বন্দি অবস্থায় রাজা সিমবেলিনের কাছে তার চাকর ফাইডেলের জন্য প্ৰাণভিক্ষা চাইলেন রোমান সেনাপতি কেইয়াস লুসিয়াস। সে সময় ফাইডেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজার মনে হল তার মেয়ে আইমোজেনের মুখের সাথে এর মুখের যথেষ্ট মিল রয়েছে। তার উপর রাজার মায়া পড়ে গেল। তিনি ফাইডেলকে মুক্তি দিয়ে জানতে চাইলেন যদি তার কোনও প্রার্থনা থাকে, তাহলে তিনি যথাসাধ্য ভাবে সেটা পূরণ করার চেষ্টা করবেন।
তিনি ফাইডেলকে বললেন, তোমার কোনও প্রার্থনা থাকলে নিঃসঙ্কোচে বলতে পার আমাকে। বন্দি সৈন্যদের মধ্যে ছিল আয়াকিমে ইশারায় তাকে দেখিয়ে ফাইডেল বললেন, মহারাজ! ওই রোমান যুবকটিকে আমি কিছু প্রশ্ন করত চাই। অনুগ্রহ করে আপনি ওকে আদেশ দিন পাসথুম্যাস সম্পর্কে ও যা যা জানে তা যেন আমাকে খুলে বলে। ও যদি বলতে অস্বীকার করে, তাহলে ওকে বাধ্য করুন। সত্যি কথা বলতে।
এবার আয়াকিমোর দিকে তাকিয়ে রাজা সিমবেলিন বললেন, শুনলে তো এর কথা!। যদি নিজের ভালো চাও। তবে এর সব প্রশ্নের উত্তর দাও। নইলে তোমার উপর অত্যাচার করতে বাধ্য হবে আমার সৈন্যরা।
রাজার কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল আয়াকিমো। সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে নিল। সে বলল কীভাবে আইমোজেনের বিশ্বাস অর্জন করে সে বাক্সের মধ্যে ঢুকে রাতের বেলা তার ঘরে গিয়ে হাত থেকে বালা জোড়া খুলে নিয়েছিল–সব স্বীকার করল সে।
চাষির ছদ্মবেশী পাসথুমাস সে সময় উপস্থিত ছিল সেখানে। আয়াকিমোর মুখে সব কথা শুনে সে দুঃখ আর বেদনায় এমনভাবে ভেঙে পড়ল যে নিজের পরিচয় আর গোপন রাখতে পারল না। স্ত্রী আইমোজেনের নাম ধরে সে হায় হায় করতে লাগল। সাথে সাথে নিজের ভাগ্যকে ধিক্কার দিতে লাগল সে। রাজা সিমবেলিন খুব খুশি হলেন যখন তিনি জানতে পারলেন চাষির ছদ্মবেশী এই বীর যোদ্ধাই পাসথুম্যাস। যুদ্ধে জয়লাভ করা আর নিজের মুক্তির জন্য এই যুবকের বীরত্বের কাছে তিনি ঋণী। একে পুরস্কৃত করতে হলে প্রয়োজন আইমোজেনকে এর হাতে তুলে দেওয়া! কিন্তু কোথায় তার মেয়ে আইমোজেন? ওদিকে চাষির ছদ্মবেশী এই বীর যুবকটিই যে তার স্বামী পাসথুমাস, সে কথা জেনে আনন্দে উৎফুল্প হয়ে উঠলেন আইমোজেন। সেইসাথে তার মনে পড়ল বনের মাঝে দেখা সেই মুণ্ডহীন মৃতদেহের কথা–যার পরনে ছিল স্বামী পাসথুম্যাসের পোশাক। সেসব কথা খুলে বলার পর আইমোজেন জানতে চাইল বনের ভিতর পাওয়া সেই মুণ্ডহীন দেহটি তবে কার?
এ কথার জবাব দিতে এগিয়ে এলাগিভেরিয়াস, বেলারিয়াসের পালিত পুত্র। সে বলল ক্লোটেন মারা যাবার পর সে তার মাথাটা কেটে নদীর জলে ফেলে দিয়েছে।
সে কথা শুনে রেগে গিয়ে সিমবেলিন জানতে চাইলেন রানির ছেলে ক্লোটেন! কে হত্যা করেছে তাকে?
বুক ফুলিয়ে গিভেরিয়াস উত্তর দিল, আমিই মেরেছি ক্লোটেনকে।
কী বললে! তুমি মেরেছি। ক্লোটেনকে? গিভেরিয়াসের কথা শুনে রেগে গিয়ে তার দিকে চোখ পাকিয়ে রাজা বললেন, এজন্য আমি তোমায় ক্ষমা করতে পারব না।
এবার এগিয়ে এসে বেলারিয়াস বললেন, কিন্তু মহারাজ যে আপনার সৎ ছেলেকে হত্যা করেছে সে যদি আপনার নিজের ছেলে হয় তাহলেও কি ক্ষমা করতে পারবেন না?
অবাক হয়ে রাজা বললেন, কী বলছেন আপনি? আমার নিজের ছেলে? এ কথার অর্থ কী? আর আপনিই বা কে?
যাওয়া দুই ছেলে গিভেরিয়াস অর আরভিরেগাস। এ সব কথা শুনে আনন্দে অধীর হয়ে গেলেন রাজা সিমবেলিন। তিনি বেলারিয়াসকে ক্ষমা করে দিয়ে তার বাজেয়াপ্ত করা সমস্ত সম্পত্তিফিরিয়ে দিলেন — আবার নতুন করে সেনাপতির পদে বহাল করলেন বেলারিয়াসকে। এবার পসথুম্যাসকে কাছে টেনে নিয়ে আইমোজেনের হাত তার হাতে দিয়ে বললেন, তিনি সানন্দে মেয়েকে তার হাতে তুলে দিচ্ছেন।
আইমোজেনের দিকে তাকিয়ে রাজা বললেন, ছোটোবেলায় হারিয়ে গিয়েছিল তোমার দুভাই। এতদিন বাদে ফিরে পেলাম তাদের। কাজেই তোমার আর রাজত্ব পাওয়া হল না।
হেসে আইমোজেন বলল, কােজ নেই আমার রাজত্ব পেয়ে। তার বদলে দু-ভাইয়ের যে স্নেহভালোবাসা পেয়েছি, সেটাই রাজত্ব পাওয়ার সমান। ফাইডেল সেজে যেদিন বনের গুহায় ওদের আশ্রয় পেয়েছিলাম, সেদিন থেকেই ওদের ভালোবাসা পেয়েছি।
সমস্ত আত্মীয়-পরিজনকে ফিরে পাবার আনন্দে রোমান বন্দিদের মুক্তি দিয়ে দিলেন রাজা সিমবেলিন; রোমান সেনাপতি কেইয়াস নিজে উদ্যোগী হয়ে রোম ও ব্রিটেনের মধ্যে সন্ধি স্থাপনের ব্যবস্থা করলেন। এ সময় রাজার কাছে খবর এল আকস্মিকভাবে মারা গেছেন রানি।