ক্লোটেন চিরকালই অভদ্র আর বদমেজাজি। তদুপরি রাজা-রানির ছেলে বলে সে কাউকে তোয়াক্কা করে না।
শিকারি দু-ভাইকে দেখে ধমকে উঠল ক্লেগটেন, অ্যাই, কে তোরা? তোদের নাম কী? বিনীতভাবে বলে উঠল গিভেরিয়াস, আমাদের নাম গিভেরিয়াস ও আরভিগোরাস। পুনরায় ধমকে উঠে ক্লেগটেন বলল, জনিস আমি রাজার ছেলে! তোদের এত সাহস মাথা হেঁট করে অভিবাদন না জানিয়ে তোরা আমার সাথে কথা বলছিস? তোরা তো দেখছি বেজায় অসভ্য আর জংলি।
ক্লোটেনের সাথে পালিত পুত্রদের কথা বলতে দেখে দূর থেকে কৌতূহলী হয়ে ছুটে এলেন বেলারিয়াস। আমি রাজার ছেলে কথাটা কানে যেতেই তিনি ধরে নিলেন তার এই বনে লুকিয়ে থাকার কথাটা জেনে গিয়েছিন রাজা সিমবেলিন। তাই তিনি সৈন্য-সামন্ত পাঠিয়েছেন তাকে ধরে নিয়ে যেতে। সশস্ত্ৰ বেলারিয়াস তরবারি হাতে ছুটে এলেন। সেখানে ক্লেগটেনের সাথে তার তুমুল লড়াই বেধে গেল। গিভেরিয়াস এবং আরভিরেগাসও এগিয়ে এলেন ক্লোটেনের সাথে লড়াই করতে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণের সাথে এঁটে উঠতে না পেরে মারা গেল ক্লোটেন। তার মাথাটা কেটে নিয়ে গিভেরিয়াস ছুড়ে ফেলে দিল নিকটবতী এক নদীর জলে।
এদিকে রানির দেওয়া বিয্যের ক্ষমতা কিন্তু ততক্ষণে কেটে গেছে। জ্ঞান ফিরে এসেছে আইমোজেনের। জ্ঞান ফিরে পেতেই সে বেরিয়ে এল গুহার বাইরে। সে দেখল রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিদিক আর তার মাঝে পড়ে রয়েছে একটা মুণ্ডহীন দেহ — যার পরনে তার স্বামী পাসথুম্যাসের পোশাক। পোশাক দেখেই আইমোজেন নিশ্চিন্ত হল ওই মৃতদেহটি তার স্বামী পাসথুম্যাসের। সে ধরে নিল পাসথুমাস নিশ্চয়ই তার সাথে দেখা করতে এসেছিল এবং এখানে এসে কোনও গুপ্ত শত্রুর হাতে নিহত হয়েছে সে। সেই মুণ্ডহীন মৃতদেহের উপর আছড়ে পড়ে স্বামীর নাম ধরে ডুকরিয়ে কাঁদতে লাগল আইমেজেন।
সেসময় ওই বনপথ দিয়ে গল থেকে ব্রিটেন আক্রমণ করতে আসছিলেন রোমান সেনাপতি কেইয়াস লুসিয়াস। কান্নার আওয়াজ লক্ষ করে তিনি এসে দাঁড়ালেন আইমোজেনের সামনে। দূর থেকে এদিকে এত সৈন্য দেখে বেজায় ঘাবড়ে গেলে বেলারিয়াস ও তার দুই পুত্র –কাদের সৈন্য তা বুঝতে না পেরে লুকিয়ে পড়লেন তারা। কান্নার আওয়াজ লক্ষ্য করে সেনাপতি লুসিয়াস এসে দেখলেন একটি মুণ্ডহীন দেহকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কান্না-কাটি করছে। একজন পুরুষ। তিনি পুরুষটির পরিচয় জানতে চাইলেন। সেই সাথে তিনি আরও জানতে চাইলেন ওই মৃতদেহটি কার। আর তাকে জড়িয়ে ধরে লোকটিই বা কাঁদছে কেন।
সেনাপতির প্রশ্নের জবাবে পুরুষবেশী আইমোজেন জানোল তার নাম ফাইডেল। মৃতদেহটি তার মনিবের। জঙ্গলের মাঝে একদল ডাকাত এসে হত্যা করেছে তাকে।
মৃত মনিবের শোকে ফাইডেলকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার প্রতি মুগ্ধ হলেন সেনাপতি লুসিয়াস। নিজের চাকর হিসেবে তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাইলেন। ফাইডেলের অনুরোধে ওই মৃতদেহটি জঙ্গলের মাঝে কবর দিল সেনাপতি লুসিয়াসের সৈন্যরা। সেনাপতির প্রস্তাবে রাজি হয়ে ফাইডেলবেশী আইমোজেনও গেল তার সাথে। আর না গিয়েই বা সে কী করবে একলা এই বনের ভিতর! স্বামীই যখন বেঁচে নেই তখন রোমে ফিরে গিয়ে লাভ কী!
এবার বীর্য-বিক্রমে রোমান বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ল ব্রিটেনের উপর। তুমুল লড়াই বেধে গোল দু-দেশের মধ্যে। রাজা সিমবেলিন চুপচাপ বসে রইলেন না। যুদ্ধের জন্য নিজের সৈন্যদের সাজালেন তিনি। অসৎ চরিত্র আর শয়তান প্রকৃতির লোক হলেও যুদ্ধবিদ্যাটা কিন্তু ভালোভাবেই রপ্ত করেছিল রানির ছেলে ক্লোটেন। তার উপর যথেষ্ট ভরসা ছিল রাজা সিমবেলিনের। কিন্তু এই দুর্যোগের সময়ে সে যে কোথায় উধ, ও হয়ে গেল তা ভেবে পেলেন না তিনি।
এবার ক্লোটেনের অভাব পূরণ করতে এগিয়ে এল বেলারিয়াসের দুই পালিত পুত্র গিভেরিয়াস আর আরভিরেগাস। তারা যে রাজা সিমবেলিনের পুত্র এ কথা না জেনেও তারা সাধারণ সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিল রাজার সৈন্যদলোঁ — বোলারিয়াসের নির্দেশেই তারা সেটা করেছিল। বেলারিয়াস তাদের বুঝিয়েছিলেন শত্রু যখন দেশ আক্রমণ করেছে তখন সবার উচিত ব্যক্তিগত স্বার্থকে মনে ঠাই না দিয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যুদ্ধে যোগ দেওয়া।
ওদিকে কেউ জানে না ব্রিটেনের সাথে লড়াই করতে সেনাপতি লুসিয়াসের সৈন্যদলের সাথে এসেছে পাসথুমাস আর আয়াকিমো ইতিমধ্যে যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটেছে পাসথুমাস মনে। পিসানিও যে তার নির্দেশে আইমোজেনকে হত্যা করেছে সে খবর পৌঁছেছে তার কানে। সেই থেকে প্ৰচণ্ড অনুতাপের জ্বালায় জুলছে সে। এ কাজ করে সে যে ঘোরতর অন্যায় করেছে তা এখন মৰ্মে মৰ্মে অনুভব করছে সে। সে সিদ্ধান্ত নিল ব্রিটেনের হয়ে রোমান সৈন্যদের সাথে লড়াই করে সে প্রাণ দেবে। তাই একদিন রাতে সবার অলক্ষ্যে গরিব চাষির সাজে ব্রিটিশ সৈন্যশিবিরে গিয়ে যোগ দিল সে।
দু-পক্ষে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হল পরদিন সকালে। লড়াই শুরু হওয়ার খানিকক্ষণ বাদেই রাজা সিমবেলিন বন্দি হলেন রোমানদের হাতে। এর কিছুক্ষণ বাদেই গিভেরিয়াস, আরভিরেগাস এবং চাষিবেশী পাসথুমাস এবং বেলারিয়াস–এই চারজন প্রচণ্ড লড়াই করে শত্রুসৈন্যের হাত থেকে মুক্ত করলেন রাজাকে। শেষ পর্যন্ত এই চারজনের জন্যই যুদ্ধের চাকা ঘুরে গেল, হেরে গোল রোমান সৈন্যরা। বন্দি হল তাদের সেনাপতি কেইয়াস লুসিয়াস। সেই সাথে বন্দি হল তার চাকর ফাইডেল এবং আয়াকিমো।