে গিয়ে বলল ম্যালভোলিও, এতো মহা ঝামেলার ব্যাপার হল দেখছি! যতই আমি বলছি উনি অসুস্থ, ততই আপনি জোর করছেন তার সাথে দেখা করার জন্য।
এ কথা শুনে ভায়োলাও একগুয়ের মতো বলল, ঠিক আছে, উনি সুস্থ হয়ে না ওঠা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করছি। বাধা পেয়ে তারও জেদ বেড়ে গেছে যে ভাবেই হোক সে দেখা করবে: লেডি অলিভিয়ার সাথে। কারণ ডিউক স্বয়ং তাকে পাঠিয়েছেন লেডি অলিভিয়ার সাথে দেখা করতে। তাছাড়া সে দেখতে চায় লেডি অলিভিয়ার মধ্যে এমন কী আছে যার দরুন ডিউক তাকে এত ভালোবাসেন।