পিসানিওর পরামর্শ মনে ধরল আইমোজেনের। কিন্তু সাত তাড়াতাড়ি সে কোথায় পাবে। পুরুষের পোশাক? এ সমস্যা দেখা দেবে তা আগেই জানে পিসানিও। তাই আগে থেকেই একপ্রস্থ পুরুষের পোশাক জোগাড় করে এনেছে সে। জঙ্গলের ভেতর মশালের আলোয় সে পুরুষের বেশে সাজিয়ে দিল আইমোজেনকে। এবার সে বন্দরে গিয়ে জাহাজে চেপে পাড়ি দেবে রোমে। আর পিসানিও ফিরে যাবে তার প্রভুর প্রাসাদে।
পুরুষবেশী আইমোজেনের হাতে এবার একটা ওষুধের পুরিয়া তুলে দিল পিসানিও। ওই ওষুধটা রাজার প্রধান চিকিৎসক কর্নেলিয়াসের কাছ থেকে সংগ্রহ করে রানি সেটা পিসানিওকে দিয়ে বলেছিলেন, আই,মোজেনের কোনও অসুখ হলে এটা খাইয়ে দিও তাকে। নিমেষেই অসুখ সেরে যাবে।
পিসানিও অবশ্য রানির কথায় বিশ্বাস করে ওষুধটা নিয়েছিল, কিন্তু সেটা যে বিষ তা জানত না সে। রানির ধারণা ছিল আইমোজেনের কোনও অসুখ হলে ওই ওষুধের পুরিয়াটা তাকে খাইয়ে দেবে পিসানিও। তার ফলস্বরূপ আইমোজেন মারা যাবে আর তার ছেলে ক্লোটেনেরও সিংহাসনে বসার পথ নিষ্কণ্টক হবে। কিন্তু রানি জানতেন না। ওই পুরিয়ার ওষুধটা বিষ হলেও তা খুব কমজোরি। ওষুধটা রানিকে দেবার সময় চিকিৎসক কর্নেলিয়াস তাকে বলে দেননি যে ওই ওষুধ খেলে দেহে মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দেবে, তবে কিছুক্ষণ বাদে ওই লক্ষণ মিলিয়ে গিয়ে রোগী পুনরায় সুস্থ হয়ে উঠবে। ইচ্ছে করেই ওষুধের এ গুণের ব্যাপারটা রানিকে বলেননি চিকিৎসক কর্নেলিয়াস।
বিদায় নিয়ে পিসানিও চলে গেলে বন্দরের দিকে রওনা দিল আইমোজেন। কিন্তু যেতে যেতে পথ হারিয়ে ফেলল সে। ঘুরতে ঘুরতে হাজির হল এক গভীর জঙ্গলে। প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আসার সময় সে সামান্য খাবার সাথে নিয়ে এসেছিল, তা আগেই খাওয়া হয়ে গেছে। তারপর থেকে আর পেটে দানা-পানি পড়েনি। খাবার না পেলে এখন একপাও চলার সামর্থ্য নেই তার। এমন সময় তার চোেখ পড়ল পাহাড়ের গায়ে এক গুহার উপর। কৌতূহলের বশে এগিয়ে গেল সে। গুহার ভিতরে গিয়ে দেখল মানুষ থাকার চিহ্ন থাকলেও ভেতরে কেউ নেই। তবে সেখানে প্রচুর খাবার-দাবার মজুত রয়েছে। ক্ষুধায় এত কাতর হয়ে পড়েছিল আইমোজেন যে গুহার বাসিন্দারা ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে পারল না সে। হাতের কাছে যা পেল। তাই খেয়ে নিল। তার কিছুক্ষণ বাদেই ফিরে এল গুহার বাসিন্দারা — একজন বুড়ো মানুষ আর দুজন কমবয়সি যুবক। তাদের কাছে গিয়ে আইমোজেন নিজের নাম বলল ফাইডেল। বিনা অনুমতিতে তাদের খাবার খেয়ে নেবার জন্য মাফ চাইল আইমোজেন, মিটিয়ে দিতে চাইল খাবারের দাম। তার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল বুড়ো আর সেই দুই যুবক। তারা জঙ্গলে গিয়ে ইচ্ছেমতো হরিণ আর অন্যান্য জানোয়ার শিকার করে আনে, দাম নিয়ে মাংস কেনার প্রয়োজন হয় না। ইচ্ছে করলে ফাইডেল আরও খাবার খেতে পারে, বরঞ্চ তাতে খুশিই হবে তারা। পুরুষের ছদ্মবেশী অল্পবয়স্ক আইমোজেনের কথা-বার্তা আর আচার-আচরণ তাদের ভালো লেগে গেল। তাদের মনে হল ও যেন খুবই মেহের পাত্র।
ওই দুই যুবক আসলে রাজা সিমবেলিনের দুই হারানো ছেলে গিভেরিয়াস আর আরভিরেগাস সম্পর্কে ওরা আইমোজেনের দুই সহোদর ভাই। আর বুড়ো মানুষটি হলেন রাজা সিমবেলিনের প্রাক্তন সেনাপতি বীর বেলারিয়াস। মগন নামে তিনি বহুদিন ধরে এই জঙ্গলের গুহায় বাস করছেন। বনের জন্তু-জানোয়ার শিকার করে তাদের মাংস আগুনে সেঁকে তিনি নিজে খান এবং ছেলে দুটিকে খাওয়ান।
এদিকে আইমোজেন অসুস্থ বোধ করছে শুনে তাকে বিশ্রাম করতে বলে শিকারে বেরিয়ে গেল। গুহাবাসীরা। সেসময় হঠাৎ মনে পড়ল তার কাছে তো ওষুধ রয়েছে। ওষুধটা দেবার সময় পিসানিও বলেছিল অসুস্থ বোধ করলে সে যেন ওষুধটা খেয়ে নেয়। তাহলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সে ভালো হয়ে যাবে। সে কথা মনে পড়ায় সাত-পাঁচ না ভেবেই ওষুধটা মুখে পুরে দিল আইমেজেন। কিছুক্ষণ বাদেই মৃত্যুর লক্ষণ ফুটে উঠল তার দেহে। শিকার থেকে ফিরে এসে গিভেরিয়াস আর আরভিগেরাস দেখল প্ৰাণের চিহ্নমাত্র নেই ফাইডেল-বেশী আইমোজেনের দেহে। অতি প্রিয়জনের মৃত্যুতে মানুষ যেভাবে দুঃখ পায় সেভাবে কাঁদতে লাগল তারা।
এদিকে আইমোজেনের পালিয়ে যাবার খবর শুনে রেগে জ্বলে উঠল রানির প্রথম পক্ষের ছেলে ক্লোটেন। তাকে খুঁজতে খুঁজতে পাসথুম্যাসের প্রাসাদে এল সে। প্রাসাদে পিসানিও দেখেই সে বলল, কোথায় আইমোজেন?
পিসানিও ধরে নিল এতক্ষণে নিশ্চয়ই আইমোজেন জাহাজে পৌঁছেছে, তাই চিন্তা-ভাবনা না করেই সে বলে দিল, মিলফোর্ডের জঙ্গলে গেছেন। আইমেজেন।
ক্লোটেন জানতে চাইল, কেন? সেখানে কী আছে?
পিসানিও জবাব দিল, তিনি সেখানে স্বামীর সাথে দেখা করতে গেছেন।
ক্লোটেন বললেন, তুমি পাসথুম্যাসের একটা পোশাক আমায় এনে দাও। ওই পোশাক পরে আমি নিজে যাব মিলফোর্ডের বনে। দূর থেকে আমায় ওই পোশাকে দেখলে নিজে থেকেই হাজির হবে আইমোজেন।
কোনও প্রতিবাদ না করে পিসানিও তার মনিবের একটা পোশাক এনে দিল ক্লোটেনকে। সে তখনই ওই পোশাক গায়ে চাপিয়ে রওনা দিল মিলফোর্ডের জঙ্গলের দিকে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে আইমোজেন আর পসৰ্থমাস–কাউকে দেখতে পেল না ক্লোটেন। এদিকে বেলরিয়াসের দুই পালিত পুত্র গিভেরিয়াস অরা আরভিরেগাস তখন বনে শিকার করতে বেরিয়েছে। এই নির্জন বনে একজন অচেনা মানুষকে দেখে কৌতূহলবশত এগিয়ে এল। তারা।