রাজার এই অমানবিক আচরণ বাধ্য হয়ে সহ্য করতে হল আইমোজেনকে, কারণ কোনও কিছু করার উপায় ছিল না তার। এই পরিবেশে ভালো মানুষ সাজতে চাইলেন রানি। আইমোজেনের জন্য যেন দুঃখে তার প্রাণ কেঁদে উঠছে এই ভাব দেখিয়ে তিনি আইমোজেনের সাথে পাসথুম্যাসের গোপনে দেখা করার ব্যবস্থা করলেন।
বিদায় দেবার সময় আইমোজেন তার হাতের আঙুল থেকে একটি আংটি খুলে নিয়ে পরিয়ে দিলেন পাসথুম্যাসের আঙুলে। এবার পসৰ্থমাস একজোড়া বালা তার স্ত্রীর হাতে পরিয়ে দিয়ে বললেন, পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন, আমি কখনও ভুলতে পারব না তোমায়। এই বালা জোড়া আমার মায়ের স্মৃতি। একে সযত্নে রাখবে। এই বলে পাসথুমাস বিদায় নিলেন আইমোজেনের কাছ থেকে। নির্বাসন দণ্ড মাথায় নিয়ে রোমের পথে রওনা হলেন পাসথুম্যাস। আর বাবার প্রাসাদেই রয়ে গেল আহমোজেন।
ব্রিটেন ছেড়ে চলে গেল পাসথুমাস। সে চলে যাবার পর রাজা-রানি ক্লোটেনকে ডেকে বললেন সে যেন ধৈর্য ধরে আইমোজেনের সাথে মেলামেশা করে। তাকে আরও বোঝালেন এইভাবে মেলামেশা করলে তবেই সে আইমোজেনের মন জয় করতে পারবে কারণ পাসথুম্যাসের সাথে আর তার দেখা হবে না। তার অনুপস্থিতিতে ক্লোটেনকেই ভালোবাসতে শুরু করবে। আইমোজেন, আর একদিন তাকে বিয়ে করতেও রাজি হবে। এসব যুক্তি মনে ধরল ক্লোটেনের। সে এই আশায় ধৈর্য ধরে থাকতে রাজি হল যে শেষমেশ আইমোজেনের মতের পরিবর্তন হবে।
রোমে আসার পর পাসথুমাস আশ্রয় নিল তার বাবার এক পুরোনো বন্ধুর কাছে। তিনি তাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন রোমের অভিজাত আর সম্রােন্ত বংশীয় যুবকদের সাথে।
যা সচরাচর হয়ে থাকে সেই নিয়ম মেনেই তরুণ যুবকেরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করত নারীর প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে। একদিন আয়াকিমো নামে এক যুবক বলল পৃথিবীর যে কোনও মেয়ের সাথেই সে প্ৰেম-ভালোবাসা চালিয়ে যেতে পারে। সে কথা শুনে পাসথুমাস প্রতিবাদ করে বলল আহমোজেন এর ব্যতিক্রম। স্বামী ছাড়া আর কারও সাথেই প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলবে না সে। সে কথা শুনে বাজি ধরে আয়াকিমো বলল সে ব্রিটেনে গিয়ে আইমোজেনের সাথে প্রেম-ভালোবাসা করবে। আর তার প্রমাণ এনে দেখাবেন পাসথুম্যাসকে। সে যদি প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলেই বাজি জিতবে, নইলে নয়। আইমোজেনের উপর অগাধ বিশ্বাসের দরুন পাসথুমাস হেসেই উড়িয়ে দিল আয়াকিমোর কথা। সাথে সাথে সে রাজি হয়ে গেল বাজি ধরতে।
এর কিছুদিন বাদে সত্যি সত্যি আয়াকিমো এসে দেখা করল ব্রিটেনের রাজা সিমবেলিনের সাথে। যদিও অনেকদিন ধরে রোমকে রাজকর দেওয়া বন্ধ করেছেন সিমবেলিন, তবুও রোমের সম্মানের কথা মনে রেখে তিনি তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন রাজসভায়। পাসথুম্যাসের স্ত্রী আইমোজেনের সাথে তার আলাপ-পরিচয় হল।
আয়াকিমো তার স্বামীর বন্ধু শুনে আইমোজেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার স্বামীর খোঁজ-খবর নিলেন।
সামান্য আলাপচারিতার পর আয়াকিমে বুঝতে পারলেন পুরুষের মিষ্টি কথায় ভুলে গিয়ে যে ধরনের মেয়েরা সহজেই পুরুষের প্রেমে পড়ে, মোটেও সে ধরনের মেয়ে নয়। আইমেজেন। কিন্তু সে যদি আইমোজেনের সাথে তার প্রেমের প্রমাণস্বরূপ কোনও কিছু না নিয়ে যায়, তাহলে বাজিতে সে তো প্রচুর টাকা হার বেই, সেই সাথে সবার উপহাসের পাত্র হবে। অনেক ভেবে-চিন্তে সে ঠিক করল আইমোজেনের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে সে তাকে ঠকাবে। রোমে ফিরে যাবার আগের দিন আইমোজেনের সাথে দেখা করে আয়াকিমো বলল দেশে ফিরে গিয়ে সম্রাটকে উপহার দেবার জন্য সে কিছু দামি হিরে রত্ন কিনেছে, কিন্তু চুরি যাবার ভয়ে সেগুলি সরাইখানায় নিজের কাছে রাখতে সাহস পাচ্ছে না। অনুগ্রহ করে আইমোজেন যদি মণি-মুক্তো বোঝাই সেই বাক্সটা এবং রাতের জন্য তার কাছে রেখে দেয়, তাহলে খুবই ভালো হয়। পরদিন সকালে সে অবশ্যই বাক্সটা নিয়ে যাবে। স্বামীর বন্ধুর এই অনুরোধ অগ্রাহ্য করতে পারল না। সে রাজি হল এক রাতের জন্য বাক্সটা নিজের কাছে রাখতে। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে খুশি মনে হাসতে হাসতে সরাইখানায় ফিরে গেল আয়াকিমো।
কিছুক্ষণ বাদে আইমোজেনের শোবার ঘরে একটা বড়োসড়ো বাক্স এনে হাজির করল সরাইখানার লোকেরা। তারা আইমোজেনের নির্দেশ অনুযায়ী বাক্সটা ঘরের এককোণে নামিয়ে রেখে তার কাছ থেকে বিকশিশ নিয়ে বিদায় নিল।
ধীরে ধীরে রাত গভীর হল। গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল আইমেজেন। ঠিক সে সময় বাক্সের ঢাকনা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল আয়াকিমো। শোবার ঘরের চারপাশটা ভালো করে দেখে নিল সে। জানালার পর্দার রং, দেওয়ালের রং, ঘরে কী কী আসবাবপত্র রয়েছে, সে সব খুটিয়ে দেখে নিল আয়াকিমো। তারপর আস্তে আস্তে আইমোজেনের হাত থেকে খুলে নিল পাসথুম্যাসের দেওয়া বালা দুটো। তারপর বাক্সের ভিতর ঢুকে আয়াকিমো ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল বাক্সের ঢাকনা।
আগে থেকেই প্রচুর বকশিশ দিয়ে সরাইখানার লোকদের ঠিক করে রেখেছিল আয়াকিমো! পরদিন সকালে তার নির্দেশমতো আবার এসে হাজির হল সরাইখানার লোকেরা। আইমোজেনোর শোবার ঘরে ঢুকে সেই বাক্সটা তারা কাধে তুলে নিয়ে চলে গেল সরাইখানায়। কিছুক্ষণ বাদে আইমোজেনের বাড়িতে এসে তাকে ধন্যবাদ জানাল আয়াকিমো।
যথাসময়ে রোমে পৌঁছে গেল আয়াকিমো! ঘুমন্ত আইমোজেনের হাত থেকে খুলে আনা বালা দুটো পসথুম্যাসকে দেখোল সে। মিথ্যে করে সে সবার সামনে বলল যে সে আইমোজেনের পাশে শুয়ে সারারাত কাটিয়েছে। পাসথুম্যাসের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সে তাকে আইমোজেনের শোবার ঘরের খুঁটি-নাটি বর্ণনা দিল। তার কথা শুনে বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেল পাসথুমাস, তার মাথায় (,, জি পড়ল। সে ভেবে পেল না। কী করে আইমোজেন তার মায়ের হাতের বালাজোড়া যা কিনা সে নিজে পরিয়ে দিয়েছিল তার হাতে, খুলে আয়াকিমোকে দিতে পারে! পাসথুম্যাসের মনে আর কোনও সন্দেহ রইল না যে তার স্ত্রী অসতী, কুলটা। সে ভাবতে লাগল। কী করে আইমোজেনকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যায়।